প্রশ্নঃ একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করা হতে চূড়ান্ত শুনানী পর্যন্ত যে সকল পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় তা আলোচনা কর। 

Discuss the stages through which a Civil Suit passes from its institution to the stage of the final hearing.

একটি দেওয়ানী মামলা প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত নিম্নোক্ত স্তর বা পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ঃ

১. মামলা রুজু (Institution): আদালতের কর্মচারীর নিকট আরজি দাখেল করে মামলা রুজু করতে হয় (0.4., R.I)। মামলাটি উক্ত আদালতের বিচার করার এখতিয়ার আছে, নালিশের কারণ, দাবীকৃত প্রতিকার ইত্যাদি আরজিতে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি দিতে হবে।

আরজি পেশ করার পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারী (যাকে পেসকার বলা হয়) একটি নির্দিষ্ট রেজিষ্টারে মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করবেন এবং ক্রমিক নম্বর বসাবেন। এটাই মামালার নম্বর হিসেবে পরিচিত হবে।

২. সমন জারি ( Issue and Service of Summons): মামলা রুজু হবার পর আদালত একটি নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হয়ে বাদীর আরজির জবাব দিবার জন্য সমন জারি করবেন ( 0.5 R. I) তবে আরজি দাখিল করার সময়েই বিবাদী যদি হাজির হয়ে বাদীর দাবী মেনে নেয় তাহলে কোন সমন জারির প্রয়োজন হয় না। ৫ আদেশের ৩ বিধি মতে আদালত যদি সঙ্গত মনে করেন যে, ঐ তারিখে বাদীরও ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়া প্রয়োজন তবে আদালত বাদীকেও সেই মর্মে আদেশ দিবেন।

৩. হাজিরা ও লিখিত বিবৃতি ( Appearance and written statement): দেওয়ানী কার্যবিধির ৮ আদেশের ১ বিধিতে হাজিরা ও লিখিত বিবৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, মামলার শুনানির তারিখে কিংবা তৎপূর্বে বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করবেন।

৮ আদেশের ১০ বিধিতে বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে আদালত কোন পক্ষের নিকট এরূপ লিখিত বিবৃতি তলব করেন এবং সে পক্ষ যদি তা নির্ধারিত সময়ে দাখিল করতে অপারগ হন, তবে আদালত উক্ত পক্ষের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করবেন অথবা অন্য কোন উপযুক্ত আদেশ দিবেন।

৪. প্রথম শুনানী এবং বিচার্য বিষয় নির্ধারণ ( First hearing and Settlement of issues): চতুর্থ পর্যায়ে দেওয়ানী মামলার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং মোকদ্দমাটি কিভাবে অগ্রসর হবে তার পূর্বাভাষ জানা যায়৷ বাদীর আরজি ও বিবাদীর জবাব পরীক্ষা নিরীক্ষা ও শুনানীর পর তাদের মধ্যে বিরোধের বিষয়গুলি আদালত নির্ধারণ করবেন (আদেশ ১৪, বিধি ১)। আইনগত কোন বিষয় বা তথ্যগত কোন বিষয় যদি এক পক্ষ স্বীকার করেন এবং অপর পক্ষ অস্বীকার করেন তবে সেটা বিচার্য বিষয় হয়।

১৫ আদেশের বিধান মতে মামলার প্রথম শুনানীর দিন যদি প্রতীয়মান হয় যে, পক্ষগণের মধ্যে তথ্য সংক্রান্ত বা আইনগত কোন বিষয়ে কোন বিরোধ নেই তবে আদালত তৎক্ষনাত মামলা খারিজ করে দিতে পারবেন।

৫. মামলার শুনানী, সাক্ষীগণের জবানবন্দী গ্রহণ ও সওয়াল জবাব (Hearing of the suit examination of witnesses and arguments): দেওয়ানী মোকদ্দমার এই স্তর বা পর্যায়টি বেশ গুরত্ব পূর্ণ। এই স্তরেই সাক্ষীদের জবানবন্দী নেয়া হয় এবং পক্ষগণ যুক্তিতর্ক পেশ করেন। ১৮ আদেশের ১ বিধিতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক দেওয়ানী মামলার বাদী পক্ষ প্রথম আদালতে তার বক্তব্য পেশ করবেন, কিন্তু বিবাদী পক্ষ যদি বাদীপক্ষের অভিযোগের তথ্যসমূহ স্বীকার করে এরূপ যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, আইনগত কোন প্রশ্ন অথবা বিবাদী কর্তৃক উত্থাপিত কোন তথ্যমূলক অভিযোগ বিবেচনার পর যদি প্রতীয়মান হয় যে, বাদী তার প্রার্থিত প্রতিকার পাবার অধিকারী নয় তবে সেক্ষেত্রে বিবাদী পক্ষই প্রথম বক্তব্য পেশ করবেন।

১৮ আদেশের ১২ বিধি মতে জবানবন্দী দানকালে কোন সাক্ষীর আচরণ আদালত প্রয়োজন মনে করলে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন। যে সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে প্রয়োজন হলে মামলার যে কোন পর্যায়ে আদালত তাকে পুনরায় তলব করতে পারবেন এবং উক্ত সাক্ষীকে প্রয়োজনীয় যে কোন প্রশ্ন করতে পারবেন।

এভাবে শুনানী ও জবানবন্দীর ভিত্তিতে মামলার উভয় পক্ষ তাদের বক্তব্য ও সওয়াল জবাব উপস্থাপন করবেন।

৬. রায় ও ডিক্রী (Judgement and decree): দেওয়ানী কার্যবিধির ২০ আদেশের ১ বিধির বিধান মতে, মামলার শুনানী সমাপ্ত হবার পর আদালত তৎক্ষনাৎ অথবা পরবর্তী কোন তারিখে প্রকাশ্যভাবে মামলায় রায় প্রদান করবেন। এই আদেশে আরো বলা হয়েছে যে, রায়ের সহিত সামঞ্জস্য রেখে ডিক্রী দিতে হবে।

ডিক্রীতে মামলার নম্বর, পক্ষগণের নাম ও পরিচয় এবং দাবীর বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। মামলার খরচের কে কোন অনুপাতে বহন করবে কিংবা কোন সম্পত্তি হতে তা মেটানো হবে ডিক্রীতে তাও উল্লেখ করতে হবে। বিচারক যখন এই মর্মে সন্তুষ্ট হবেন যে, রায় অনুসারে ডিক্রী প্রণীত হয়েছে তখনই তিনি ডিক্রীতে স্বাক্ষর দিবেন।’

৭. ডিক্রী জারী (Execution of decree ): জারী দিবার যোগ্য ডিক্রীসমূহ দিয়ে রায় বাস্তবায়ন করতে হয়। ডিক্রী দানকারী আদালতই ডিক্রী জারীর মাধ্যমে ডিক্রী প্রাপককে ডিক্রীর ফল ভোগ করার ব্যবস্থা করে থাকেন।

এভাবে মামলা শুরু হতে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে ডিক্রী জারীর মাধ্যমে একটি দেওয়ানী মামলার যবনিকা টানা হয়।

Rate this post