আরজি প্রত্যাখান বা খারিজ
[Rejection of Plaint]

দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ এর আদেশ ৭ বিধি ১১ তে কি কি কারণে আরজি প্রত্যাখান (Reject) করা যায় তা বলা হয়েছে। ৭ আদেশের ১১ বিধিতে বর্ণিত ক্রটিসমূহের কোন একটি কোন আরজিতে থাকলে আদালত সেই আরজি খারিজ করে দিতে পারেন। কি কি কারণে একটি মামলার আরজি খারিজ বা প্রত্যাখান(Rejection of Plaint) হয় নিচে তা তুলে ধরা হলো:

১. যদি আরজিতে মােকদ্দমার কারণ উল্লেখ না করে(Cause of action is not disclosed) ; এ প্রসঙ্গে পিএলডি 1967 ঢাকা 279 তে মতামত প্রকাশ  করা যে, আদালত আরজি পর্যালোচনা করে যদি দেখতে পায় যে, আরজিতে কোন নালিশের কারণ উল্লেখ নাই  তাহলে আরজি নাকোচ  হবে।

 ২. যেক্ষেত্রে আরজিতে দাবীকৃত প্রতিকারের মূল্য কম করে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশ মতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা সংশােধন করতে ব্যর্থ হলে। এ প্রসঙ্গে Narayanganj Central Co-operative Sale and Supply Society Ltd. v. Mafizuddin Ahmed;AIR 1934 Calcutta 448 মামলায় বলা  হয়ে যে, বাদী মামলার সঠিক মূল্য নির্ধারণে ব্যর্থ হলে আরজি নাকোচ করা যাবে।

৩. অপর্যাপ্ত অর্থাৎ কম মূল্যের স্ট্যাম্পযুক্ত কাগজে আরজি লিখলে এবং আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাদী সঠিক স্ট্যাম্পযুক্ত পেপার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে;

৪. মােকদ্দমাটি যদি আইন দ্বারা বারিত (যেমন তামাদি দ্বারা বারিত ইত্যাদি) হলে আদালত আরজি খারিজ করে দিতে পারে।

তবে এখানে শর্ত থাকে যে,আদালত মোকদ্দমা মূল্যায়ন শুদ্ধ করার জন্য  কিংবা প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প দাখিল করার জন্য যে সময় নির্ধারণ করবেন,তা ২১ (একুশ) দিনের অধিক সময় বাড়াতে পারবেন না।

দেওয়ানী কার্যবিধির ৭ আদেশের  নিয়ম-১২তে বলা হয়েছে যে, উপরিউল্লিখিত কোন কারণে আর্জি খারিজ বা  প্রত্যাখ্যান করা হলে সেক্ষেত্রে কেন আর্জি খারিজ বা বাতিল হয়েছে তার কারণ উল্লেখ করে আদালত একটি আদেশ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।

Abul Hasnat v Ershad Ali Begum;42 DLR, 244 মামলায় বলা হয়েছে যে, আরজি প্রত্যাখানের আবেদন বিবেচনার সময় বিবাদীর দরখাস্ত নয় বরং বাদী কতর্ক উপস্থাপিত আরজি বিবেচনা করতে হবে। আদালত কেবল বাদীর মামলায় পর্যালােচনা করবেন। বিবাদী কর্তৃক লিখিত বর্ণনা এই ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচ্য বিষয় নয়।

Chairman, BIS v. Motijheel Model High School; 46 DLR 485 মামলায় বলা হয়েছে যে, আরজি প্রত্যাখানের ক্ষমতা তখনই আদালতের প্রয়ােগ করা উচিত, যখন আদালত আরজি পড়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বাদী মামলার ঘটনা প্রমাণ করতে পারলেও প্রতিকার পাবেন না।

আরজি প্রত্যাখানের আইনগত তাৎপর্য

আরজি প্রত্যাখান ও মামলা খারিজ দু’টি ভিন্ন ধারণা এবং উহাদের আইনগত তাৎপর্যও ভিন্ন। আরজি প্রত্যাখানের অর্থ হলাে বাদী যেন কোন মামলাই পূর্বে দাখিল করেননি। দেওয়ানী কার্যবিধির ৭ আদেশের ১৩ বিধি অনুযায়ী প্রত্যাখাত আরজির বাদী একই কারণে নতুন করে আরজি দাখিলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। আরজি প্রত্যাখানের যে তাৎপর্যের দু’টি দিক আছে। বেল্লিসার মােহিনী মােহন হাই স্কুল বনাম অধ্যাপক মােহাম্মদ খােরশেদ মিয়া দিং [২০ বিএনডি (হাইকোর্ট বিভাগ) ৩৬৬] মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ এ দুটি দিকের কথাই উল্লেখ করেছেনঃ

প্রথমতঃ সদ্যোজাত ক্রটিপূর্ণ মামলা সাথে সাথেই কবরস্থ করা উচিত, যাতে অতিরিক্ত সময় নষ্ট না হয় বা নিষ্ফল মােকদ্দমায় অপ্রয়ােজনীয় খরচ না হয়।

দ্বিতীয়তঃ বাদীকে আগেভাগেই পদক্ষেপ গ্রহণের সুযােগ খোঁজার সুবিধা করে দেয়া। যাতে সে সঠিকভাবে মামলা গঠন করে উপযুক্ত প্রতিকার দাবী করতে পারে।

আরজি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকারঃ

আরজি প্রত্যাখানের আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ বাদী-

(১) তামাদি আইনে বারিত না হলে দেওয়ানী কার্যবিধির ৭ আদেশ ১৩ বিধি অনুযায়ী নতুন করে মামলা করতে পারবে।

(২) দেওয়ানী কার্যবিধির ২(২) ধারায় ডিক্রীর যে সংজ্ঞা প্রদত্ত হয়েছে তাতে আরজি প্রত্যাখানও ডিক্রীর অন্তর্ভুক্ত। তাই কার্যবিধির ৯৬ ধারামতে আরজি প্রত্যাখানের। বিরুদ্ধে আপীল করা যেতে পারে।

(৩) Radha Rani Sadhu Vs Durga Rani Adhikari 47 DLR (HCD), 360 মামলায় মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, দেওয়ানী কার্যবিধির আদেশ ৭ বিধি (খ) অথবা (গ) তে আরজি প্রত্যাখান করা হলে তার বিরুদ্ধে আপীল আদালতে প্রতিকার পাওয়া কঠিন হবে। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট আদালত ১৫১ ধারার ক্ষমতাবলে বাদীর আরজি পুনরুজ্জীবিত করতে পারে যদি কার্যবিধির ১৪৯ ধারামতে সমুদয় কোর্ট ফি দিয়ে এসে বাদী মােকদ্দমার পুনরুজ্জীবিত প্রার্থনা করে।

Rate this post