বুদ্ধি হল কতকগুলি সহজাত ক্ষমতার সমষ্টি যা ব্যক্তিকে নিত্যনতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে। যার বুদ্ধি বেশি এবং যার বুদ্ধি কম তাদের দেখলেই বাঝা যায়। বুদ্ধি বেশি মানুষের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের গঠন এমন হয় যার ফলে তারা যে-কোনাে উদ্দীপকের সামনে এলেই মুহূর্তের মধ্যে সাড়া দিতে পারে।

বিভিন্ন মনােবিদ বিভিন্নভাবে বুদ্ধির সংজ্ঞা নিরূপণ করেছেন। বুদ্ধির সংজ্ঞাগুলিকে মূলত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। সংজ্ঞাগুলি নীচে আলােচনা করা হল—

(1) বুদ্ধির জৈবিক সংজ্ঞা 

মনােবিজ্ঞানী স্টার্ন (Stern)-এর মতে, বুদ্ধি হল জীবনের নতুন সমস্যাবলি এবং পরিস্থিতিসমূহের সঙ্গে অভিযােজন করার ক্ষমতা।

মনােবিদ প্যাটারসন (Paterson) বলেছেন, যে জৈবিক কৌশলের সহায়তায় কোনাে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে একক প্রতিক্রিয়া করা যায় তাই হল বুদ্ধি।

(2) বুদ্ধির শিক্ষামূলক সংজ্ঞা

মনােবিদ বাকিংহাম (Buckingham) এর মতে, শিখনের সামর্থ্য হল বুদ্ধি।

মনােবিজ্ঞানী ডিয়ারবর্ন (Dearborn) বলেছেন, শিখনের ক্ষমতা অথবা অভিজ্ঞতা দ্বারা উপকৃত হওয়ার ক্ষমতা হল বুদ্ধি।

(3) বুদ্ধির পরীক্ষানির্ভর ক্ষমতা বিষয়ক সংজ্ঞা

মনােবিজ্ঞানী পিরাে (Pieron)-এর মতে, মানসিক কৌশলে বুদ্ধির অস্তিত্ব নেই, এটি হল কেবলমাত্র একটি পরিণতি। নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে আচরণের মূল্যমান নির্ণয়করণই হল বুদ্ধি।

থর্নডাইক (Thorndjke) বলেছেন, বুদ্ধি হল অনুষঙ্গা বা বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আদর্শ প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা।

(4) বুদ্ধির মানসিক ক্ষমতা সংক্রান্ত সংজ্ঞা

টারম্যান (Terman) বলেছেন, বুদ্ধি হল বিমূর্ত চিন্তনের ক্ষমতা। ক্যাটেল (Cattle)-এর মতে, বুদ্ধি হল একটি সর্বজনীন ক্ষমতা যা অন্যান্য গৌণ ক্ষমতাকে অর্জন করতে সাহায্য করে।

(1) রাজতন্ত্রবাদ

সমর্থক: স্টার্ন, কর্ট, ব্যালাড।

মূল বক্তব্য : বুদ্ধি হল মনের একটি কেন্দ্রীয় শক্তি যার পরিচালনায় মনের অন্যান্য শক্তি বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে বলা হয় মনের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি সাধারণ শক্তি যা সব কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা সমস্ত মানুষের মধ্যে সমানভাবে বন্টিত হয় না। কারও ক্ষেত্রে এই শক্তি বেশি, আবার কারাের ক্ষেত্রে কম থাকে। এই মতবাদ অনুযায়ী কোনাে ব্যক্তি তার জীবনে কোনাে বিশেষ ক্ষেত্রে যে বুদ্ধির পরিচয়  দিয়েছেন তিনি অন্য যে-কোনাে ক্ষেত্রেই এইরকম একই যােগ্যতার প্রমাণ দেবন।

(২) সামন্ততন্তবাদ

সমর্থক : উডওয়ার্থ, টারম্যান।

মূল বস্তুব্য : কতকগুলি বিশেষ মানসিক শক্তির সমন্বয়ে বুদ্ধি সৃষ্টি হয় এবং তার দ্বারাই মানসিক প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয়।

এই মতবাদে বিশ্বাসী মনােবিদগণের মতে, একক সামর্থ্য হয় না, কতকগুলি বিশেষ সামর্থ্য মিলে মানসিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইসব ক্ষমতাগুলির সমবায়কে আমরা বুদ্ধি বলি। মানুষের মনে কতকগুলি প্রাথমিক ক্ষমতা আছে যা বিভিন্ন বৌদ্ধিক কাজ করে থাকে।

(2) অরাজকতাবাদ

সমর্থক : থর্নডাইক ও অন্যান্য মনােবিদ।

মূল বক্তব্য : বুদ্ধির মূলে থাকে কতকগুলি পরস্পর সম্পর্কবিহীন মানসিক শক্তি। এর ফলে কোনাে ব্যক্তি এক বিষয়ে যে বুদ্ধির পরিচয় দেয়, অপর বিষয়ে সে বুদ্ধির পরিচয় নাও দিতে পারে। এক্ষেত্রে মনােবিদগণ একক মানসিক সামর্থ্য এবং সম্মিলিত সামর্থ্য কোনােটিকেই সমর্থন করেননি। তাদের মতে, মনের মধ্যে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য মানসিক ক্ষমতার উপাদান আছে, যা নিরপেক্ষ এবং স্বাধীনভাবে কাজ করে।

Rate this post