প্রশ্নঃ ঈশ্বরের ধারণা দাও।

অথবা, ঈশ্বরের ধারণা বলতে তুমি কী বুঝ?

ভূমিকাঃ দর্শনের ইতিহাসে ঈশ্বরবিষয়ক আলােচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন উভয় ক্ষেত্রেই ঈশ্বরের প্রভাব অনেকটা সুদূরপ্রসারী। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলাে ঈশ্বর কি এবং কে? সম্বরের প্রকৃতি কিভাবে নির্ণয় করা যায়? ঈশ্বর সংখ্যায় এক না বহু- ইত্যাদি অনেক প্রশ্নের মত এ জাতীয় প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সুতরাং এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করা একান্ত কর্তব্য।

ঈশ্বরের ধারণাঃ যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক খােদার বিভিন্ন ধারণা প্রচার করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলাে-

(১) প্লেটোঃ প্রাচীন দার্শনিক প্লেটো খােদাকে মঙ্গলের প্রতীকরূপে ধারণা করেছেন। তার মতে, খােদর ধারণা ও মঙ্গলের ধারণা অভিন্ন।

(২) এরিস্টটলঃ এরিস্টটলের মতে, খােদা হচ্ছেন জগতের প্রধান চালক। তার কোন চালক নেই। তিনি শুদ্ধ আকার এবং শুদ্ধ ক্রিয়া। তিনিই জগতের লক্ষ্য।

(৩) ডেকার্টঃ ডেকার্টের মতেও খােদা এক, অদ্বিতীয়, অসীম ও অনন্ত। তিনি সর্বশক্তিমান দ্রব্য। তিনি জগতের স্রষ্টা।

(৪) স্পিনােজাঃ স্পিনােজার মতে, খােদাই একমাত্র পরম দ্রব্য। তার অসংখ্য গুণের মধ্যে মানুষ কেবল বিস্তৃতি ও চৈতন্যকে জানতে পারে। ঈশ্বরের স্বরূপ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সসীম বস্তু ও মন খােদারই প্রকাশমাত্র। এদের নিজস্ব সত্তা নেই।

(৫) লাইবনিজঃ লাইবনিজের মতে, খােদা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ চিৎপরমাণু। কেবলমাত্র চিৎপরমাণুই অস্তিত্বশীল। খােদা থেকেই অন্যান্য চিৎপরমাণুর সৃষ্টি।

(৬) কান্টঃ কান্টের মতে, কেবল নৈতিক যুক্তির ভিত্তিতেই খােদার অস্তিত্ব স্বীকার করা যায়। পরপারে পুণ্যবানদের, পুরস্কার ও পাপীদের শাস্তি বিধানের জন্য খােদার অস্তিত্ব অপরিহার্য।

(৭) হেগেলঃ হেগেলের মতে, খােদাই পরমাত্মা বা পরম ধীশক্তি যিনি জগতের সবকিছুর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মাত্রায় নিজেকে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। এই পরমাত্মা হচ্ছে অসীম ও অনন্ত আত্মচৈতন্য, যিনি জড়, প্রাণ ও মনের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উপরের আলােচনায় দেখা যায় যে, সকলেই ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, জগৎস্রষ্টা এবং আধ্যাত্মিক দ্রব্য বলে স্বীকার করেছেন। তিনি জগতের সবকিছুর আধার। তিনি অসীম ও পূর্ণ হয়েও সসীম ও অপূর্ণের মাঝে বিরাজিত। তিনি সকল আদর্শ ও নৈতিকতার উৎস। সত্য, কল্যাণ, সুন্দর সব কিছুই তার মাঝে মূর্ত হয়ে ওঠে।

Rate this post