শিক্ষা হল একটি নিরবচ্ছিন্ন, সচেতন ও ক্রমবিকাশমান সামাজিক প্রক্রিয়া। শিক্ষার লক্ষ্য বহুমুখী। তবে এগুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল一
-
ব্যক্তিগত বিকাশ,
-
সামাজিক বিকাশ,
-
জাতীয় বিকাশ এবং
-
ব্যক্তির বৃত্তিমূলক,
-
সাংস্কৃতিক,
-
নৈতিক,
-
আধ্যাত্মিক,
-
অভিযােজনমূলক এবং আন্তর্জাতিক সচেতনতার বিকাশের মধ্য দিয়ে বিশ্বনাগরিক সৃষ্টি করা।
যে-কোনাে একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার পরিকল্পনা করলে, তা শিক্ষার ধারণার পরিপন্থী হবে। তবে আলােচ্য প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে যে লক্ষ্যটিকে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযােগ্য বলে মনে হয় তা হল ব্যক্তিগত বিকাশ।
এই মতবাদের সমর্থকদের মতে, ব্যক্তির প্রয়ােজনে সমাজের উৎপত্তি ঘটেছে। ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে সমাজের পৃথক কোনাে তাৎপর্য নেই। ব্যক্তিই হল শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। তাই ব্যক্তির সুপ্ত সম্ভাবনার যথাযথ বিকাশ ঘটানােই হল শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তিগত বিকাশের পক্ষে প্রধান যুক্তিগুলি হল一
[1] গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিগত যুক্তি : গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ব্যক্তির সুপ্ত সন্তাবনাগুলির পূর্ণ বিকাশই হল শিক্ষার লক্ষ্য। ব্যক্তি যেটুকু ক্ষমতা নিয়ে এসেছে তার পূর্ণ বিকাশ ঘটানােই হবে শিক্ষার লক্ষ্য।
[2] ভাববাদী দর্শনের যুক্তি : ব্যক্তির মধ্যে সুপ্ত ব্ৰত্মসত্তার বিকাশসাধনই হল ভাববাদী দর্শন শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য।
[3] প্রকৃতিবাদী দর্শনের যুক্তি : শিক্ষা সম্পন্ন হবে উন্মুক্ত পরিবেশে ব্যক্তি তথা শিশুর চাহিদা, রুচি এবং আগ্রহ অনুযায়ী। অর্থাৎ ব্যক্তিকেই এখানে শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
[4] প্রয়োগবাদী দর্শনের যুক্তি : প্রতিভাশালী ও বিশিষ্ট গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারাই মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটে। প্রয়ােগবাদীরা তাই তাদের দার্শনিক চিন্তাধারায় শিশুর ব্যক্তিগত সামর্থ্য, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও প্রবণতার প্রাধান্যের কথা স্বীকার করেছেন।
[5] জীববিজ্ঞানের যুক্তি : জিনতত্ত্ব অনুসারে প্রতিটি ব্যক্তির অন্তর্নিহিত স্বকীয়তা এবং পরিবেশের সঙ্গে তার অভিযােজনের প্রবণতা একটি স্বীকৃত সত্য। এই স্বকীয়তার যথাযথ বিকাশ ঘটানােই শিক্ষার কাজ।
[6] মনোবিজ্ঞানের যুক্তি : মনােবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিটি ব্যক্তিই অনন্য সত্তার অধিকারী। শিক্ষার লক্ষ্য হবে ব্যক্তিগত পার্থক্যকে ভিত্তি করে ব্যক্তির বিকাশে সহায়তা করা।
[7] ব্যক্তিগত বিকাশ অন্যান্য বিকাশকে সম্ভব করে তােলে : সমাজ, জাতি, সংস্কৃতি সবের মূলে হল ব্যক্তি। ব্যক্তির বিকাশের ফলেই সমাজ, জাতি এবং সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিকাশপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সমাজ, জাতি এবং সংস্কৃতির বিকাশে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে বিকাশকে আরও সার্থক করে তােলে।
এই আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শিক্ষার প্রধান প্রধান লক্ষ্যের মধ্যে ব্যক্তিগত বিকাশ বা ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যটিরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।