আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি।

ভাব-সম্প্রসারণ : আলস্য মানবজীবনের সমস্ত শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে অলস ব্যক্তি তার শক্তি এবং সামর্থ্য সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাস একেবারেই হারিয়ে ফেলে। তাই অলসতা মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশ্বসভ্যতার দিকে তাকালে আমাদের নয়ন-মন জুড়িয়ে যায়, তাতে রয়েছে অগণিত নিবেদিত প্রাণ পরােপকারী মানুষের শ্রম আর একনিষ্ঠ সাধনা। মানুষের শ্রমেই গড়ে উঠেছে আধুনিক পৃথিবী । সুতরাং শ্রম ব্যতীত অন্য কোনাে শক্তি কোনাে জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে না। পক্ষান্তরে, আলস্য পারমাণবিক বােমার চেয়েও ধ্বংসাত্মক, মানুষের অস্থিমজ্জায় মিশে মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়। ফলে অলস লােকজন নিয়ে কোনাে সমাজই তাদের প্রত্যাশিত স্থানে পৌঁছাতে পারে। 

অলসতা মানুষের মধ্যে তীব্রভাবে জন্ম দেয় হীনম্মন্যতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা; আরও জন্ম দিতে পারে অত্যধিক কল্পনাপ্রিয়তা, যার বাস্তবের সঙ্গে কোনাে মিল নেই। অলসতা দিন দিন সমস্ত সৃজনশীল শক্তি চুষে খেয়ে ফেলে, ফলে যে মানুষ পৃথিবীতে এত সম্ভাবনাময় সম্পদ তাকেও পরিণত হতে হয় অন্যের বােঝারূপে। একসময় হয়তাে তাকেই আবার হাত বাড়াতে হয় ভিক্ষার জন্য। সীমাহীন নেতিবাচকতায় পরিপূর্ণ এ অলসতা। কাজেই, এটি মানবজীবনের এক ভয়াবহ পীড়া । অত্যধিক ভােগ-বিলাস আর অলসতায় অনেক মানুষ তার অস্তিত্বকে বিপন্ন করেছে- পৃথিবীতে এ নজিরও বিরল নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক রাজা-বাদশা, সম্রাট, সুলতান ভােগ-বিলাসে আর বাইজি নাচে অলস সময় কাটাতে গিয়ে শেষপর্যন্ত সিংহাসন হারা, রাজ্য হারাও হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনেও আলস্য এক মরণঘাতী রােগের মতােই একটি সাজানাে গােছানাে সংসারকে তছনছ করে দিতে পারে। অলসতার ক্ষতিকর প্রভাবেই সমাজে জন্ম নেয়- চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম । আজকের যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণই এ আলস্য। অথচ যেকোনাে দেশের জন্য এ যুব-সম্প্রদায় একটি বৃহৎ শক্তির উৎস। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান মােটেই সন্তোষজনক নয়। বরং অধিকাংশ এসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিং-এর মতাে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে সরাসরি কিছু উচ্ছঙ্খল যুবক জড়িত। এরা চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে যেকোনাে ধরনের অপরাধমূলক কাজে নিয়ােজিত। এদের অফুরন্ত সময় কাটে নেশার আডড়ায়। জাতি হিসেবে এ আমাদের জন্য এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এ সম্ভাবনাময় যুবশক্তিকে কাজে লাগানাের জন্য কোনাে ধরনের টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে একদিকে যেমন দেশে সর্বদা লক্ষ যুবকের কোটি কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে অলসতায়; অন্যদিকে, সমাজ-রাষ্ট্রে জন্ম নিচ্ছে নানা রকমের দুর্নীতি। অথচ অতিশয় জ্ঞানবৃদ্ধ দার্শনিক সক্রেটিস গ্রিসের যুব-সম্প্রদায়েরই শক্তি-সামর্থ্যকে স্বাগত জানাতেই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের জীবনে এ অলসতা যেভাবে বাসা বাঁধছে তাতে মহা-দুর্যোগেরই আলামত পাওয়া যায়। সুতরাং এটি নিশ্চিত যে, যেকোনাে দেশ-জাতির আর্থনীতিক উন্নয়নে, সাংস্কৃতিক বিকাশে আলস্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই আলস্য পরিহার করে শ্রমের সাধনা সকলের করা উচিত।

প্রবহমান জীবনে আলস্য এক প্রতিবন্ধকতার নাম। এটি মানবজীবনের সমস্ত অর্জনকে ম্লান করে দিতে পারে। তাই আলস্যকে ছুটি দিয়ে নিরন্তর কর্ম আর একনিষ্ঠ সাধনায় সমৃদ্ধ জীবন গড়ে তুলতে হবে।

1.7/5 - (3 votes)