গোষ্ঠী-কেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেকী আলোচনা ছিল প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ও আইনানুগ। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক বাস্তবতাকে কেবল আইনানুগ ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরোপুরি অনুধাবন করা যায় না। এই কারণে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাজনীতিক প্রক্রিয়ার (Political Process) উপর জোর দেওয়া হয়। বিদ্যমান রাজনীতিক জীবনধারার ব্যবহারিক দিক বিচার-বিশ্লেষণের জন্য রাজনীতিক প্রক্রিয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করা দরকার। বিভিন্ন গোষ্ঠীর পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উপর রাজনীতিক প্রক্রিয়া নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক কালে উদারনীতিক গণতন্ত্রের প্রবক্তারা এবং বিশেষ করে আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতিক জীবনের প্রয়োগগত দিকটি পর্যালোচনার পক্ষপাতী। এই দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতিক জীবনকে গোষ্ঠীজীবন হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়।

বিংশ শতাব্দীতে সংগঠিত বিভিন্ন গোষ্ঠী ও স্বার্থের ক্রমবর্দ্ধমান প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। তারফলে রাজনীতিক মিথষ্ক্রিয়ার প্রকৃতিগত পরিবর্তন ঘটে। প্রকৃত প্রস্তাবে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গোষ্ঠী রাজনীতি নিয়ে উন্মাদনা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। এই সময় এই ধারণা প্রাধান্য পায় যে, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ক্রিয়াকারী হিসাবে আইনসভা ও রাজনীতিক দলের ভূমিকার অবক্ষয় ঘটেছে; তার জায়গায় ব্যবসায়ী স্বার্থ, ট্রেড ইউনিয়ন প্রভৃতি স্বার্থবাহী সংগঠনসমূহের কর্তৃত্ব কায়েম হচ্ছে। স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের দুনিয়া ক্রমশ সম্প্রসারিত হতে থাকে। বিশেষত বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের পর থেকে নতুন নতুন বিষয়াদি স্বার্থগোষ্ঠীর এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়। এই একক বিষয়ভিত্তিক প্রতিবাদী গোষ্ঠীসমূহের আবির্ভাব ঘটে। বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক এই সমস্ত গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযোগ্য হল: ক্রেতা সুরক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, নারীবাদ প্রভৃতি। এই সমস্ত গোষ্ঠী কালক্রমে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়ে। তারফলে নতুন নতুন সামাজিক আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে মানবাধিকার আন্দোলন, নারী আন্দোলন প্রভৃতির কথা বলা যায়। সংশ্লিষ্ট আন্দোলনসমূহের সুবাদে নতুন ধরনের রাজনীতিক ক্রিয়াকর্ম ও প্রচার প্রসার লাভ করে। একে অনেকে ‘নতুন রাজনীতি’ (new politics ) হিসাবে আখ্যায়িত করার পক্ষপাতী।

গোষ্ঠীগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাগণ:

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় গোষ্ঠীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তা হিসাবে যাঁরা পরিচিত তাঁদের মধ্যে আর্থার বেণ্টলী, নরম্যান অ্যাঞ্জেল, গ্রাহাম ওয়ালাস, ডেভিড ট্রুম্যান, বেলক, ভি. ও. কী, বারট্রাম ল্যাথাম প্রমুখ চিন্তাবিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর্থার বেণ্টলী তাঁর The Process of Government শীর্ষক গ্রন্থে গোষ্ঠীর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে গোষ্ঠীর যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাবতীয় বিষয়ের বিচার-বিশ্লেষণ সম্ভব। নরম্যান অ্যাঞ্জেল তাঁর The Great Illusion শীর্ষক গ্রন্থে রাষ্ট্রকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করেছেন। তাঁর মতানুসারে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে থাকে গোষ্ঠীগত অনুভূতির দ্বারা। এবং এই অনুভূতি আর্থনীতিক স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রাহাম ওয়ালাস তাঁর Human Nature in Politics গ্রন্থে বিভিন্ন পেশাদারী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ডেভিট টুম্যান তাঁর The Governmental Process শীর্ষক গ্রন্থে গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বিশ্লেষণ ধারা ব্যাখ্যা করেছেন। অনেকের মতে ট্রুম্যানের বিশ্লেষণ হল ‘রাজনীতিক গোষ্ঠীগত পর্যালোচনা’। বেলক ছিলেন মধ্যযুগের সংঘ-ভিত্তিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পক্ষপাতী। ভি. ও. কী, তাঁর Politics, Parties and Pressure Groups শীর্ষক গ্রন্থে গোষ্ঠীগত দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি গোষ্ঠীর আনুষ্ঠানিক সংগঠনের উপর জোর দেননি। ল্যাথাম তাঁর The Group Basis of Politics গ্রন্থে গোষ্ঠীগত দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করেছেন। আধুনিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদীরা রাষ্ট্রকে গোষ্ঠীর সমষ্টি হিসাবে রাষ্ট্রের কথা বলেছেন।

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব বৃদ্ধি:

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত অনুসারে যে-কোন রাজনীতিক ব্যবস্থায় নীতি-নির্ধারণ ও নির্ধারিত নীতির প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর এবং বিশেষত চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা আবশ্যক। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় বর্তমানে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। অ্যালান বল (Alan R. Ball) তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “pressure groups are firmly part of the political process and that they attempt to reinforce or change the direction of government policy, but do not wish, as pressure groups to become the government.” সুতরাং বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থায় প্রচলিত রাজনীতিক প্রক্রিয়ার বিচার-বিশ্লেষণের জন্য চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা একান্তভাবে অপরিহার্য। সাম্প্রতিক কালে সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল স্তরে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রভাব প্রতিক্রিয়া বিশেষভাবে প্রসারিত হয়েছে।

 

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর গুরুত্ব:

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সম্পর্কিত আলোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। রাজনীতিক দলের মত সরকারী ক্ষমতা দখল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর লক্ষ্য নয়। কিন্তু সরকারী নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে এই গোষ্ঠী কার্যকরী প্রভাব বিস্তার করে। প্রভাব বিস্তার বা চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলি সরকারী সিদ্ধান্তকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকে। আধুনিক সমাজে এমন অনেক গোষ্ঠী বা সংগঠন আছে যেগুলি সরকারী কার্যকলাপ বা সিদ্ধান্তকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ স্বার্থযুক্ত এই গোষ্ঠীসমূহ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশে রাজনীতিক ঘটনাপ্রবাহের উপর প্রভাব বিস্তার করে। সেইজন্য দেশের রাজনীতিক ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির ভূমিকা আরও ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। জনসাধারণের বিভিন্ন রকম সামাজিক, রাজনীতিক, আর্থনীতিক, ধর্মীয়, বৃত্তিগত প্রভৃতি স্বার্থকে কেন্দ্র করে এই গোষ্ঠীসমূহের সৃষ্টি হয়। এবং সংশ্লিষ্ট স্বার্থ পরিপোষণের জন্য এরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে। বল বলেছেন: “A pressure groups has been defined as an organised aggregate which seeks to influence the context of governmental decisions without attempting to place its members in formal governmental capacities.”

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নামকরণ:

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নামকরণ ও সংজ্ঞা সম্পর্কে কিছু সমস্যা আছে। অ্যালান বল (Alan R. Ball) তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “One of the first problems to be faced in the study of pressure groups and their role in the political process is that of the confusion over terminology and definition.” ফাইনার একে লবি (Lobby) বলার পক্ষপাতী। আবার অনেকে ‘স্বার্থগোষ্ঠী’ বোঝাতে ‘চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ (Pressure Group), ‘রাজনীতিক গোষ্ঠী’ (Political Group), ‘সংগঠিত গোষ্ঠী’ (Organised Group), ‘মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী’ (Attitude Group) প্রভৃতি পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। অ্যালেন পটার (Allen Potter) গ্রেট ব্রিটেনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ‘সংগঠিত গোষ্ঠী’ (Organised Groups) কথাটি ব্যবহার করেছেন। তবে জিগলার (H. Zeigler), অ্যালমণ্ড ও পাওয়েল (G. A. Almond and G. B. Powell), ট্রুম্যান (Truman) প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর কাছে ‘স্বার্থগোষ্ঠী’ (Interest Group) পরিভাষাটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। ‘চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ এই পরিভাষাটির ব্যবহার সম্পর্কে কিছু সমস্যা আছে। বল বলেছেন: “The description pressure group has been attacked because it appears to denote the methods used by the group to influence the decision-making process, S. E. Finer used the word ‘lobby’ to escape this difficulty, observing that the most popular terms in the field seem to be either pressure group’ or ‘interest group’….A second problem with the term ‘pressure group’ is that by some it is used as a term of abuse and not as a neutral description.”

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নামকরণের সমস্যার সমাধান:

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নামকরণের এই সমস্যা সম্পর্কে অ্যালান বল একটি সমাধান সূত্র দিয়েছেন। তিনি ‘চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ শব্দটিকে একটি ব্যাপক বর্ণনাম হিসাবে ব্যবহার করার পক্ষপাতী। এবং এক্ষেত্রে তিনি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে ‘স্বার্থগোষ্ঠী’ (Interest Groups) ও ‘মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী’ (Attitude Groups) এই দু’টি ভাগে বিভক্ত করার কথা বলেছেন। নামকরণের এই সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: “One solution to these problems is to use the term pressure group’ at a broad generic title… and divide pressure groups into two broad categories, interest groups and attitude groups.”

বলের মতানুসারে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী:

বলের অভিমত অনুসারে যে গোষ্ঠীর সদস্যরা অংশীদারী মনোভাবের দ্বারা আবদ্ধ থাকে তাকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে। বল বলেছেন: “A pressure group can be defined as a group whose members hold ‘shared attitudes’.” বলের মতানুসারে “স্বার্থগোষ্ঠী হল দু’ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী। তাঁর মতে অভিন্ন উদ্দেশ্যগত বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে গোষ্ঠীর সদস্যদের অংশীদারী মনোভাব গড়ে উঠে তাকে ‘স্বার্থগোষ্ঠী’ বলে। বল বলেছেন: “Interest groups…can be defined as those groups in which the shared ‘attitudes of the members result from common objective characteristic e.g. all the members of the group are plumbers, bank executives, farmers, etc.” অর্থাৎ স্বার্থগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সম স্বার্থগত অংশীদারী মনোভাব বর্তমান থাকে। এই কারণে একই পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে স্বার্থগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে কৃষকদের সংগঠন, ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সংগঠন প্রভৃতির কথা বলা যায়। দ্বিতীয় ধরনের চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে বল ‘মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী’ (Attitude Groups)-র কথা বলেছেন। মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠীর সদস্যরা কতকগুলি ক্ষেত্রে অভিন্ন মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে আণবিক অস্ত্রের ব্যবহার-বিরোধ সমিতি, পশু ক্লেশ নিবারণ সমিতি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ সমিতি প্রভৃতি সংঘ-সমিতির কথা বলা যায়। বল বলেছেন: “…attitude groups are those groups in which the members hold certain values in common, e.g. all members dislike cruelty to animals, wish to ban the use of nuclear weapons, etc. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে নিউম্যান (Newmann)-এর অভিমতও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: “Fundamentally pressure groups are the representation of homogeneous interests seeking influence.”

স্বার্থগোষ্ঠী ও মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠী—বলের ব্যাখ্যা:

স্বার্থগোষ্ঠী ও মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বল কতকগুলি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। স্বার্থগোষ্ঠীর কার্যকলাপের পরিধি অধিকতর ব্যাপক। স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের উদ্দেশ্য সরকারী সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই সমস্ত গোষ্ঠী অন্যান্য বহু ও বিভিন্ন লক্ষ্যে কাজকর্ম পরিচালনা করে। মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠীসমূহের সদস্যরা নির্দিষ্ট মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। বৃত্তিগত অভিন্নতার কোন প্রয়োজন এ ক্ষেত্রে অনুভূত হয় না। এই গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য হল সরকারী সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা। অর্থাৎ মনোবৃত্তিবাহী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সীমাবদ্ধ। বল বলেছেন: “Interest groups such as employer organisations and trade unions usually have some other primary purposes than that of influencing governments,… attitude groups are often formed with the prime purpose of influencing governmental decisions….. The political aims of attitude groups are generally more limited and more narrowly defined than those of interest groups.”

স্বার্থগোষ্ঠী ও চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী:

অনেকের অভিমত অনুসারে স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে কতকগুলি চাপসৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এই সমস্ত স্বার্থগোষ্ঠীকে বলে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী। সমাজ-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী আছে। কিন্তু এই সমস্ত গোষ্ঠীর সবগুলিই চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী নয়। সরকারের নীতিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাপসৃষ্টির মাধ্যমে প্রভাবিত না করা পর্যন্ত কোন স্বার্থগোষ্ঠীকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলা যায় না। যেমন, একটি শিক্ষক সংগঠন হল স্বার্থগোষ্ঠী। তবে শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ, সরকারের শিক্ষানীতি প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষক সংগঠন চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।

জিগলার এবং অ্যালমণ্ড ও পাওয়েল মতানুসারে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী:

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হল এমন একটি গোষ্ঠী যার সদস্যরা সমভাবাপন্ন এবং অভিন্ন স্বার্থের দ্বারা আবদ্ধ। অভিন্ন স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতেই সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ বা গোষ্ঠীভুক্ত হন। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে সরকারের নীতি নির্ধারণের বিষয়টিকে প্রভাবিত করতে এবং নিজেদের অনুকূলে আনতে উদ্যোগী হয়। সরকারী ক্ষমতা দখল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য নয়।

জিগলারের মতে, স্বার্থগোষ্ঠী হল এমন একটি সংগঠিত সমষ্টি যা তার সদস্যদের সরকারী পদে বসাবার চেষ্টা না করে সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। জিগলার (Zeigler) বলেছেন : “…an organised aggregate which seeks to influence the context of governmental decisions without attempting to place its members in formal governmental capacities.” অ্যালমণ্ড ও পাওয়েলের মতে, নির্দিষ্ট স্বার্থের বন্ধনে সংযুক্ত এবং এই সংযোগ সম্পর্কে সজাগ ব্যক্তিসমষ্টিকে স্বার্থগোষ্ঠী বলে। তাঁরা বলেছেন: “By interest group we mean a group of individuals who are linked by particular bonds of concern or advantage, and who have some awareness of these bonds.”

Rate this post