প্রশ্নঃ পৌরনীতির আলোকে সাম্যের সংজ্ঞা দাও।

ভূমিকাঃ সাম্যের অর্থ সমান। সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে বোঝায় সব মানুষ সমান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নীতিগতভাবে, স্বীকার করা হয় যে, সকল মানুষই সমান। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব মানুষ এক সমান নয়। শারীরিক ও মানসিক গঠন এবং ক্ষমতা ও যোগ্যতার দিক থেকে একজনের সাথে অন্যজনের পার্থক্য রয়েছে। এজন্যই রাষ্ট্রের কাছ থেকে সকলেই সমান ব্যবহার দাবি করতে পারে না। একজন ডাক্তার ও একজন ঠিকাদার সমাজের কাছ থেকে সমপরিমাণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দাবি করতে পারে না।

সাম্যের সংজ্ঞা ও অর্থ (Definition and Meaning of Equality): পৌরনীতিতে ‘সাম্য’ কথাটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। পৌরনীতিতে সাম্যের অর্থ হচ্ছে ‘সুযোগ-সুবিধাদির সমতা’ (equality of opportunities)। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাকে সাম্য বলে।

অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski) বলেন, “সাম্যের অর্থ হলো প্রথমত সব ধরনের বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি এবং দ্বিতীয়ত সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত রাখা।” (Equality…. means first of all the absence of special privilege….. Equality means, and the second place, that adequate opportunities are laid open to all.)। তার মতে, সাম্যের তিনটি বিশেষ দিক রয়েছে। যথাঃ (১) বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি, (২) পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং (৩) বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়, সম্পদ ও দ্রব্যাদি জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমভাবে বণ্টন। 

বার্কার (Barker)-এর মতে, “সাম্য কথাটির অর্থ সুযোগ-সুবিধা বা অধিকার বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার পার্থক্য সৃষ্টি না করা।”

সুতরাং সাম্য বলতে মানবজীবনের সেই পরিবেশ বা প্রক্রিয়াকেই বোঝায়, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, সুষম পরিবেশ গড়ে তোলা হয় এবং সকলকে সমানভাবে আত্মবিকাশের সুযোগ প্রদান করা হয়।

উপসংহারঃ স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্বাধীনতা ও সাম্য একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য না থাকলে ব্যক্তি তথা সমাজজীবন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় না। সুতরাং স্বাধীনতা ও সাম্য বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ জন্যই বলা হয় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে রয়েছে একটি দ্বি-মাত্রিক সমগ্রতা।

Rate this post