প্রশ্নঃ ট্রেডমার্ক ট্রাফিকিং কী? এ্যাসাইনমেন্ট ও ট্রান্সমিশনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। লাইসেন্সিং সম্ভব কি? গুডউইল কী তা ব্যাখ্যা কর। 

What is Trafficking in Trade Mark? Distinguish between assignment and transmission: Is licensing possible? Explain what is good will.

ট্রাফিকিংঃ ট্রেডমার্কে ‘ট্রাফিকিং’ শব্দটির যথার্থ সংজ্ঞা দেওয়া নেই। তবে সাধারণত পণ্যকে ব্যবসায় জগতে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে ট্রেডমার্ক না দিয়ে পণ্যের ওপর তার অধিকার বা কর্তৃত্ব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ট্রেডমার্ক ব্যবহার করলে তাকে ট্রেডমার্কে ট্রাফিকিং বলা হয়। পণ্যের সাথে পণ্যের মালিকের সাথে লাইসেন্স গ্রহীতার যদি কোনো প্রকৃত ব্যবসায়িক সম্পর্ক না থাকে সেক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রদান করা হলে তা হচ্ছে মার্কে ট্রাফিকিং। যেক্ষেত্রে এক বা একাধিক শ্রেণির পণ্যের ট্রেডমার্কের নিবন্ধনের জন্য দরখাস্ত করা হয় কিন্তু প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যবসায় নয় বরং তা অন্যকে ব্যবহারের জন্য অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স দেওয়া তাহলে বলা যায় যে, পণ্যের ব্যবসায় না করে ট্রেডমার্কের ব্যবসায় করা এবং এটাই হচ্ছে ট্রাফিকিং (Dristan case, AIR 1986 SC 137)।

স্বত্বনিয়োগ ও হস্তান্তরের মধ্যে পার্থক্যঃ এ্যাসাইনমেন্ট বা স্বত্বনিয়োগ হচ্ছে মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তর এবং ট্রান্সমিশন বা হস্তান্তর হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে বা আইনের বলে হস্তান্তর। ২০০৯ সালের ট্রেডমার্ক আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে ৩৩ হতে ৪০ ধারায় এ্যাসাইনমেন্ট ও ট্রান্সমিশনের বিধান রয়েছে।

৩৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী অর্থের বিনিময়ে অন্যের নিকট ট্রেডমার্কের স্বত্ব হস্তান্তর করতে পারবে এবং ৩৪ ধারার বিধান অনুযায়ী নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের পণ্য বা সেবার স্বত্বনিয়োগ ছাড়াও ট্রান্সমিশন করা যাবে।

এ্যাসাইনমেন্ট ও ট্রান্সমিশনের নিয়ম মূলত একই এবং এজন্য কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারিত নেই, তবে এটি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী ছাড়া অন্য কেউ স্বত্বনিয়োগ করতে পারে না, কিন্তু স্বত্বাধিকারী মৃত্যুর তার উত্তরাধিকার সূত্রে কিংবা আইনের প্রয়োগ দ্বারা কিংবা স্বত্বনিয়োগ ব্যতীত অন্যকোনো পন্থায় ট্রান্সমিশন করা যায়৷

লাইসেন্সিং সম্ভব কি নাঃ যদি এ বিষয়ে স্পষ্ট আইন নেই তথাপিও বিভিন্ন কেসের সিদ্ধান্তে দেখা যায় যে, নিবন্ধিত ব্যবহারকারী ব্যতীত অন্যন্য ক্ষেত্রেও লাইসেন্স দেওয়া যেত যদি-

১. লাইসেন্স প্রদানের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি বা প্রতারণার সৃষ্টি হয়; 

২. মার্কের স্বতন্ত্রতা ক্ষুণ্ণ বা বিনষ্ট করে অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় পণ্যের পৃথকীকরণের বৈশিষ্ট্য অব্যাহত থাকে; 

৩. ব্যবসায় মহলে যে যোগসূত্র ঘটায় তা ট্রেডমার্কের সাথে মালিকের সম্পর্ক পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকে। 

এ ধরনের লাইসেন্সিং কমন ল’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, উল্লেখযোগ্য কেসগুলো হচ্ছে- Manus case 66 RPC 71 (CA); Bostitch care (1963) RPC 183 (ChD); British Petroleum case (1968, RPC 54, Formica Case (1976) 80cw N222 Gujarat Bottling Co. V. Coca Cola (1996) 1PLR 201 (SC)।

গুডউইলঃ ‘গুডউইল’ হচ্ছে একটি ব্যবসায়িক সুনাম যা একটা সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। এটি অন্যান্য সম্পদের ন্যায় কেনা-বেচা যায়। এ সুনামে যদি কেউ আঘাত করে তাহলে আইনী প্রক্রিয়া দ্বারা প্রতিকারযোগ্য। দীর্ঘদিন যাবৎ সৎভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করে ক্রেতা সাধারণ মধ্যে সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে ভালো ধারণার সৃষ্টি হয় সেই ধারণাই তাদেরকে প্রবৃত্ত করে সে প্রতিক্ষণে এসে পণ্য কিনতে। ব্যবসায়ের সাথে গুডইউল অবিভাজ্য (Commissioners V. Miller ( 1901) AC 217)। গুডউইল অনেকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয় কিন্তু স্থানীয় পরিচিতি হচ্ছে একটা সাধারণ উপাদান যেমন, যশোরের পাটালি গুড়ের একটা সুনাম আছে।

‘গুডউইল’ হচ্ছে এক প্রকার অস্পর্শযোগ্য সম্পদ যা বিক্রি করা যায় বা চার্জ করা যায় কিংবা উইলের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায়। ট্রেডমার্ক, ট্রেডনাম এবং বহিরাকৃতি ব্যবসায়িক গুডউইলের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যেমন- জাপানের টয়োটা গাড়ির বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে। কেউ তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিক্রি করলে এর সাথে গুডউইলও বিক্রি করা হয়। তাই বিক্রেতা ঐ প্রতিষ্ঠানের নামে আরেকটি প্রতিযোগী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালাতে পারে না। তবে একাধিক দেশে বা একাধিক অঞ্চলে একই ট্রেডনামে ব্যবসায় পরিচালিত হলে এবং কোনো এক দেশে বা কোনো এক অঞ্চলে ঐ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হলে সে দেশে বা সে অঞ্চলে তার গুডউইলও বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন বাটা একটি জুতার ব্যবসায়ে বিভিন্ন দেশে সুনাম অর্জন করেছে। এখন বাংলাদেশে যদি বাটার ব্যবসায় পরিচালনা করা বন্ধ রাখে তখন এর গুডউইলও বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই অন্য কেউ আর বাটার নামে এদেশে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে না। তাই দেখা যায় যে, গুডইউল প্রকৃতিগতভাবেই আঞ্চলিক।

Rate this post