অনুচ্ছেদ রচনা : ধৈর্য বা সহনশীলতা


অনুচ্ছেদ রচনা : ধৈর্য বা সহনশীলতা


ধৈর্য একটি পরম মানবীয় গুণ । ধৈর্যের মাঝে নিহিত থাকে সফলতার বীজ। সমস্যাবহুল জীবনের পথে প্রতিনিয়ত আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। মায়াময় জগৎ-সংসার নানা বাধনে আমাদেরকে বাঁধতে চায় । কিন্তু ধৈর্য নামক পরশ পাথরের স্পর্বে আমরা মুক্তি খুঁজি। পৃথিবীতে ধৈর্য সম্বন্ধে নানা সত্য ঘটনা, কাহিনি, এমনকি অলৌকিক কাহিনিও প্রচলিত আছে । ইব্রাহিম (আ) ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে নবি হয়েছেন, মুসা (আ.) ধৈর্যের সঙ্গে ফেরাউনের সঙ্গে লড়েছেন, যীশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার পরেও তিনি অসহিষ্ণ হননি। মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.) সমস্ত জীবনে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে বিশ্বমানবের জন্য এক প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন, কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে লক্ষ্যচ্যুত হননি । সহিষ্ণুতার মধ্য দিয়ে মানুষ অর্জন করতে পারে চূড়ান্ত বিজয় । এ জীবনে বহু দুঃখ, কষ্ট, ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই থাকাই স্বাভাবিক । যারা ধৈর্যের সাথে হাসিমুখে এগুলাে বরণ করে নিতে পারে তারাই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার রাখে । জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে প্রাণপণ সাধনা করা প্রয়ােজন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা মানবজীবনের প্রধান কাজ। আর তা সফল করার জন্য প্রয়ােজন ধৈর্য। বা সহনশীলতা। প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে, বড়াে হওয়ার প্রত্যয়ে বুক বাঁধে আর তখন প্রয়ােজন হয় ধৈর্য সাধনার । বন্ধুর পথকে পায়ে দলে, বাধার বিন্ধ্যাচলকে অতিক্রম করে সােনালি আশায় স্বপ্নাতুর মানুষগুলাে বাঁধে বুক । নির্ভীক যােদ্ধার মতাে অসীম ধৈর্যে পাড়ি দেয় জীবনের অথৈ সমুদ্র। অন্যদিকে যারা ধৈর্যহারা তারা বার বার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরূপ জীবনে কেউই প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। তাদের কামনা-বাসনা অপূর্ণ রয়ে যায় । জীবনের বেলাভূমিতে বেলাশেষে তাদের সঞ্চয় থাকে শুধু ব্যর্থতা। সুতরাং জীবনে সফলতার প্রয়ােজনে সকল বাধা-বিপত্তি, দুঃখ অতিক্রম করতে হলে ধৈর্য এক মহা নিয়ামক হিসাবে ভূমিকা রাখবে । তাই তাে কবির উচ্চারণ ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর বাঁধ বাঁধ বুক/সংসারে সহস্র দুঃখ আসিবে আসুক।’ সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহভাবে বাঁচতে হলে ধৈর্য একান্ত প্রয়ােজন । জীবনে সংস্কৃতির সাধনা প্রয়ােজন, জ্ঞানের প্রয়ােজন, বিজ্ঞানের প্রয়ােজন, প্রেমের প্রয়ােজন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন ধৈর্যের। পরম বেদনায়, অসংখ্য দুঃখের কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষত অন্তরে ধৈর্য সহকারে গােলাপ ফুটিয়ে তােলার মধ্যেই জীবনের পরিপূর্ণতা নিহিত। নানা শােষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-অবিচার, পরশ্রীকাতরতা, নিষ্ঠুরতা, কূপমণ্ডুকতা, হিংসা, বিদ্বেষে এ পৃথিবী বিষিয়ে উঠেছে। অথচ স্বয়ং স্রষ্টা আমাদেরকে এসব অন্যায়ের শাস্তি না দিয়ে বরং আলাে, বাতাস, পানি ও জীবনধারণের সমস্ত শক্তির যােগান দিচ্ছেন পরম ধৈর্যের সাথে । ধৈর্যশীল মানুষদেরকেই স্রষ্টা ভালােবাসেন। তাই ধৈর্যের সাথে সামনে অগ্রসর হতে থাকলে সফলতা নিশ্চিত আসবেই।

অনুচ্ছেদ রচনা

Rate this post