প্রশ্নঃ ভাববাদ কাকে বলে?
অথবা, ভাববাদ কি?
অথবা, Idealism কাকে বলে?

ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা মানা আচরণের ভালত্ব-মন্দত্ব, ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু এই আচরণ সমাজবিহীন মানুষের আচরণ নয়। নৈতিকতার ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। সমাজবিহনি ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ব বা বাধ্যবাধকতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কেননা নৈতিকতাসম্পর্কীয় সমস্যা সমাজবদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্তির সাথে সমাজের সম্পর্ক রয়েছে এবং এ বিষয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভাববাদ (Idealism): ভাববাদ অনুসারে ব্যক্তির সাথে সমাজের সম্পর্ক। হচ্ছে একটা আধ্যাতিক সম্পর্ক হেগেল, গ্রীন, কায়ার্ড প্রমুখ নীতিবিদগণ এই মতবাদের দৃঢ়সমর্থক। তারা মনে করেন যে, সমাজ মানুষের কৃত্রিম সমষ্টি বা আত্মচেতনাহীন সামাজিক ঐক্য নয়। সমাজ হলো পরস্পর নির্ভরশীল মানুষের জনকল্যাণ সাধনের এক আদর্শভিত্তিক সংগঠন। এই সমাজের মাধ্যমেই মানুষ তার আধ্যাত্মক জীবনকে বিকশিত করে তুলতে পারে। এর মাধ্যমেই সে বুদ্ধি বিবেচনার কল্যাণে আত্মসম্ভোগ হতে আত্মত্যাগে গমন করে আত্মপলদ্ধি লাভ করতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সমাজ জীবদেহের মত এক আঙ্গিত ঐক্য নয় অথবা আত্মচেতনাবিহ কোনো সংগঠন ও নয়। এ হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত এক বৃহত্তর ঐক্য যা মানুষের আধ্যাতিক জীবন বিকাশে সহায়ক। সমাজে ব্যক্তি মানুষ উপায় বা মাধ্যম এবং উদ্দেশ্য উভয়ই। সমাজের জন্য ব্যক্তির অস্তিত্ব আবার ব্যক্তির জন্য সমাজের অস্তিত্ব। ব্যক্তি যেমন সমাজ গঠন করে তেমনি সমাজও ব্যক্তিকে গড়ে তোলে। বস্তুত ব্যক্তির প্রগতি ও সমাজের প্রগতি পরস্পর নির্ভরশীল। সমাজ ও ব্যক্তি সম্পর্কিত এই ভাববাদী মতবাদ আধ্যাত্মবাদের মাপকাঠিতে সন্তোজনক।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্কবিষয়ক মতবাদ হিসেবে ভাববাদ যদিও পরিপূর্ণ নয় তথাপি এটি ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদের সমন্বয় সাধন করেছে। এদিক থেকে এটি সন্তোষজনক এবং নীতিবিদ্যায় আলোচনার এ মতবাদের গুরুত্ব অপরিসীম।

Rate this post