বাংলা রচনা : বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব

বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব
অথবা, বাংলাদেশের উৎসব।
অথবা, গ্রাম বাংলার উৎসব।

[ সংকেত: ভূমিকা; উৎসব; উৎসবের ধরন; ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উৎসব; সামাজিক উৎসব; ধর্মীয় উৎসব; সাংস্কৃতিক উৎসব; জাতীয় উৎসব; অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট উৎসব; স্মরণােৎসব; উৎসবের অসাম্প্রদায়িক চেতনা; ব্যক্তিজীবনে উৎসবের প্রভাব; জাতীয় জীবনে উৎসবের প্রভাব; উপসংহার। ]

ভূমিকা : উৎসব মানুষের প্রাণের স্পন্দন । সমাজবদ্ধ জীব মানুষের চলমান জীবনে বৈচিত্র্য এনে দেয় উৎসব । বহুকাল আগে থেকেই আমাদের সমাজে নানা উপলক্ষ্যে উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উৎসব আনন্দ-বিনােদনের মাধ্যম। এটি মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে । তাই আমাদের সামাজিক জীবনে বিভিন্ন উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম ।

উৎসব : সাধারণভাবে উৎসব’ কথাটির অর্থ হলাে আনন্দ বা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। এটি হলাে মানুষের আনন্দ প্রকাশ ও লাভের মাধ্যম । মূলত উৎসব বলতে এমন অনুষ্ঠানকে বােঝায়, যা অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়।

উৎসবের ধরন : বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। এসব উৎসব বাঙালি জাতির চেতনায় মিশে আছে। এসব উৎসবকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন- ব্যক্তিগত উৎসব, পারিবারিক উৎসব, সামাজিক উৎসব, ধর্মীয় উৎসব, রাজনৈতিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব, জাতীয় উৎসব, স্মরণােৎসব প্রভৃতি । বিভিন্ন দিবস বা উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে মানুষ এসব উৎসব পালন করে আসছে।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উৎসব : মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু বিষয় বা ঘটনা নিয়েও বিভিন্ন উৎসব পালন করার রীতি। আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। আবার পারিবারিক বিভিন্ন উৎসব যেমন– বিবাহ, খতনা, সন্তানের অন্নপ্রাশন, নবান্ন প্ৰভতি উৎসব। পারিবারিক পরিবেশে অত্যন্ত জৌলুস করে পালন করা হয়। অনেক পরিবারে অনেক জাকজমকপূর্ণভাবে জন্মদিন পালন করে থাকে। আবার পরিবারের কারাে বিয়ে উপলক্ষ্যে সেই বাড়ি বা এলাকা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর ।

সামাজিক উৎসব : সামাজিক উৎসব মূলত সর্বজনীন অনুষ্ঠান । এরূপ উৎসব বাঙালি জাতির ঐতিহ্যস্বরূপ। ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়। বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক উৎসব হলাে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের। প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। পহেলা বৈশাখের সাথে মেলার সম্পর্ক সুনিবিড়। এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসে। মেলায় আয়ােজিত ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প প্রদর্শনী, নাচ, গান, লাঠি খেলা, পুতুল নাচ, সার্কাস প্রভৃতি দর্শকদের আনন্দ দেয়।

পহেলা বৈশাখকে আরও আকর্ষণীয় করে তােলার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীরা বর্ণাঢ্য বৈশাখী মঙ্গল শােভাযাত্রার আয়ােজন করে। পহেলা বৈশাখের সাথে আরও দুটি অনুষ্ঠান সম্পৃক্ত। একটি হলাে পুণ্যাহ ও আরেকটি হলাে হালখাতা। পুণ্যাহ প্রাচীন জমিদারদের খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠান। তাই জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় এ অনুষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর হালখাতা অনুষ্ঠান এখনাে প্রচলিত আছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখের হালখাতা অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা পুরাতন বছরের হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন বছরের হিসাবের খাতা খােলে। দোকানপাট রঙিন কাগজ দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর করে সাজানাে হয়। আর ক্রেতাদের মিষ্টি দ্রব্য দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ও বকেয়া টাকা তােলা হয় এ। দিনে। এছাড়াও ইংরেজি মাসের প্রথম দিন ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। নবান্ন উৎসব, বসন্তবরণ উৎসব, বর্ষাবরণ উৎসব, উপজাতিদের বিভিন্ন উৎসব ইত্যাদি সামাজিক উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিয়ে একটি প্রাচীন সামাজিক প্রথা। বিয়েকে কেন্দ্র করে দুটি পরিবারের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এছাড়া পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন। সকলের সম্মিলনে একটি প্রাণময় উৎসব হলাে বিয়ের অনুষ্ঠান।

ধর্মীয় উৎসব : ধর্মীয় উৎসব সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লােক রয়েছে। প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আবার নিজস্ব বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলমান। মুসলমানদের প্রধান দুটি উৎসব হলাে ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহা। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানরা ইদুলফিতর উদ্যাপন করে। আর ইদুল-আজহায় পশু কোরবানি করা হয়। এছাড়াও মুসলমান সম্প্রদায়ের লােকেরা হজ, মহররম, হিজরি নববর্ষ, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবি (সা.), শবে বরাত, শবে কদর প্রভৃতি উৎসব সাড়ম্বরে উদযাপন করে থাকে । হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলাে দুর্গাপূজা। এছাড়াও রয়েছে দোলযাত্রা, জন্মাষ্টমী, চৈত্রসংক্রান্তি, হােলি প্রভৃতি উৎসব । এসব উৎসব-অনুষ্ঠানে হিন্দুদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে চলে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড়াে উৎসব যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন বা বড়ােদিন । এছাড়া ইস্টার সানডেতেও খ্রিষ্টানরা উৎসব পালন করে।

সাংস্কৃতিক উৎসব : বাংলা সংস্কৃতি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গােষ্ঠী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে যে সংস্কৃতির চর্চা করে তা বােঝা যায় বাংলাদেশে পালিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব দেখে । পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রমনার বটমূলে উদ্যাপিত ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে । একুশের বইমেলা, ঢাকা বইমেলা, রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী প্রভৃতি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব । এছাড়া আলােচনা সভা, জ্ঞানচর্চামূলক বিভিন্ন প্রতিযােগিতা, কবিতা আবৃত্তি, প্রভৃতিও সংস্কৃতিকে দৃঢ় করে । সংস্কৃতিমান লােকেরা এসব উৎসব থেকে জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করে। তাছাড়া জাতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনী, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, এশীয় চিত্রকলা প্রদর্শনী, লালনােৎসব, পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসব প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যােগ করে। সাংস্কৃতিক এসব উৎসব বাংলা সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম।

জাতীয় উৎসব : বাঙালি জাতির জাতীয় জীবনে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের স্মৃতি স্মরণ করে যে উৎসব পালন করা হয় তাই হলাে জাতীয় উৎসব। বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সম্পর্কিত। বাঙালি জাতির জাতীয় উৎসব হলাে ২৬শে মার্চ এবং ১৬ই ডিসেম্বর। ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস আর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এসব দিবস অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে এদেশের মানুষ পালন করে। দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ এসব দিবস উদ্যাপনে অংশ নেয়। বাঙালি জাতির জীবনে এসব দিবস পরিণত হয়েছে জাতীয় উৎসবে। এসব উৎসব উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সেমিনার, শােভাযাত্রার আয়ােজন করা হয়ে থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মেলা, ক্রীড়া প্রতিযােগিতা এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়ােজন থাকে। ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় । এ দিবস বাঙালি জাতির জন্য এক শােকবিধুর দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী বইমেলার আয়ােজন করা হয়। এ বইমেলা আমাদের জন্য একটি জাতীয় উৎসব ।। জাতীয় উৎসবগুলােতে দেশের সকল শ্রেণির মানুষ দলবেঁধে অংশ নেয়।

অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট উৎসব : অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত উৎসবই হলাে অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট উৎসব । এদিক থেকে বিচার করলে পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত পূণ্যাহ ও হালখাতা অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট উৎসব। কেননা এ উৎসব নববর্ষসংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান হলেও এগুলাের মূল সুর অর্থনীতি | অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট অন্যতম উৎসব হলাে মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দিবসটি উদযাপিত। হয় । প্রতি বছর মে মাসের প্রথম দিন দিবসটি সারাবিশ্বের শ্রমজীবী মানুষেরা পালন করে। তাদের কাছে দিবসটির তাৎপর্য অনেক। এসব উৎসব ছাড়াও অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎসব হলাে— পিঠা উৎসব, ফল উৎসব, মৎস্য উৎসব, ফসল কাটা উৎসব প্রভৃতি।

স্মরণােৎসব : মহান ব্যক্তি ও মনীষীদের কীর্তি ও জীবনী স্মরণ করে যে উৎসব পালন করা হয় তাকে বলা হয় স্মরণােৎসব। মূলত প্রয়াত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, তাঁদের অবদান স্মরণ করা ও তাদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয় এসব স্মরণােৎসবে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণােৎসব পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে কয়েকদিনব্যাপী বিভিন্ন উৎসব ও কর্মসূচির আয়ােজন করা হয়। তাছাড়া লালন শাহ, বেগম রােকেয়া, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কায়কোবাদ, শিল্পী জয়নুল আবেদিন, হুমায়ন আহমেদ প্রমুখ ব্যক্তির জন্মবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আলােচনা সভার আয়ােজন করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি অনেক অবদান রেখে গেছেন, যাদের ত্যাগের ফসল আমাদের এই স্বাধীনতা। তাদের জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী মহা আয়ােজনে পালন করা হয়। এরা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানা, জিয়াউর রহমান প্রমুখ। তাছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন দিবস তাৎপর্যপূর্ণ। এসব দিবসেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। যেমনবঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস, অস্থায়ী সরকার গঠন দিবস প্রভৃতি।

উৎসবের অসাম্প্রদায়িক চেতনা : উৎসব জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পূর্বশর্ত হলাে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন। আর এসব উৎসব মানুষকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। সমাজে বসবাসকারী মানুষ একে অপরের সাথে মিলেমিশে বাস করে । ঈদ উৎসবে মুসলমানরা অন্য ধর্মের বন্ধু-বান্ধবদের আমন্ত্রণ জানায় । হিন্দুদের দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা প্রভৃতি বড়াে উৎসবে হিন্দুরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে আমন্ত্রণ জানায়। খ্রিষ্টান ও বেদ্ধিরাও তাদের। উৎসবে সবাইকে দাওয়াত করে। এভাবে প্রতিটি ধর্মের লােকেরা পারস্পরিক সাহায্য-সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ধর্মীয়। চিন্তাধারার গণ্ডি পেরিয়ে সৌহার্দপূর্ণ এক সভ্য সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ হয় ।

ব্যক্তিজীবনে উৎসবের প্রভাব : আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে মানুষ কর্মচঞ্চল । মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে চলে কাজের পিছনে। জীবনের প্রতিটি পদে মানুষকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এভাবেই মানুষের জীবনের চাকা ঘুরে চলছে। ফলে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে নিরানন্দময়। এই অবসাদগ্রস্ত ও একঘেয়েমিপূর্ণ জীবনের বিতৃষ্ণা থেকে রেহাই পেতে উৎসবের উপযােগিতা অপরিসীম। জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্ত হতাশা ও ব্যর্থতার মধ্যে কাটলেও আমরা যখন কোনাে উৎসবে অংশগ্রহণ করি তখন ক্ষণিকের জন্য হলেও আমরা তা ভুলে যাই। কিছু সময় আনন্দ অনুভব করি । আবার কিছু কিছু উৎসব আমাদের মানসিক যন্ত্রণা ও দুঃখ-কষ্টকে লাঘব করে মনকে সতেজ করে তােলে। আবার ধর্মীয় উৎসবগুলাে মানুষের মনে পবিত্রতা এনে দেয়। মূলত উৎসব ব্যক্তিজীবনে প্রশান্তি এনে দেয় ।

জাতীয় জীবনে উৎসবের প্রভাব : জাতীয় জীবনেও উৎসবের প্রভাব অপরিসীম । জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশের সমৃদ্ধি আনয়নের চেতনা জাগ্রত করতে উৎসবের প্রভাব অনেক। সামাজিক উৎসবগুলাে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে, মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবােধ জাগ্রত করে। আবার কিছু সামাজিক অনুষ্ঠান বাঙালি সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করে জাতীয় সংহতি গড়ে তােলে। ফলে সকলে দেশের কল্যাণে একযােগে কাজ করার প্রেরণা লাভ করে ।

উপসংহার : বাংলাদেশ নানা পালা-পার্বণ ও উৎসবের দেশ। এসব উৎসব শুধু আমাদের সংস্কৃতির অংশই নয়, জাতীয় পরিচয়ও বহন করে। সামাজিক বিভিন্ন উৎসব মানুষের ব্যক্তিজীবনকে প্রফুল্ল ও আনন্দিত করে জাতীয় অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে।

Rate this post