প্রশ্নঃ আপীল ও রিভিশন বলতে কি বুঝ? কে আপীল দায়ের করতে পারে? আপীল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আপীল আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলিসমূহ বর্ণনা কর। খালাসের বিরুদ্ধে আপীল চলে কি?

আপীলঃ কোন আদালতের রায় বা আদেশ দ্বারা অন্তুষ্ট বা সংক্ষুব্ধ পক্ষ কর্তৃক উচ্চতর আদালতে বিচার প্রার্থনাকে সাধারণভাবে আপীল বলে। লাহোর হাইকোর্টের মতে, নিম্ন আদালতের রায় যথার্থ কিনা তা নিরূপণের উদ্দেশ্যে কোন বিশেষ মামলাকে নিম্ন আদালত হতে উচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আপীল [AIR 1941 Lah. 141] আবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট বলেন যে, নিম্ন আদালতের বিচারের ধারাবাহিকতা হচ্ছে আপীল [37 Mad. 119]। 

যাহোক নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট পক্ষ আপীল করে এবং এই আপীল করা একটি আইনগত অধিকার। কিন্তু সে অধিকারটি সহজাত নয়। আইনে যে সকল ক্ষেত্রে আপীল করার অধিকার নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে শুধু সে সকল ক্ষেত্রে আপীল করা যায় । আইনের প্রশ্নে বা ঘটনার প্রশ্নে কিংবা উভয়ের মিশ্র প্রশ্নে আপীলের অধিকার প্রয়োগ করা যায়৷

রিভিশনঃ রিভিশন বলতে ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্য পুনরায় দেখা বুঝায়। নিম্ন আদালতের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য উচ্চ আদালতের যে এখতিয়ার রয়েছে তাকে রিভিশনের এখতিয়ার বলে। বিচার কার্যক্রমে নানাবিধ ভুল- ত্রুটি হতে পারে। আইন সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যার অভাব, পদ্ধতিগত অনিয়ম, যথাযথ সাবধানতার অভাব এবং রূঢ়ভাবে মামলা পরিচালনার ফলে এরূপ ভুল-ত্রুটি হয়ে যেতে পারে। এগুলি সংশোধনের ব্যবস্থা না থাকলে ন্যায়বিচারের পরিবর্তে অবিচার হয়ে দাঁড়াবে। তাই উচ্চতর আদালতকে নিম্ন আদালতের নথিপত্র তলব করে এগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সংশোধনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে । ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৫ ধারা মতে নিম্নলিখিত আদালতগুলি তাদের অধীনস্থ আদালতের বিচার কার্যক্রমের উপর রিভিশনের এখতিয়ার রয়েছেঃ 

১. সুপ্রীম কোর্টের হাইকোট বিভাগ, ২. দায়রা জজ, ৩. জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, ৪. সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রদত্ত যে কোন ম্যাজিষ্ট্রেট, ৫. প্রধান মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ।

কে আপীল দায়ের করতে পারেঃ নিম্ন আদালতের রায় বা আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষ আইনের বিধান থাকলে, নিজ অধিকার বলে উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করতে পারে। মেমোরেণ্ডামের আকারে আপীল দায়ের করতে হয় এবং যে রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করা সংযুক্ত করতে হয়৷

আপীলকারী জেলে থাকলে আপীলের আবেদনপত্র ও রায়ের নকলসহ সকল কাগজপত্র জেলের ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট পেশ করতে হয়। ভারপ্রাপ্ত অফিসার তা যথাযথ আপীল আদালতের নিকট প্রেরণ করে থাকেন। আপীল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালতের ক্ষমতা ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৩ ধারায় আপীল আদালতের ক্ষমতা বর্ণিত রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, আসামী পক্ষকে প্রয়োজনীয় নোটিশ প্রদানের পর আপীল আদালত কেসের রেকর্ড তলব করবেন এবং নথিটি পরীক্ষা করে আপীলকারী ও সরকারী পক্ষের বক্তব্য বলবেন। আদালত যদি মনে করেন যে, হস্তক্ষেপ করার মত পর্যাপ্ত কারণ নেই তাহলে আপীলটি নাকচ করতে পারেন। খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আনীত আপীল খালাসের আদেশ রদ করে অতিরিক্ত বিচারের নির্দেশ দিতে পারেন কিংবা আসামীকে দোষী সাব্যস্ত করে দন্ডাদেশ প্রদান করতে পারেন।

দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে আনীত আপীলে নিম্ন আদালতের রায় ও দণ্ডাদেশ নাকচ করে আসামীকে খালাস কিংবা অব্যাহতি দিতে পারেন অথবা আপীল আদালতের অধীনস্থ অপর কোন উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে এ আসামীর বিচারের নির্দেশ দিতে পারেন বা আসামীর নতুন করে বিচার করতে পারেন। এছাড়া প্রয়োজন বোধে নিম্ন আদালতের রায় পরিবর্তন করতে পারেন। কিংবা দণ্ডাদেশ বহাল রাখতে পারেন বা দণ্ড কমাতে পারেন।

দণ্ড বৃদ্ধি সংক্রান্ত আপীলে অবশ্য (১) আপীল আদালত নিম্ন আদালতের প্রদত্ত রায় ও দণ্ডাদেশ বিপরীত কিংবা পরিবর্তন করতে পারেন এবং আসামীকে খালাস বা অব্যাহতি দিতে পারেন কিংবা অপরাধটি বিচার করার মত উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আসামীর পুণবিচারের নির্দেশ দিতে পারেন; অথবা (২) নিম্ন আদালতের রায় পরিবর্তন করতে বা দণ্ডাদেশ বহাল রাখতে পারবেন; অথবা, (৩) নিম্ন আদালতের রায় পরিবর্তন না করেই দণ্ডের পরিমাণ কম বেশী করতে পারেন।

অন্য কোন আদেশের বিরুদ্ধে আনীত আপীলে আপীল আদালত আদেশটির পরিবর্তন বা বিপরীত করতে পারেন। এছাড়া প্রয়োজনবোধে যে কোন সংশোধন বা ন্যায়বিচারের জন্য যেরূপ আদেশ দেয়া দরকার তা আপীল আদালত প্রদান করতে পারেন। তবে দণ্ডের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই আসামীকে বক্তব্য পেশের সুযোগ দিতে হবে।

আরো শর্ত হচ্ছে এই যে, আপীল আদালত কথিত অপরাধের জন্য এমন অধিকতর শাস্তি প্রদান করবেন না যা এই আদালতের মতে আপীল ভুক্ত আদেশ ও দণ্ডাদেশ প্রদানকারী আদালত কর্তৃক ঐ অপরাধের জন্য প্রদান করা যেতো । অর্থাৎ অপরাধটির জন্য নিম্ন আদালত যে পরিমাণ দণ্ডাদেশ দিতে পারতেন অথচ দেননি, আপীল আদালত ঠিক সেই পরিমাণ দণ্ডাদেশ বৃদ্ধি করবেন মাত্র।

খালাসের বিরুদ্ধে আপীলঃ মুক্তাদী কোন আসামীকে খালাস দিলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা সম্পর্কে ৪১৭ ধারায় বিধান রয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, দায়রা আদালত কোন আসামীকে খালাস দিলে সরকার পক্ষ হতে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আপীল করা যায়। নালিশ মামলায় (Complaint case) আসামীর খালাস হলে নালিশকারী শুধু আইনের প্রশ্নে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারে।

এ ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিচেবচনার জন্য যদি গৃহীত না হয় তাহলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে কোন আপীল চলে না।

Rate this post