প্রশ্নঃ খতিয়ান বা ‘রেকর্ড অব রাইটস’ কাকে বলে? খতিয়ানের বা ‘রেকর্ড অব রাইটস’ এর সাক্ষ্যগত মূল্য কি? কখন এবং কোন অবস্থায় খতিয়ান বা ‘রেকর্ড অব রাইটস’ পরিমার্জন করা হয়?

ভূমিকাঃ খতিয়ানের মাধ্যমে জমির বিভিন্ন অধিকার নির্ণয় করা হয়। একটি জমির মালিকানা থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য এই খতিয়ানের মাধ্যমে পাওয়া যায়। যারফলে এটি সংরক্ষণ করা অতি জরুরি।

খতিয়ান বা ‘রেকর্ড অব রাইটস’ (Record of Rights) কাকে বলেঃ বিক্রয়, বিনিময়, দান, এওয়াজ বদল ইত্যাদি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভূমির মালিকানা পরিবর্তন হয়।

জনগণের নিকট থেকে ভূমি রাজস্ব আদায়ের জন্য সরকারি জরিপ বিভাগ সকল মৌজার জমির মালিকের নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, ভূমির অংশ, জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর ইত্যাদি বিবরণসহ ক্রমিক নয় অনুসারে যে স্বত্বের রেকর্ড তৈরি করে তার প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলে। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ জমি বা আংশিক জমি নিয়ে কোন ব্যক্তির নামে সরকার অথবা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যে ভূমিস্বত্ব প্রস্তুত করে তাকে খতিয়ান বলে। পরিশেষে বলা যায়, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন ব্যক্তির অধিকার যার মাধ্যমে নির্ণয় হয় তা-ই হলো খতিয়ান।

খতিয়ানের বা ‘রেকর্ড অব রাইটস’ এর সাক্ষ্যগত মূল্যঃ নিম্নে খতিয়ানের সাক্ষ্যগত মূল্য উল্লেখ করা হলো-

(i) রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৪ ধারা অনুযায়ী- খতিয়ানের লিখিত বিষয়সমূহ আইনত শুদ্ধ বলে গণ্য হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা অশুদ্ধ বলে প্রমাণিত না হয়। তবে এই অনুমান একটি খণ্ডনীয় অনুমান।

(ii) ডানকান বনাম রাধা মামলায় বলা হয়- খতিয়ানকে মালিকানার প্রশ্নে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় না কিন্তু মালিকানা যদি দখলের ভিত্তিতে অর্জিত হয় তাহলে ব্যবহার করা যায়।

(iii) কেশব বনাম মদন মামলায় বলা হয়- কোন খতিয়ান দখলের ভিত্তিতে সরেজমিনে প্রস্তুত করা হলে তা শুদ্ধ বলে অনুমিত হবে এবং সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে।

সুতরাং সাক্ষ্য হিসেবে খতিয়ানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

কখন এবং কোন অবস্থায় খতিয়ান বা ‘রেকর্ড অব রাইটস’ পরিমার্জন করা হয়ঃ যে অবস্থায় খতিয়ান পরিমার্জন করা হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

কোন জেলা, জেলার অংশ, স্থানীয় এলাকার খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধন করার জন্য সরকার রাজস্ব কর্মকর্তাকে আদেশ দিতে পারেন।

(i) কমপক্ষে অর্ধেক রায়ত খতিয়ান পরিমার্জনের জন্য আবেদন করলে।

(ii) রায়তগণের মধ্যে বিদ্যমান কোন বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য।

(iii) রায়তগণের মধ্যে ভবিষ্যতে বিবাদ হতে পারে এই আশংকা নিরোধের জন্য। 

(iv) কোন জেলা বা জেলার অংশ বা স্থানীয় এলাকার খাজনা স্থির করার সময়।

উপসংহারঃ ভূমি আইনে খতিয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মধ্যে কোন ভূমির মালিকের নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, ভূমির অংশ, জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। খতিয়ান চূড়ান্ত সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়।

Rate this post