প্রশ্নঃ ডারউইনের বিবর্তনবাদ সম্পর্কে লিখ।

অথবা, ডারউইনের যান্ত্রিক বা জৈবিক মতবাদ কী?

ভূমিকাঃ বিবর্তনবাদ জগতের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্বন্ধীয় একটি মতবাদ। বিবর্তনবাদ অনুসারে, এ বিশ্ব আকস্মিকভাবে সৃষ্টি হয়নি। জগতের অসংখ্য জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ তথা সকল জীবন ও অজৈব সত্তা এক সহজ সরল আদিম অবস্থা থেকে বিকশিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে।

যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ কিঃ যান্ত্রিক বিবর্তনবাদের মূল কথা হল, জগৎ ও এর অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় জীবসহ সবকিছুরই ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে যে আবির্ভাব ঘটেছে, তার পেছনে কোন বুদ্ধিমান স্রষ্টার কোন হাত নেই। জড়শক্তি যান্ত্রিকভাবে জগতের বিবর্তনপ্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে জগৎসহ বিভিন্ন পদার্থের সমবিকাশ ঘটাচ্ছে। অর্থাৎ সবকিছুই যান্ত্রিকভাবে বিকশিত হচ্ছে।

জৈবিক বিবর্তন কিঃ কানিংহাম জৈব বিবর্তনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, জৈব বিবর্তন হল জীবের প্রকাশ। অপেক্ষাকৃত সরল প্রাথমিক অবস্থা থেকে উত্তরােত্তর জটিলতর বিভিন্ন স্তরের ভিতর দিয়ে জীবের আকারের সুশৃঙ্খল বিকাশ ও পরিবর্তন। ডারউইন, ভাইসম্যান, ল্যামার্ক প্রমুখ মনীষী জীবের বিবর্তন সম্বন্ধে যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নিম্নে ডারউইনের যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ ব্যাখ্যা করা হলাে-

ডারউইনের জৈবিক বা যান্ত্রিক বিবর্তনবাদঃ ব্রিটিশ দার্শনিক ডারউইনের (১৮০৯-১৮৮২) বিবর্তনবাদে যেটুকু অবদান তার সম্পূর্ণই জীবজগৎকে ভিত্তি করেই। ছােটবেলা থেকেই উদ্ভিদ ও জীবজগতের প্রতি ছিল তার ভীষণ আকর্ষণ। পরবর্তীকালে তিনি পড়াশুনাও করেন এ বিষয়েই। জৈবিক বিবর্তনবাদে তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘Origin of species’ এবং ‘Descent of Man’ আলােচিত হয়। তার মতে, আদিম জীবকোষ থেকে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে। বিবর্তনের এ প্রক্রিয়াকে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন।

ডারউইনের মতে, পৃথিবীর প্রাণীকুল বর্তমানে যে অবস্থায় আছে অতীতে এ অবস্থায় ছিল না। এক আদি অপরিপক্ক অবস্থা থেকে ক্রমিক বিবর্তনপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা বর্তমানের জটিল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। প্রাণীজগৎ এক সুকঠিন যুদ্ধে লিপ্ত। পশুপাখি ও মানুষসহ প্রাণীর প্রজননক্ষমতা এত বেশি যে তাদের সকলের সন্তানসন্ততির ভরণ-পােষণ পৃথিবীর সীমিত খাদ্য দ্বারা সম্ভব নয়। এ জন্যই আত্মরক্ষার জন্য তারা সকলেই যুদ্ধে লিপ্ত। এ যুদ্ধে যে জয়ী হয় সে-ই টিকে থাকে। আর যারা হেরে যায় তারা ধ্বংস হয়। উদাহরণস্বরূপ হরিণের দ্রুতগামিতার ওপর তার জীবন নির্ভর করে। যে হরিণ যত বেশি দ্রুতগামী তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ডারউইনের যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ পরবর্তীকালে যথেষ্ট সমালােচনার সমান হয়। তা সত্ত্বেও তার মতবাদ দর্শনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী স্থান দখল করে আছে।

Rate this post