ভূমিকাঃ বাংলাদেশ কার কাউন্সিল একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৬ দ্বারা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গঠিত। ইংরেজিতে একে বলে- The Bangladesh Legal Practitioners and bar council order, 1972. 


বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গঠনঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশের অনুচ্ছেদ ৫, ৬ এবং ১১ অনুযায়ী নিম্নোক্তভাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গঠিত হবে- 


(১) সদস্য সংখ্যাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সর্বোমােট ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। 

(i) বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এর সদস্য হবেন। 

(ii) সমগ্র বাংলাদেশের আইনজীবীদের প্রত্যক্ষ ভােটে তাদের মধ্য থেকে সাতজন সদস্য নির্বাচিত হবেন। (iii) সাতটি অঞ্চল ভিত্তিক বার সমিতির আইনজীবীদের প্রত্যক্ষ ভােটে সাতজন সদস্য নির্বাচিত হবেন। সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সমিতিগুলােকে ৭টি অঞ্চলে বিভক্ত করবেন। [অনুচ্ছেদ-৫(২)] 


(২) সভাপতি ও সহ-সভাপতি (Chairman & Vice-Chairman): বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে একজন সভাপতি এবং একজন সহ-সভাপতি থাকবে। 

(i) সভাপতি (Chairman): বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সভাপতি (Chairman) হবেন। 

(ii) সহ-সভাপতি (Vice-Chairman): বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাদের মধ্য থেকে একজন সহ-সভাপতি (Vice-Chairman) নির্বাচিত হবেন। 

(iii) ক্ষমতা ও কার্যাবলী: বার কাউন্সিলের সভাপতি ও সহ-সভাপতি ক্ষমতা ও কার্যাবলী বিধি মােতাবেক নির্ধারিত হবে। (অনুচ্ছেদ-৬) 


(৩) বিভিন্ন কমিটিঃ 

(i) এক্সিকিউটিভ কমিটি: বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে ৫ সদস্যের একটি কার্যকরী কমিটি গঠিত হবে। 

(ii) ফিন্যান্স কমিটি বা অর্থ কমিটি: বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে ৫ সদস্যের একটি অর্থ কমিটি গঠিত হবে। 

(iii) লিগ্যাল এডুকেশন কমিটি: নয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি আইন শিক্ষা কমিটি গঠিত হবে। এই ৯ জনের মধ্যে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যের মধ্য থেকে ৫ জন থাকবেন এবং অন্যান্য ৪ জন যারা নির্বাচিত সদস্য নন। এই ৪ জনের মধ্যে আবার কমপক্ষে ২ জন কোন মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষক হতে হবে। 

(iv) এনরােলমেন্ট কমিটি: আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির জন্য পাঁচ সদস্যের একটি এনরােলমেন্ট কমিটি থাকবে। উক্ত কমিটির চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতির মনােনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি। এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের আরাে দুইজন বিচারপতি, এটর্নি জেনারেল এবং বার কাউন্সিলের, একজন নির্বাচিত ১ জন সদস্য এই পাঁচজন নিয়ে এনরােলমেন্ট কমিটি গঠিত হবে। 

(v) কমিটির ক্ষমতা ও কার্যাবলী: বিধি মােতাবেক উপরের কমিটিগুলাে তাদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পাদন করবেন। 

(vi) অন্যান্য কমিটি: বার কাউন্সিলের সদস্যগণ প্রয়ােজন মনে করলে তাদের কাজের সুবিধার্থে অন্যান্য কমিটি গঠন করতে পারবেন। [অনুচ্ছেদ-১১] যেমন: ল’ রিফর্ম কমিটি, হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল এইড কমিটি, হাউজ কমিটি, রিলিফ কমিটি, রােল এন্ড পাবলিকেশন কমিটি, কমপেইন্ট এন্ড ভিজিলেন্স কমিটি। 


(৪) সচিব/সেক্রেটারি: বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সরকার কর্তৃক নিয়ােগকৃত একজন বেতনভুক্ত সচিব/সেক্রেটারি থাকবেন। বার কাউন্সিলের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কার্য পরিচালনা করবেন। বর্তমানে জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা বার কাউন্সিলের সচিব/সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। 


বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ নিম্নে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলােচনা করা হলাে : 


(১) আইনজীবীদের আচরণ বিধি আরােপঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের আচরণ বিধি আরােপ করে থাকে। 

(২) আইনজীবীদের তালিকা তৈরিঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের তালিকা তৈরি করে এবং তা সংরক্ষণ করার দায়িত্বও তার। 

(৩) তালিকাভুক্তির পরীক্ষা গ্রহণঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সারা দেশ থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়ে আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা গ্রহণ করে। 

(৪) নির্বাচন অনুষ্ঠান করাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সদস্য নির্ধারণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। 

(৫) তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়ােগঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও তা বিনিয়ােগ করে থাকে। 

(৬) আইনজীবীদের সুযােগ-সুবিধা রক্ষাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত এ আইনজীবীদের বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধা রক্ষা, স্বার্থ রক্ষা, আইনজীবীদের অধিকারের নিরাপত্তা বিধান ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করে থাকে। 

(৭) বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব নির্ধারণ করাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব নির্ধারণ করে। (৮) আইন শিক্ষার মান নির্ধারণ করাঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরামর্শ করে আইন শিক্ষার মান নির্ধারণ করে।

(৯) অসদাচরণের জন্য মােকদ্দমা গ্রহণঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের অসদাচরণের জন্য মােকদ্দমা গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তি করে। 

(১০) আইনজীবীকে অপসারণঃ কোন আইনজীবী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নীতিমালা ভঙ্গ 

করলে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করতে পারে। 


উপসংহারঃ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এবং বার এসােসিয়েশন শুধু আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণ করে না 

বরং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আইন শিক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীনভাবে এই প্রতিষ্ঠান দেশের আইন অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। 

Rate this post