প্রশ্নঃ সংস্কৃত ভাষা থেকে অনুবাদ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের অনুবাদ সাহিত্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ অনুবাদ সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষায় রচিত গুরুত্বপূর্ণ কাব্যের অনুবাদ। সংস্কৃত ভাষা থেকে মধ্যযুগে যেসব উচ্চাঙ্গের শিল্প অনূদিত হয়েছে তার মধ্যে রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবত উল্লেখযোগ্য।

রামায়ণঃ পনের শতকের গোড়ার দিকে কৃত্তিবাস বাল্মিকীর সংস্কৃত রামায়ণের অনুবাদ করেন। এটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও সফল অনুবাদ। এ অনুবাদে রামায়ণ পাঁচালী ঢঙে সৃষ্টি হয়েছে এবং কৃত্তিবাস বাঙালির উপযোগী করে অনুবাদ করেছেন।

সপ্তদশ শতকে অদ্ভূত আচার্য (নিত্যানন্দ আচার্য) রামায়ণের অনুবাদ করেন। তার গ্রন্থের নাম রামায়ণের কথা। এছাড়া খণ্ডিত ও অখণ্ডিত উভয়ে মিলে বেশ কয়েকজন রামায়ণ অনুবাদ করেন। তাদের মধ্যে দ্বিজ গঙ্গানারায়ণ, ঘনশ্যামদাস, ভবানীদাস, দ্বিজ লক্ষণ, কৈলাসবসু, চন্দ্রাবতী, রঘুনাথ প্রমুখ।

মহাভারতঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাসবেদ সংস্কৃত ভাষায় মহাভারত রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। জৈমিনিও মহাভারত রচনা করেছেন। বাঙালি অনুবাদকেরা জৈমিনির মহাভারতকে আদর্শ ধরে মহাভারতের অনুবাদ করেন।

মহাভারতের প্রথম অনুবাদক কবীন্দ্র পরমেশ্বর। তিনি সেনাপতি পরাগলের আদেশে পরাগলী মহাভারত অনুবাদ করেন। পরাগল খা-এর পুত্র ছুটি খানের নির্দেশে শ্রীকরনন্দী অশ্বমেদ অংশ নিয়ে দু’খানি মহাভারত রচনা করেন। নিত্যানন্দ ঘোষ মহাভারত রচনা করেন। মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস। তার মহাভারত কৃষ্ণদ্বৈপায়ণের মহাভারত অনুসরণে রচিত। গঙ্গারাম দাস নামে আরেকজন মহাভারতের অনুবাদ করেন। 

ভাগবত পুরানঃ মালাধর বসু বা গুণরাজ খা ভাগবত অবলম্বনে সুলতান রুকুনদ্দিন বরবক শাহের রাজত্বকালে ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ নামে যে অনুবাদ কাব্য রচনা করেন তা বৈষ্ণবধর্মগ্রন্থ ভাগবতের দ্বিতীয় অনুবাদ গ্রন্থ।

কাশীরাম দাসের অগ্রজ কৃষ্ণদাস ভাগবত অবলম্বনে ‘শ্রীকৃষ্ণ বিলাস’ ও ‘গোবিন্দ বিজয়’ কাব্য দুটি রচনা করেন। কবি শেখর রচিত কাব্য ‘গোপাল বিজয়’। ভাগবত অবলম্বনে পরশুরাম চক্রবর্তী রচনা করেন ‘শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল কাব্য’।

Rate this post