প্রশ্নঃ সরল বাস্তববাদ বলতে কী বোঝ?
অথবা, সরল বাস্তববাদ কী?
অথবা, সরল বাস্তববাদ কাকে বলে?
ভূমিকাঃ বাস্তবাদ সত্তাবিষয়ক এমন একটি মতবাদ, যে মতবাদ অনুসারে বস্তুর জ্ঞাননিরপেক্ষ বা মনিরপেক্ষ স্বতন্ত্র সত্তা আছে। অর্থাৎ যে মতবাদ অনুসারে বস্তুর একটি স্বাধীন সত্তা আছে, জ্ঞাতা জানুক বা না জানুক, জ্ঞেয় বস্তু স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল, তাকে বাস্তববাদ বলে। বাস্তববাদের ইতিহাস আলােচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, বাস্তববাদ প্রধানত চার প্রকার; যথা- (১) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ (২) নব্য বাস্তববাদ এবং (৩) বিচারমূলক বাস্তববাদ। নিম্নে সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে-
সরল বাস্তববাদঃ সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ একটি প্রাচীনতম মতবাদ। এ বাস্তববাদ বস্তুর স্বতন্ত্র মননিরপেক্ষ অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। এ মতে, বস্তু প্রত্যক্ষ বা সাক্ষাভাবে আমাদের চেতনায় ধরা দেয় এবং প্রকৃতই যেমন- তেমনভাবে বস্তুটি জ্ঞাত হয়। বস্তুর সব জ্ঞানই বাস্তব এবং এগুলাের প্রকৃতিতে বস্তুগত অস্তিত্ব আছে। বস্তু ও বস্তুর গুণাবলির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে এবং এগুলােকে সাক্ষভাবে প্রত্যক্ষ বা ইন্দ্রিয়ানুভবে জানা সম্ভব। বাহ্যবস্তু সম্পর্কে আমাদের যে জ্ঞান সে জ্ঞান প্রত্যক্ষ জ্ঞান। কেননা বাহ্য বস্তুগুলাের প্রতিনিধি বা প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে আমরা পরােক্ষভাবে জ্ঞান লাভ করি না। জ্ঞান ও জ্ঞানের বিষয়ের মধ্যে প্রতিনিধি হিসেবে মধ্যস্থতা করার জন্য কোন কিছুর স্থান নেই। বস্তুর সাথে প্রতিবিম্বের যেমন একটা সুন্দর মিল রয়েছে, ঠিক সেরূপ বস্তুর সাথে মনের ধারণার একটি সুন্দর মিল রয়েছে। সােজা কথায় বস্তু ও বস্তুনির্ভর গুণগুলাে আমাদের চেতনায় সােজাসুজি ধরা দেয় এবং বস্তু বা বস্তুনির্ভর গুণগুলাে প্রকৃতই যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি। সাধারণত, বস্তুজ্ঞান সরাসরি প্রত্যক্ষ হয় বলে এ মতবাদকে জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ বলা হয়। সরল বাস্তববাদকে সাধারণ মানুষের মতবাদ বলা হয়। কেননা সাধারণ মানুষ মনে করে যে, বস্তু হলাে মননিরপেক্ষ সত্তা এবং বস্তুর অস্তিত্ব বা প্রকৃতি মনের জ্ঞাত হওয়ার ওপর নির্ভর করে না। সাধারণ মানুষের সহজ মতকে প্রাধান্য দেয়া হয় বলে এ মতবাদকে লৌকিক বাস্তববাদ বা সাধারণ মানুষের মতবাদ বলা হয়ে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদের মধ্যে বাস্তববাদ ভাববাদের ঠিক বিরুদ্ধ মতবাদ। এমতবাদ যৌক্তিকভাবে স্বীকৃতি না পেলেও বাস্তববাদের ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।