প্রশ্নঃ টমাস একুইনাস মানবিক আইনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?

অথবা, সেন্ট টমাস একুইনাসের মানিবক আইন ব্যাখ্যার পদ্ধতিসমূহ আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও পােপ রাজার ক্ষমতাগত দ্বন্দ্ব যখন মধ্যযুগকে এক স্থবির অন্ধকারের গভীর অমানিশায় প্রােথিত করে ঠিক তখনই আলাের মশাল হাতে নিয়ে আবির্ভূত হন প্রগতিশীল দার্শনিক টমাস একুইনাস। তিনি মাতা-পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সন্ন্যাসপন্থী যাজকদের ডােমিনিকান সম্প্রদায়ে যােগদান করেন। তার প্রণীত আইন তত্ত্বটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক আইন আইনতত্ত্বের একটি বিশেষ স্তর।

মানবিক আইনঃ একুইনাস মানবিক আইন বলতে বুঝিয়েছেন যে, আইন মানুষের জন্য প্রবর্তিত, এর স্রষ্টা হল মানুষ, তারা সমবেতভাবে বা নির্ধারিত প্রতিনিধির মাধ্যমে এর প্রবর্তন করেন। এটা কোনাে ব্যক্তিবিশেষ বা শ্ৰেণীবিশেষের জন্য নয়। সমাজের সকল ব্যক্তি ও স্বার্থের জন্যে সৃষ্ট। সমগ্র জনসমাজ নিজেদের মঙ্গলার্থে এ আইন প্রণয়ন করেন। একুইনাস আইনের যে সংজ্ঞা প্রদান করেন তা মূলত মানবিক আইন।

মানবিক আইন প্রণয়নের শর্তাবলীঃ মানবিক আইন প্রণয়নের শর্তাবলী নিম্নরূপঃ

(১) যুক্তিঃ যুক্তি হল মানবিক আইন প্রণয়নের প্রথম বিষয়। মানবিক আইন প্রণেতাকে আইন প্রণয়নের সময় যুক্তি সিদ্ধ কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হয়। যুক্তি হলাে মানবিক আইন প্রণয়নের একটি বিশেষ শর্ত।

(২) জনসাধারণের কল্যাণঃ জনসাধারণের কল্যাণ নিশ্চিত করা মানবিক আইনের দ্বিতীয় শর্ত। তিনি মানবিক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনসাধারণের সার্বিক কল্যাণের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।

মানবিক আইনের বিভিন্ন দিকঃ মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রদার্শনিক একুইনাস প্রণীত মানবিক আইনকে বিশ্লেষণ করলে নিমােক্ত বিষয়গুলাে স্পষ্ট হয়ে ওঠেঃ

(১) মানব রচিতঃ মানবিক আইনের প্রথমদিক হলাে এটি মানব রচিত।

(২) যৌক্তিকতাঃ যৌক্তিকতা মানবিক আইনের আরেকটি উল্লেখযােগ্য দিক। টমাস একুইনাস মনে করেন, মানবিক আইন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রণয়ন করবে তবে তা যুক্তিযুক্ত হতে হবে।

(৩) সম্প্রতিঃ টমাস একুইনাসের মানবিক আইনকে বিশ্লেষণ করলে সম্প্রীতি নামক প্রত্যয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি মনে করেন, যে আইনে সমগ্রদের সম্প্রীতি নেই, সে আইন মানবিক আইন হতে পারে না। সকলের সম্প্রীতির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আইন যুক্তিযুক্ত যা মানবিক আইন বলে অভিহিত।

(৪) জনসাধারণের কল্যাণঃ টমাস একুইননা বলেন, মানবিক আইন রচিত হবে সর্বসাধারণের কল্যাণের লক্ষ্যে, কোনাে ব্যক্তি বিশেষের কল্যাণের লক্ষ্যে নয়।

পরিশেষঃ এতক্ষণের আলােচনার পরিশেষে বলা যায় যে, মানবিক আইন মানবরচিত একটি উৎকৃষ্ট বিধান। টমাস একুইনাস মধ্যযুগীয় সর্বসাধারণের দূরবস্থার কথা চিন্তা করে এই আইন প্রবর্তন করেন। তার প্রবর্তিত আইনের মূলনীতিকে পুঁজি করে আজকে নতুন নতুন আইন তৈরি হচ্ছে।

Rate this post