❋তােমাদের কলেজে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়ােজিত অনুষ্ঠানমালার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।

অথবা, তােমার কলেজে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আয়ােজিত অনুষ্ঠানমালার বিবরণ দিয়ে অধ্যক্ষ বরাবর একটি প্রতিবেদন রচনা কর। 

তারিখ : ১৫/০৪/২০২১  

বরাবর 
অধ্যক্ষ 
সরকারি বিজ্ঞান কলেজ 
ঢাকা।

 
বিষয় : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আয়ােজিত অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কিত প্রতিবেদন। 
সূত্র : স্মারক নং- স.বি.ক.অনু./২০/২১ 

জনাব 
আপনার আদেশক্রমে (স্মারক নং স.বি.ক.অনু./২০/২১) সরকারি বিজ্ঞান কলেজে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি যে অনুষ্ঠান হয়ে গেল, তার ওপর একটি প্রতিবেদন আপনার সদয় অবগতির জন্য পেশ করছি।

বিগত বছরের শেষ সূর্যাস্তের পর একটি রাতের অপেক্ষা মাত্র। তারপর পূর্বাকাশে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় । যাপিত জীবনের দুঃখ-বেদনা, ব্যর্থতা, সাফল্য, আনন্দ ও বিরহের দিনগুলাে পেছনে ফেলে সুদিনের আশা জাগিয়ে অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে আসে আরেকটি নতুন বছর। এক বুক স্বপ্ন-আশার অপর নাম নববর্ষ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে প্রাণময় উৎসবের দিন। এদিনে চিরচেনা অতি আপন ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় বাংলার হাটে-মাঠে-ঘাটে, শহরে-বন্দরে মহাআনন্দে মেতে উঠে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। জাতির এমন বর্ণিল আনন্দধারায় মেতে উঠেছিল সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরাও। 

প্রতি বছরের মতাে এবারও নববর্ষ উপলক্ষ্যে কলেজ প্রাঙ্গণকে চমৎকারভাবে সজ্জিত করা হয়। কলেজের প্রবেশ পথের প্রধান তােরণে ‘শুভ নববর্ষ-১৪২৮’ খুব বড় করে লেখা হয়, যা অনেক দূর থেকে দেখা যায়। নববর্ষের সূর্যোদয় লগ্নে সুর-মূর্ধনার মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ করে নেয় সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ উপলক্ষ্যে কলেজের ছাত্র সংসদের উদ্যোগে এক আলােচনা সভা, বৈশাখী মেলা ও ইলিশ-পান্তা ভােজনসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়।

সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ‘বালা নববর্ষ উদযাপিত 

অনুষ্ঠানমালা一

শােভাযাত্রা : ভাের ৬.০০টা ॥ স্থান : কলেজ প্রাঙ্গণ ॥ 

ইলিশ-পান্তা ও দেশজ ফলমূল ভােজ : সকাল ৭:০০টা। 

বর্ষবরণ- এসাে হে বৈশাখ : বৈশাখী গান ও নৃত্য পরিবেশনা ॥ ৭:৩০ ॥ 

আললাচনা সভা : বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও জাতীয় জীবনে নববর্ষের প্রভাব ॥ ৯:০০ ॥ 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : স্বরচিত কবিতা পাঠ, সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান ॥ ১০:০০ ॥ 

শহর প্রদক্ষিণ ও বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণ এবং সমাপনী ॥ ১১:০০ ॥ 

বিবরণ

ভাের হতে না হতেই কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গণে হাজির হতে শুরু করে। প্রত্যেকের হাতেই ছিল বিভিন্ন ধরনের। পােস্টার, ফেস্টুন, যাতে লেখা ছিল – এসাে হে বৈশাখ, শুভ নববর্ষ ইত্যাদি স্লোগান। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েরা পরেছিল লাল ও সাদা রঙের শাড়ি। হাতে পরেছিল রং-বেরঙের চুড়ি, মাথার খোপায় খুঁজেছিল তাজা বেলি ফুলের মালা; গলায় মাটির তৈরি গহনা। আর ছেলেরা পরেছিল লাল-সাদা ও বাহারি পাঞ্জাবি। 

‘এসাে হে বৈশাখ, এসাে, এসাে’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ভােরে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা। অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি । তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেননববর্ষ সমগ্র মানুষের কাছে নবজীবনের দ্বার উন্মােচিত করে দিক। নতুন বছর যেন মুষ্টিমেয় ধনীর ভােগবিলাসের সংকীর্ণ উল্লাসে পরিণত না হয়; দারিদ্র পীড়িত মানুষের নিষ্ফল বিলাপে যেন পৃথিবী বিষন্ন না হয়ে ওঠে; যুদ্ধদীর্ণ বিশ্বের পাশবশক্তির তাণ্ডব যেন শান্তির শুভশক্তির কাছে পরাভূত হয়। আজ নববর্ষের এই শুভক্ষণে, আসুন, কবিকণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা বলি, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাববা জঞ্জাল,/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে যাবাে আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ জনাব শরিফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার জাফর আহমদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা নববর্ষ একটি সর্বজনীন এবং জাতীয় উৎসব। আমাদের জাতিসত্তার সাথে এ উৎসবের আমেজ জড়িয়ে আছে। জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তার অন্যতম স্মারক এ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। বাংলা নববর্ষ আমাদের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। 

নববর্ষের উৎসবের সাথে আমাদের গৌরবময় অতীত ও ঐতিহ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখি, জীবন সুন্দর করে গড়ে তােলার প্রেরণা পাই । ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়। আবেগঘন আবর্তের মধ্যে বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে স্বকীয়তা ও সচেতনতা সৃষ্টি করে আমাদের আশাবাদী জীবনে নববর্ষ সীমাহীন সম্ভাবনার হাতছানি দেয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে নিয়ে আসে বিশেষ তাৎপর্য। শত হতাশার মধ্যেও আমাদেরকে আশান্বিত করে। জাতীয় জীবনে নতুন চেতনার সৃষ্টি করে বলে আমরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ করে নিয়ে গেয়ে উঠি ‘এসাে হে বৈশাখ, এসাে এসাে। আললাচনা সভা শেষে প্রধান অতিথি কলেজ প্রাঙ্গণে আয়ােজিত বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। মেলার স্টলগুলাে ছিল কুটির শিল্পজাত বিভিন্ন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ। এছাড়াও মেলার বিভিন্ন দোকানে ছােটদের মন ভােলানাে পণ্য এবং নানা রকম দেশীয় পিঠা-পুলির আয়ােজন দেখা যায়। মাঠের এক কোণে দেখা যায়, নাগরদোলায় চড়ার জন্য অনেক শিশু-কিশাের ভিড় করে। আছে । স্বাশির শব্দে আর শিশুদের চিৎকারে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার চারপাশ। বিনােদনের নানা উপকরণ মেলায় বেশ | উপভােগ্য হয়ে উঠে। মেলার প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটে।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে সঙ্গীতানুষ্ঠানেরও আয়ােজন করা হয়। স্থানীয় বাউল শিল্পীরা অনুষ্ঠানে তােকগীতিসহ নানা আপা গান পরিবেশন করেন। 

তারপরই শুরু হয় বৈশাখী গান ও নৃত্যানুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথের ‘এসাে হে বৈশাখ, এসাে এসাে’ গানটি দলীয় নৃত্যে পরিবেশন হয়। নজরুলের কয়েকটি দেশাত্মবােধক গানও শিল্পীরা পরিবেশন করে। দলীয় ও একক গানের সুরের দোলায় সকলে তার উদ্বেলিত হয়। মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তারা সংগীত শিল্পীদের উৎসাহিত করে। দীর্ঘদিন পর এমন প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান উপভােগ করতে পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা মুগ্ধ হয়েছিল। মেলায় অংশগ্রহণের মধ্য ৪ আয়ােজিত অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। সবদিক বিচারে বর্ষবরণের সকল অনুষ্ঠান সার্থক হয়েছে। 

প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা  : হিরণ

                                                 দ্বাদশ শ্রেণি, বিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। 

প্রতিবেদনের শিরােনাম          : সরকারি বিজ্ঞান কলেজে বাংলা নববর্ষ’ উপযাপিত। 

প্রতিবেদন তৈরির সময়          : সকাল ১০টা।

Rate this post