পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিতে লেখা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে একদিন ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যুর এক বীভৎস দৃশ্য দেখে ফেলে। এই দৃশ্য তাকে এমনই বিপর্যস্ত করে দেয় যে, ক্রমে ক্রমে সে ভেতরে বাইরে পালটে যেতে থাকে। প্রথমে নিজের খাবারের বরাদ্দ কমিয়ে এবং তারপর মাইনের পুরােটা ত্রাণ তহবিলে দান করেও তার হতাশা কাটে না। এরপর ক্রমে ক্রমে সে নিজের পেশা, পরিবার ও সমাজ সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে পড়ে কলকাতা শহরের ফুটপাথ ও লঙ্গরখানাগুলিতে ঘুরে ঘুরে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের লক্ষ করতে থাকে। এইভাবে একদিন সে জীবনের সব কিছুকে ত্যাগ করে ফুটপাথবাসীতে পরিণত হয়। সিল্কের জামা ও ধুতির বদলে ছেড়া ন্যাকড়া পরে, খালি গায়ে, একমুখ দাড়ি-গোঁফ নিয়ে সে মগ হাতে লঙ্গরখানায় যায়। সেখানে কাড়াকাড়ি করে সে খিচুড়ি খায় এবং বাকি সময়টা ফুটপাথে পড়ে থাকে। অনাহারী ফুটপাথবাসীদের মতােই সেও একদিন একঘেয়ে সুরে বলতে শুরু করে- “গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও।”
সুতরাং গল্পটিতে নায়ক মৃত্যুঞ্জয় মধ্যবিত্তের খােলস ত্যাগ করে অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের সঙ্গে যে মিশে যেতে পেরেছে এটি চরিত্রটির ইতিবাচক দিক। কিন্তু ওইসব মানুষগুলিকে প্রতিরােধ-সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে সে যে সচেষ্ট হয়নি- এটি চরিত্রটির নেতিবাচকতা। নিজের পেশা-সংসার ত্যাগ করলেও মৃত্যুঞ্জয় কিন্তু প্রতিবাদ হীনতার গড্ডলিকা-প্রবাহেই গা ভাসিয়ে দিয়েছে। সুতরাং গল্পটি ‘মৃত্যুঞ্জয়ের বিকারেরই সার্থক শিল্পরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।