অনুচ্ছেদ রচনা : পর্যটন-শিল্প 

অনুচ্ছেদ রচনা : পর্যটন-শিল্প 

পৃথিবীব্যাপ পর্যটন-শিল্প একটি স্বীকৃত নাম । দেশে দেশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প । লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশদেশান্তরে। আর এ শিল্পকে অবলম্বন করে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মের সংস্থান হয়েছে। মার্কো পােলা, ইবনে বতুতা, ফা হিয়েন, হিউয়েন সাং সহ আরও অনেক পর্যটক ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। সে সময়কার কষ্টকর যােগাযােগ ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে এই ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে । এসব বিখ্যাত পর্যটকদের অনেকেই এ উপমহাদেশে এসেছিলেন যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। পৃথিবীতে পর্যটন ‘আজ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি শিল্পের নাম হিসাবে পরিচয় বহন করছে। বিভিন্ন দেশ পর্যটনে প্রচুর বিনিয়ােগ বাড়িয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ মুনাফা অর্জন করছে। বিশ্বের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ-এশীয় দেশগুলােতে পর্যটন-শিল্পের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এক পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ভারতে বছরে পর্যটক আসেন ২০ লক্ষ, নেপালে ৪ লক্ষ, সেখানে বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা দেড় লাখের মতাে, যা মালদ্বীপের পর্যটকের সংখ্যার অর্ধেকেরও কম। অথচ বাংলাদেশেই পর্যটন-শিল্প হতে পারত মুনাফা অর্জনের অন্যতম উৎস।

ব-দ্বীপ সদৃশ এ বঙ্গভূমির রয়েছে বিচিত্র ভূ-ভাগ, সমুদ্র এবং বিস্তৃত উপকূল। সমুদ্র তটরেখা ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন যা পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও এখানে আছে পাহাড়-পর্বত, জলপ্রপাত, চা-বাগান, সবুজ ফসলের মাঠ আর ষড়ঋতুর এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। পর্যটন-শিল্পের বিকাশে বাংলাদেশের প্রাচীনত্বের নিদর্শনও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন-শিল্প নানাভাবে অবদান রাখতে সক্ষম । বাংলাদেশ। পর্যটন করপােরেশন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৯৭৪ সালে জাতীয় হােটেল ও পর্যটন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকার পৃথকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে। তবে তা পর্যটন-শিল্পের বিকাশে কোনাে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি । নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ভিসা সমস্যা একটি উল্লেখযােগ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ভ্রমণে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের আগ্রহ থাকলেও ভিসা জটিলতাসহ নানা কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন। যদিও সরকার পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ২০১৬ সালকে “জাতীয় পর্যটন বর্ষ” হিসাবে ঘােষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশের ভৌগােলিক অবস্থান সন্ত্রাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এরূপ অভিযানে ভিসা-ব্যবস্থা সহজ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক মুসলিম দেশে আইএসের হুমকির জন্য পর্যটকরা যেতে পারছে না। পৃথিবীর পর্যটন-শিল্পে সমৃদ্ধ জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে বন্যা, খরা, আইলা, সুনামির মতাে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে পর্যটনশিল্পের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, বাংলাদেশের যে ভৌগােলিক অবস্থান, ঋতুবৈচিত্র্য, নানাবিধ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, দিগন্তবিস্তৃত সুন্দরবন, অবারিত সমুদ্রতট, মানুষের হৃদয়-নিংড়ানাে আতিথ্য— এসব সােনার বাংলায় পর্যটনশিল্প বিকাশে এক অনুপম আশীর্বাদ হতে পারে ।

Rate this post