প্রশ্নঃ লোক প্রশাসনের আওতা বা পরিধি বা বিষয়বস্তু বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ  লোক প্রশাসনের আওতা বা বিষয়বস্তু অত্যন্ত ব্যাপক। কি ব্যক্তিগত জীবনে, কি স্থানীয় জীবনে জাতীয় জীবনে লোক প্রশাসনের প্রভাব অত্যন্ত সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নীতি বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের সমস্যাবলিই এর আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের কার্যক্ষেত্র যতদূর বিস্তৃত লোক প্রশাসনের পরিধিও ততটুকু বিস্তৃত অধ্যাপক এল.ডি. হোয়াইট (Professor L. D. White) তাই যথার্থই বলেছেন, “In their broader context, the ends of administration are the ultimate object of state itself the maintenance of peace and order, the progressive achievement of justice, the instruction of the young, protection against disease and insecurity, the adjustment and compromise of conflicting groups and interests- in short, the attainment of good life.” [White, L. D., Introduction to the Study of Public Administration, p. 3.] 

সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সংগঠনের আলোচনা (The study of governmental organisation) লোক প্রশাসনের আওতা বা বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত; কারণ সরকারি সংগঠন এবং লোক প্রশাসন একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লোক প্রশাসন পাঠ সরকারি সংগঠনের স্বরূপ ও কাজ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান করে। কিভাবে সরকার সংগঠিত হয়েছে, সরকারের শাসনতান্ত্রিক কাষ্ঠামোই বা কি— শাসনতন্ত্র লিখিত, না অলিখিত, সুপরিবর্তনীয় না দুষ্পরিবর্তনীয়, এককেন্দ্রিক বা যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষমতা কিভাবে বণ্টন করা হয়েছে; শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা কি প্রেসিডেন্ট অথবা অপর একজন প্রধান নির্বাহীর হাতে অথবা একটি কেবিনেটের হাতে; সরকারের বিভাগসমূহের মধ্যে অর্থাৎ আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে কি ধরনের সম্পর্ক; কোথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত রয়েছে এবং রাজা, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রিবর্গ, কেবিনেট, আইনসভা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ও স্থায়ী কর্মচারিবৃন্দ, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন সুসংগঠিত পেশাগত গ্রুপ, সাংগঠনিক এবং জনগণের তুলনামূলক মর্যাদা ও ক্ষমতা ইত্যাদি এটি আলোচনা করে।

রাজনৈতিক কার্যাবলি (Political Functions) এবং প্রশাসনিক কার্যাবলির (Administrative Functions) সুষ্ঠু পর্যালোচনা লোক প্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। ডিমকের (Dimock) ভাষায়, “রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লোক প্রশাসনকে বুঝার একমাত্র চাবিকাঠি (An understanding of politics is the key to an understanding of Public Administration.) রাজনীতি হল ক্ষমতা অর্জন এবং ক্ষমতার ব্যবহার। ক্ষমতাই রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ক্ষমতা কোন স্পর্শনীয় বস্তু (Tangible thing) নয়; এটি একপ্রকার সম্পর্ক (Relationship)। কেউ ক্ষমতা দাবি করবে, আর অন্যরা সে দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে রাজনীতি হতে সরকারকে কখনও বিচ্ছিন্ন করা যায় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভী. ও. রাজনীতিকে সাধারণভাবে বিভিন্ন প্রকার সরকারের ক্রিয়াকলাপের সাথে একত্র করে বিচার করেছেন; শাসিতের উপর তাদের প্রভাব, তাদের কর্মপদ্ধতি এবং শাসক শ্রেণীর ক্ষমতা অর্জন ও রক্ষা করার উপায় বলে উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক কার্যাবলির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, উহারা দলীয় কার্যাবলি। পক্ষান্তরে একজন প্রশাসকের কাজ হল আইন সভা বা পার্লামেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত উপায়ে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন করা। অধ্যাপক উইলোবীর (Professor Willoughby) কথায়, “Administrative function is the function of actually administering law as declared by the legislative or interpreted by the judicial branches of the government.” তথাপি একজন প্রশাসককেও কিছু কিছু রাজনৈতিক কাজ সম্পাদন করতে হয়, বিশেষ করে যখন তিনি স্থায়ী কর্মসূচি পরিচালনা করেন এবং এর পক্ষে আইন সভার অনুমোদন লাভের জন্য স্থায়ী উপায় বা কর্মকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। শুধু আইন সভার নিকট হতেই নয়, একজন প্রশাসককে তার নিজস্ব সংগঠনের কর্মীদের নিকট হতে, অন্যান্য সরকারি সংস্থার নিকট হতে এবং জনগণের নিকট হতে সমর্থন লাভ করতে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, লোক প্রশাসন একাধারে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজ নিয়ে আলোচনা করে।

এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল সাংগঠনিক বিষয়াদি ও ঘটনাবলি শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর অভ্যন্তরে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক শক্তিসমূহ, পারস্পরিক প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক সংগঠন সংক্রান্ত অপরাপর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ লোক প্রশাসনের বিষয়স্তুর অংশবিশেষ এখন প্রশ্ন হল, প্রশাসনিক সংগঠন বলতে আমরা কি বুঝি? বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে প্রশাসনিক সংগঠনের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তবে তাদের মধ্যে জেমস ডি. মুনের (James D Mooney) ব্যাখ্যা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। তার মতে, “সংগঠন কোন অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গঠিত একটি মানবীয় প্রতিষ্ঠান। “(The form of every human association for the attainment of á common purpose.)” [James D. Mooney, The Principles of Organisation, Chapter 1. p. 1] 

যদি কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশাসনিক সংগঠনের উদাহরণ হিসেবে নেওয়া হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের সংগঠনে অনেকগুলো ইউনিট আমরা দেখতে পাই। এগুলো হল— (ক) বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, (খ) বিভাগ, (গ) ডিভিশন, (ঘ) সংশ্লিষ্ট অফিস, (ঙ) অধস্তন অফিস এবং (চ) আঞ্চলিক অফিসসমূহ) প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংগঠন করার দু’টি প্রধান নীতি রয়েছে; যেমন- (১) পদ সোপান নীতি (Principle of Hierarchy)— যার মাধ্যমে সংগঠনের ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মচারীদের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় এবং একজন ঊর্ধ্বতন কর্মচারী মন্ত্রণালয়ের কাজ তদারক করেন। (২) কলেজিয়াম নীতি। (Principle of Collegtum) – যার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কাজ একজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি সম্পন্ন না করে সকলে মিলে সম্পন্ন করে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সদস্য একে অপরের সহকর্মী; কেউ উর্ধ্বতন অথবা কেউ অধস্তন নয়৷

প্রশাসনিক ইউনিটগুলো মোটামুটিভাবে চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে; যথা— উদ্দেশ্যভিত্তিক (Purpose), কর্ম— পদ্ধতিভিত্তিক (Work-Process), সম্প্রদায়ভিত্তিক (Clientele) এবং স্থানভিত্তিক (Territory)।

প্রশাসনিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার অপর একটি টেকনিক্যাল বিষয় হল ফিল্ড অফিস (Field office) সৃষ্টি করা। সরকারের সব কাজ হেডকোয়ার্টারে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। কাজেই দেশের বিভিন্ন অংশে ফিল্ড অফিস প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। সুষ্ঠু প্রশাসন ব্যবস্থার জন্য হেডকোয়ার্টার এবং ফিল্ড অফিসের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।

অবশ্য এ ক্ষেত্রে দু’টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দেয়। প্রথমত, সরকারি বিভাগের সংখ্যা যত কম হয় ততই মঙ্গল। দ্বিতীয়ত, এসব বিভাগের অধস্তন অফিসের সংখ্যাও অনুরূপভাবে কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর যদি তা না হয় এবং বিভাগ ও তাদের অধস্তন অফিসের সংখ্যা অসংখ্য হয়, তাহলে কাজের সমন্বয়জনিত সমস্যা খুব প্রবল হয়ে দেখা দিবে।

প্রশাসনিক সংগঠনের অপর একটি বিশেষ দিক হল এই যে, প্রশাসনিক উপ-বিভাগ এবং অধস্তন অফিসসমূহে ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর (Delegation) করা। দায়িত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করার দুটি প্রধান নিয়ম রয়েছে। প্রথমত, যার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে সে উক্ত ক্ষমতা কার্যকর করতে সমর্থ কিনা তা যাচাই করা। দ্বিতীয়ত, যে বিষয়ের জন্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে তা নির্ধারণ করা।

অর্থ প্রশাসনঃ অর্থ প্রশাসনও লোক প্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত অর্থ প্রশাসন লোক প্রশাসনের একটি প্রয়োজনীয় অংশবিশেষ। সরকারের যে কোন কাজ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ একান্ত অপরিহার্য। অর্থ ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয় এবং সরকার অর্থ ব্যতীত এক পা-ও অগ্রসর হতে পারে না। অধ্যাপক ডিমক ও ডিমক (Dimock and Dimock) তাই যথার্থই বলেছেন যে, “বায়ুর জন্য যেমন অক্সিজেন ঠিক তেমনি প্রশাসনের জন্য হল অর্থ। “(Finance is as intrinsic to administration, as oxygen is to air.)” প্রশাসন ও অর্থের সাথে নিবিড় সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক এল.ডি. হোয়াইট (Professor L. D. White) বলেন যে, অর্থকে প্রশাসন হতে আলাদা করে বিচার করা যায় না; তারা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত; যেমন করে মানুষের সাথে তার ছায়া অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সুতরাং বলা যায় যে, অর্থ প্রশাসনের আত্মিা (Heart) এবং এটি লোক প্রশাসনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷

কর ও বাজেট প্রশাসন (Revenue Administration Budget Administration): কর প্রশাসন, বাজেট প্রশাসন এবং নিরীক্ষা ও হিসাব পদ্ধতি (Audit and Accounting methods) অর্থ প্রশাসনের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত চিত্র অর্থ প্রশাসনের বহুবিধ সংস্থা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় (Ministry of Finance) বাজেট তৈরি করে আর কেবিনেট বা মন্ত্রিপরিষদ সে বাজেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তদারক এবং তাতে অনুমোদন দান করে। অতপর একে আইন সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং পরিশেষে এর উপর বাজেট আলোচনা (Budget Discussion) অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষাকারী সংস্থা (Audit and Accounts Agency) সরকারি অর্থ সঠিকভাবে খরচ করা হচ্ছে কিনা এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখে।

কর্মচারী প্রশাসন (Public Personnel Administration): কি প্রশাসনের অপর একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হল সরকারি কর্মচারী প্রশাসন (Public Personnel Administration)। কর্মচারী প্রশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। বলাবাহুল্য, একটি সুষ্ঠু কর্মচারী প্রশাসন পদ্ধতির উপর সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে। যদি কর্মচারী প্রশাসন পদ্ধতিকে সঠিকভাবে সংগঠিত না করা যায় এবং যদি কর্মচারিগণ সংগঠনের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে কেবল নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এবং যদি তারা অসদুপায় অবলম্বন করে তাহলে সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থাই ভেঙ্গে পড়তে পারে এই সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ পদ্ধতি (Recruitment Policy) কর্মচারী প্রশাসনের একটি উত্তম হাতিয়ার, যার মাধ্যমে কর্মচারিগণ প্রশাসন ব্যবস্থায় নিযোগ লাভ করে থাকে। আবির নিয়োগকৃত কর্মচারীদের জন্য সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা (Sound System of Training) থাকা আবশ্যক । এটি ছাড়া কর্মচারীদের চাকরির সাধারণ শর্তাবলি, তাদের বেতন কাঠামো, প্রমোশন বা পদোন্নতির পদ্ধতি, অবসরগ্রহণজনিত ভাতা প্রভৃতি কর্মচারী প্রশাসনের আওতাভুক্ত। তদুপরি কর্মচারী ইউনিয়ন ও সংগঠনসমূহের কাজ ও নিয়মানুবর্তিতা, আমলাতন্ত্রের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনিক কার্যাবলির বিচার বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কর্মচারী প্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্গত।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা (Administrative Management): প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও লোক প্রশাসন আলোচনা করে। পদ্ধতিগত উপায়ে কোন কাজ সম্পন্ন করার অর্থই ব্যবস্থাপনা। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন (Co-ordinating) করাই ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংগঠনের সমস্যাবলি (Organization problem) দূরীকরণে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উপরন্তু, বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও সংস্থার কর্মচারী ব্যবস্থাপনায় তা আর্থিক অপচয় (Financial wastage) রোধ করে। এক কথায়, মানুষের কল্যাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের সম্পদের বই ব্যবহার ও পরিচালনা করার নামই প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা। লোক প্রশাসনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অত্যাধিক।

পরিকল্পনা (Planning): লোক প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফলে এটি লোক প্রশাসনের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত না হয়ে পারে না। (পরিকল্পনা ও প্রশাসনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। সরকারি প্রশাসক ও কর্মকর্তাগণই পরিকল্পনা তৈরি ও কার্যকর করে থাকেন। এভাবে যারা সরকারি পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করার কাজে নিয়োজিত তারাই সরকারি প্রশাসক বলে – পরিগণিত হন। পরিকল্পনার আসল অর্থ হল, “অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের বিকল্প চাহিদা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সীমিত সম্পদ নিয়োজিত করা।” “ ( Planning means an allocation of the scarce and limited resources among alternative demands and desires on the basis of a scale of priority.)” এতে দেশের জনশক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অর্থনৈতিক সম্পদের তালিকা লিপিবদ্ধ থাকে। এটি দেশের অতীত এবং বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে কি করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে। যে কোন পরিকল্পনার জন্য সঠিক স্বীকৃত সত্য (Correct data) এবং পরিসংখ্যান (Statistics) একান্ত অপরিহার্য। বস্তুত প্রশাসন ও পরিকল্পনা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই প্রশাসনিক সংগঠনের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করতে হয়।

প্রশাসনিক আইন (Administrative Law): প্রশাসনিক আইন লোক প্রশাসনের বিষয়বস্তুর অপর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। প্রশাসনিক সংস্থার কাজ পরিচালনা করার জন্য কোন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যেসব আইন ও নিয়মাবলি ঘোষণা ও কার্যকর করে থাকে তাকেই প্রশাসনিক আইন বলা হয়। লোক প্রশাসন ও প্রশাসনিক আইনকে পৃথকভাবে বিচার করা যায় না। মোটামুটিভাবে লোক প্রশাসন সংক্রান্ত যাবতীয় আইনকে প্রশাসনিক আইন বলে অভিহিত করা যায়। অধ্যাপক ডব্লিউ. এ. রবসন (Professor W. A. Robson) তাই যথার্থই বলেছেন যে, “লোক প্রশাসনের সাথে সম্পর্কযুক্ত সব আইনই বাস্তবিক পক্ষে প্রশাসনিক আইন বলে স্বীকৃত। “Administrative law is recognized to be no more or no less than the law relating to public administration.)” জেনিংস (Jennings) বলেন, “প্রশাসন ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পর্কযুক্ত আইনই হল প্রশাসনিক আইন।” “(Administrative law is the law relating to administration, powers and duties of administrative authorities.)” আবার অধ্যাপক ওয়েড এবং ফিলিপস (Professor Wade and Philiphs) মন্তব্য করেন যে, “প্রশাসনিক আইন মূলত বিচার বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ অথবা হস্তান্তরিত আইন নিয়ে আলোচনা করে না বরং এটি প্রশাসন নিয়ে আলোচনা করে।” “(Administrative law is primarily concerned not with judicial control nor even with legislation by delegation, but with administration.)”

Rate this post