অথবা, সাংস্কৃতিক ব্যবধান কী?
ভূমিকাঃ সংস্কৃতি সভ্যতার বাহন। সমাজজীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলে সংস্কৃতি মানবজীবনের ভিত্তি রচনা করে। আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সভ্যতার উৎপত্তি, বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে সংস্কৃতির অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত জীবন প্রণালী সংস্কৃতির গতিকে সচল রেখেছে। সংস্কৃতির পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে সভ্যতা বিকাশ লাভ করে।
সাংস্কৃতিক ব্যবধানঃ মানুষের জীবনধারণের পদ্ধতিই হলাে সংস্কৃতি। বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে মানুষ জন্ম লাভের পর তাকে বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রতিকূল অবস্থা এবং নানাবিধ চ্যালেঞ্জ বা বাধা বিপত্তির মুখােমুখী হতে হয়েছে। এসব পরিস্থিতি মােকাবিলা করতে গিয়ে মানুষ অনেক কিছু চিন্তাভাবনা করেছে এবং অনেক কিছু উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু সমাজভেদে এ উন্নয়ণ ধারার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আমরা যেকোনাে সমাজের দিকে তাকালে দেখতে পাই যে, প্রতিটি সমাজে বসবাসকারী মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য গ্রহণ রীতি, আচার অনুষ্ঠান, চিন্তাধারা পােশাক পরিচ্ছদ ও মূল্যবােধ, জীবন দর্শন ও উৎপাদন রীতিতে সাদৃশ্য রয়েছে। আবার একটি নির্দিষ্ট সমাজের মানুষের আহার বিহার, চিন্তাধারা ও আচার অনুষ্ঠানের সাথে অন্য সমাজের পার্থক্য রয়েছে। এ অবস্থায় সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমাজের সব অংশে সমানভাবে এর প্রভাব পড়ে না। কোনাে অংশ সংস্কৃতির বিকাশের ধারার সাথে এগিয়ে যায় কোনােটি পিছিয়ে পড়ে। সংস্কৃতির এ অসম অগ্রগতির ফলে একটা ব্যবধান সৃষ্টি হয়।
সাংস্কৃতিক ব্যবধানের সংজ্ঞাঃ সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, মানুষের বস্তুগত সংস্কৃতি যে গতি হারে বৃদ্ধি পায় বা এগিয়ে চলে অবস্তুগত সংস্কৃতি সে তুলনায় অনেক ধীরে এগুতে থাকে। ফলে উভয় ধরনের মধ্যে যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়, তাকে সাংস্কৃতিক ব্যবধান বলে ।অগবার্ন ও নিমকফ তাদের A Hand Book of Sociology নামক গ্রন্থে সাংস্কৃতিক ব্যবধান-এর সংজ্ঞা দেন এভাবে- “কোনাে সংস্কৃতির মধ্যে অসমগতিতে চলমান দু’টি অংশের মধ্যে বিদ্যমান চাপ হলাে সাংস্কৃতিক ব্যবধান”।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশে বস্তুজগতের উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে মনােজগতের উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না। একটি সুস্থ, সাবলিল ও গতিশীল সমাজের জন্য সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ ও উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ . বজায় থাকা বাঞ্ছনীয়। আর যদি এই ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ রক্ষিত না হয়, তাহলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হবে।