1923 সালে কর্ণাটকের ভদ্রা নদীর তীরে দক্ষিণ ভারতের প্রধান ইস্পাত কারখানাটি স্থাপিত হয়। স্বাধীনতার আগে এর নাম ছিল মাইসাের আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড। ভারত সরকারের অধিগ্রহণের পর এর নাম হয় বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্ল্যান্ট। এটি ভারতের সংকর ইস্পাত উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই কারখানা গড়ে ওঠার কারণগুলি হল一
[1] আকরিক লোহা : বাবাবুদান পাহাড় থেকে আকরিক লােহার জোগান পাওয়ার সুবিধা।
[2] জ্বালানি : স্থানীয় বনভূমি থেকে প্রচুর কাঠ পাওয়ার সুবিধা।
[3] চুনাপাথর ও ডলােমাইট : তুমকুর, বাগলাকোট থেকে চুনাপাথর ও ডলােমাইট পাওয়ার সুবিধা।
[4] ম্যাঙ্গানিজ : শিমােগা ও চিত্রদুর্গ অঞ্চল থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা।
[5] বিদ্যুৎশক্তি : শিবসমুদ্রম ও শিমসা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জলবিদ্যুতের জোগান পাওয়ার সুবিধা।
[6] সুলভ শ্রমিক : স্থানীয় সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা।
[7] পরিবহণ ব্যবস্থা : দক্ষিণ রেলপথের মাধ্যমে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা পাওয়ার সুবিধা।
[8] উন্নত বন্দর : নিউ ম্যাঙ্গালাের এবং কোচি বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য পাওয়ার সুবিধা ইত্যাদি।
বর্তমানে ভারতের আটটি লৌহ ইস্পাত কারখানার মধ্যে ছয়টি কারখানাই পূর্ব ও মধ্য ভারতে অবস্থিত। প্রধান কারখানাগুলি হল-পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, বার্নপুর-কুলটি, ঝাড়খণ্ডের বােকারাে, জামশেদপুর, ওড়িশার রাউরকেলা এবং ছত্তিশগড়ের ভিলাই। এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য মাঝারি ও ছােটো মাপের ইস্পাতকেন্দ্র। পূর্ব ভারতে বেশি পরিমাণে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের সঞ্চয় আছে, তাই পূর্ব ও মধ্য ভারতেই অধিকাংশ লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। নীচে এই শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি উল্লেখ করা হল一
[1] আকরিক লােহা : বিহারের সিংভূম, ওডিশার ময়ূরভঞ্জ, ছত্তিশগড়ের বাইলাডিলা প্রভৃতি অঞ্চলে উচ্চমানের ম্যাগনেটাইট ও হেমাটাইট জাতীয় আকরিক লােহা উত্তোলিত হয় যা এই অঞ্চলের ইস্পাত কারখানায় ব্যবহৃত হয়।
[2] কয়লা : দামােদর অববাহিকা ভারতের শ্রেষ্ঠ কয়লা-উত্তোলক অঞ্চল। এই অঞ্চলের ঝরিয়া, বােকারাে, গিরিডি, ডালটনগঞ্জ এবং ওডিসার তালচের প্রভৃতি কয়লাক্ষেত্র থেকে প্রচুর পরিমাণে বিটুমিনাস জাতীয় কয়লা উত্তোলন করা হয়, যা থেকে লােহাইস্পাতের প্রয়ােজনীয় কোক কয়লা প্রস্তুত হয়।
[3] চুনাপাথর, ডলােমাইট ও ম্যাঙ্গানিজ : এই অঞ্চল চুনাপাথর, ডলােমাইট ও ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি উৎপাদনে বিখ্যাত। ওডিশার বীরমিত্রপুর থেকে চুনাপাথর; গাংপুর ও সুন্দরগড় থেকে ডলােমাইট; কোরাপুট, কালাহান্ডি ও গাংপুর থেকে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়ার সুবিধা।
[4] জল সরবরাহ : এই অঞ্চলে প্রবাহিত দামােদর, সুবর্ণরেখা, মহানদী, ব্রায়ণী প্রভৃতি নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করে জলের সরবরাহ সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
[5] বিদ্যুৎ : এই অঞ্চলে দামােদর অববাহিকায় স্থাপিত হয়েছে। তিলাইয়া, মাইথন, পাঞেৎ ও হীরাকুঁদ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তা ছাড়া, NTPC ও রাজ্য সরকারগুলি দ্বারা স্থাপিত বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ (দুর্গাপুর, পত্রাতু, বােকারাে প্রভৃতি) কেন্দ্র থেকে প্রয়ােজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
[6] পরিবহণ : এই অঞ্চল পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মাধ্যমে এবং 2, 6, 23, 33 নং জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত। ফলে, খনি অঞ্চল থেকে কাঁচামাল আমদানির যেমন সুবিধা হয়, তেমনি উৎপন্ন ইস্পাত রপ্তানির ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়।
[7] শ্রমিক : এই অঞ্ল ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় সুলভ শ্রমিকের অভাব হয় না। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাকেন্দ্র। ফলে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ শ্রমিকেরও অভাব নেই।
[8] বন্দর : এই অঞ্চলের কাছেই রয়েছে কলকাতা, হলদিয়া, পারাদ্বীপ, বিশাখাপত্তনম বন্দর। ফলে যন্ত্রপাতি আমদানি এবং ইস্পাতের বহির্বাণিজ্যে কোনাে অসুবিধা হয় না।
[9] চাহিদা : হাওড়া-হুগলি শিল্পাঞ্চল ও রাঁচি-হাতিয়া শিল্পাঞ্চল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের কেন্দ্র হওয়ায় ইস্পাতের চাহিদা খুব বেশি।