ছোট গল্প হিসেবে সার্থকতা: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটগল্পে আমরা দেখি যে, এর প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় পঞ্চাশের (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে) মন্বন্তর সকালে অফিস যাওয়ার পথে একদিন ফুটপাথে অনাহার-মৃত্যুর এক বীভৎস দৃশ্য দেখে ফেলে। এই দৃশ্য দেখে সে এতটাই আঘাত পায় এবং অপরাধবােধে দীর্ণ হয়ে পড়ে যে, তারপর থেকে ভালাে করে খেতে ও ঘুমােতে পারে না সে। অনাহারীদের বাঁচানাের জন্য সে ও তার স্ত্রী তাদের একবেলার আহার বিলিয়ে দিতে থাকে। মাইনের দিন সে মাইনের পুরাে টাকাটা সহকর্মী-বন্ধু নিখিলের মাধ্যমে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। শহরের ফুটপাথে কিছুদিন যাবৎ ঘুরে ঘুরে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দের লক্ষ করতে থাকে সে। এরপর ক্রমে ক্রমে একদিন সে অফিস এবং শেষে বাড়ি যাওয়াও বন্ধ করে দেয় এবং অনাহারীদেরই একজনে পরিণত হয়। মৃত্যুঞ্জয় ছেড়া ন্যাকড়া পরে, মুখ-ভরতি দাড়ি নিয়ে, মগ হাতে লঙ্গরখানায় গিয়ে মারামারি করে খিচুড়ি খায় আর ফুটপাথে পড়ে থেকে দুর্ভিক্ষপীড়িত সঙ্গীর মতো একঘেয়ে সুরে বলতে থাকে- “গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও!”

মন্বন্তরের কলকাতাকে কেন্দ্র করেই এই কাহিনিটি গড়ে উঠেছে। এই কাহিনিতে দেখা যায় দু-তিন মাসের স্বল্প পরিসরে মধ্যবিত্ত, সংসারী যুবক মৃত্যুঞ্জয় ক্রমে ক্রমে স্বেচ্ছায় ফুটপাথ-জীবনকে গ্রহণ করেছে। ছােটো আয়তনের এ গল্পে স্থান-কাল-ঘটনাগত ঐক্য ভালােভাবেই রক্ষিত হয়েছে। তিনটি চরিত্রের এই গল্পে ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘অতিকথন’, ‘তত্ত্ব’ বা উপদেশ অনুপস্থিত। গল্পশেষে মৃত্যুঞ্জয়ের বলা ছােটো বাক্য তিনটি পাঠককে চমকিত করে দ্রুত গল্পের ক্লাইম্যাক্সের চরমে পৌঁছে দিয়েছে। সুতরাং ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ নিঃসন্দেহে একটি শিল্প সার্থক ছোটগল্প।

Rate this post