শৈশবে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আক্রমণ ধর্মী মনোভাব। কোন। শিশু যখন অন্য শিশুদের অকারণে আক্রমণ করে, মারধর করে কিংবা কোন নিষ্ঠুর আচরণ করে, তাকে আক্রমণ ধর্মিতা বলে। এরকম নিষ্ঠুর আচরণ করে সে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। আক্রমণধর্মিতার কারণসমূহ মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথাক্রমে – (১) ব্যক্তিগত কারণ, (২) বিদ্যালয়ভিত্তিক কারণ।

(১) নিরাপত্তাহীনতা: বাড়িতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাব। পিতা-মাতার মধ্যে নিত্য ঝগড়া, তাদের আলাদা থাকা ইত্যাদি কারণে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নিরাপত্তাহীনতা থেকে আক্রমণ ধর্মী মনোভাব তৈরি হয়।

(২) অনাদর : যথাযথ স্নেহ-ভালোবাসার অভাব ঘটলে এই ধরনের আচরণ করে। বিশেষ করে পিতা-মাতার কাছে অবহেলিত হওয়া।

(৩) চাহিদা পূরণ না হওয়া : শৈশবের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক চাহিদাগুলি যথাযথ পূরণ না হওয়া ইত্যাদি।

(৪) শারীরিক সমস্যা : মাদক সেবন, কোনাে মানসিক রোগ জনিত কারণে, মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

(৫) শিক্ষকের অবহেলা : কোন শিশুর প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকার ক্রমাগত অবহেলা, হেয় করা, অন্যদের পক্ষপাতিত্ব করা সকল আচরণ আক্রমণাত্মক করে তােলে।

(৬) গুরুজনদের অধিক প্রত্যাশা : শিশুর প্রতি পরিবারের সদস্যদের এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অতিরিক্ত প্রত্যাশা শিশুদের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা শিশুকে ক্ষিপ্ত করে তােলে দিনে দিনে।

কোনো শিশুর আক্রমণ ধর্মী স্বভাব দেখে প্রথমেই তার কারণ নির্ণয় করতে হবে। কারণ না জানলে সমাধান সম্ভব নয়। প্রতিকারের প্রধান উপায় গুলি হল—

(১) শিশুর প্রতি ভালো ব্যবহার : শিশুর সঙ্গে ভালোবাসাপূর্ণ, বন্ধুত্বমূলক আচরণ করতে হবে। শিশুর প্রতি পিতা-মাতাকে যথেষ্ট স্নেহশীল এবং যত্নবান হতে হবে।

(২) চাহিদা পূরণ করা : শৈশবের শারীরিক ও মানসিক চাহিদাগুলি পূরণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

(৩) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ : বিভিন্ন রকম সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী তে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। এর ফলে সে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে।

(৪) সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত করা : নানারকম সৃজনশীল কাজে শিশুকে যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৫) নির্দেশনা ও পরামর্শ ব্যবস্থা : প্রয়োজনে যথাযথ নির্দেশনা ও পরামর্শদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা : শিশুটি যাতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়, হীনমন্যতায় না ভাঙ্গে, তার উপায় অবলম্বন করতে হবে।

(৭) সাংস্কৃতিক ও সহপাঠক্রমিক শিক্ষা : শিশুর অন্তর্নিহিত গুণের বিকাশ ঘটাতে তাকে নাচ, কবিতা, ভাষ্যপাঠ, গান, নাটক ইত্যাদি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশীদার করতে উৎসাহ দিতে হবে। এর ফলে শিশুদের জড়তা কাটবে। মনের স্বাভাবিকত্ব আসবে।

উল্লেখিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দিয়ে শৈশবে যে-কোনো শিশুর আক্রমণ ধর্মিতাকে আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে, এর জন্য অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শিশুদের প্রতি আরও একটু সচেতন এবং যত্নবান হতে হবে।

Rate this post