প্রশ্নঃ GAD কি? GAD সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর। 

অথবা, GAD বলতে কী বুঝ? GAD সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানা তত্ত্ব, নীতি ও কর্মসূচির আবির্ভাব ঘটতে থাকে। আর ‘আধুনিকীকরণ তত্ত্ব’ মৌলিক চাহিদা পূরণ তত্ত্ব, কাঠামোগত পূর্ণবিন্যাস তত্ত্ব ইত্যাদি এসবেরই অন্তর্গত। তেমনি একইভাবে নারী বিষয়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিন্তাধারার সংযোজন ঘটেছে। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের নারী উন্নয়ন নীতিমালার উদ্ভব ঘটেছে । যার মধ্যে GAD এবং WAD অন্যতম। এই উন্নয়ন নীতিমালা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ করছে।

জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট (Gender and Development – GAD):

উৎপত্তি (Origin): জেন্ডার এবং উন্নয়ন (GAD) ধারণাটি WID এবং WAD এর বিকল্প হিসেবে ১৯৮০ এর দশকে উদ্ভব হয়। GAD জেন্ডার, শ্রেণি, বর্ণ ও উন্নয়নের মধ্যে সংযোগ ও সংঘাত উদ্ঘাটন করে।

 

তত্ত্বগত দিক (Theoritical Basis): সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত। সমাজতন্ত্রী নারীবাদীরা সামাজিক গঠন এবং পূনরুৎপাদনকেই নারী নিপীড়নের ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা নারী এবং পুরুষের মধ্য ক্ষমতা সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টিপাত করে এবং বিভিন্ন সমাজে পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রচলিত ভূমিকার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

মনোযোগ (Focus): নারীর জীবনের সকল ক্ষেত্রের সামগ্রিক উপলব্ধিগত দৃষ্টিভঙ্গি দাবি করে। নারী পুরুষের প্রচলিত ভূমিকা নির্ধারণের ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।

সহায়ক কর্ম কৌশল (Accompanying Strategies): 

(১) শ্রেণি সংহতির কথা বলে কিন্তু শ্রেণি বিভক্তিকে অস্বীকার করে না।

(২) সামাজিক সেবা এবং এ সংক্রান্ত সামাজিক অবকাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে নারী মুক্তিকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।

(৩) সামাজিক পরিবর্তন এবং সমাজের বর্তমান নারী-পুরুষের মধ্যকার ক্ষমতা সম্পর্ক পুনঃ বিন্যাসের দাবি করে, যা বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি করবে।

 

ধারণা (Assumption): হস্তক্ষেপমূলক দৃষ্টিভঙ্গিঃ সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতা নারীর সীমিত, তাই রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। জেন্ডারের সামাজিক সম্পর্কের পূণঃবন্টন জরুরি বলে মনে করা হয়। পরিবর্তন ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে নর-নারীরা নিজেরাই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ এবং নিয়ন্ত্রক হবে। শ্রেণি নির্বিশেষে নারীর সংহতি শুধু সম্ভাবনা নয়, আশু প্রয়োজনও বটে। নারীরা এককভাবে কাজ করতে পারে নাই, তাই তাদের পুরুষের সাথে সংযোগ প্রয়োজন।

অবদান (Contribution): শুধুমাত্র নারি স্বাধীনতার উপর বিশেষভাবে জোর দেয় না, অনুভূতিপ্রবণ মানুষের অবদানকেও স্বাগত জানায়। GAD অর্থনৈতিক উৎপাদনসমূহ গৃহের ভেতর ও বাইরের কাজের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।

 

বৈশিষ্ট্য (Features): GAD সরকারি ও বেসরকারি দ্বি-বিভাজনকে পরিত্যাগ করে GAD তথাকথিত ব্যক্তিগত সম্পত্তির বদৌলতে পরিবারে নারীর ওপর নিপীড়নের দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। নারী মুক্তি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সামাজিক সেবা প্রদানে রাষ্ট্রীয় কর্তব্যের ওপর জোর দেয়। নারীকে উন্নয়নের সহায়ক বা পরোক্ষ অংশিদাররূপে নয় বরং পরিবর্তনের প্রতিনিধি হিসেবে দেখে আরো কার্যকর রাজনৈতিক মুখপাত্র হবার জন্য নারীদের নিজেদের সংগঠিত হবার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। GAD সমাজের পুরুষ ও নারীর মধ্যকার বর্তমান ক্ষমতা সম্পর্কের পুর্নবিন্যাসের প্রেক্ষিতে কথা বলে।

 

সীমাবদ্ধতা (Limitations): 

(১) বাস্তবায়ন কঠিন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সৃষ্টি হবে।

(২) সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তনের দৃঢ় অঙ্গিকার দাবি করে।

(৩) নারীদের নিজেরাই তাদের শ্রেণিগত স্বার্থের সংঘাত এবং সেই সাথে অন্যান্য আদর্শগত সংঘাত মিটমাট করা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মধ্যে GAD অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। GAD সমাজের প্রতিটি বিষয়কে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করে। উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও নারী উন্নয়নকে বিচ্ছিন্ন মনে করা হয় না GAD পদ্ধতিতে। বরং উন্নয়নের ক্ষেত্র থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কে লাভবান হচ্ছে বা নারী পুরুষের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা GAD নীতি। তাই GAD একটি সর্বজনীন বিষয়।

Rate this post