প্রাণীর জৈবিক চাহিদাসমূহ থেকে যে প্রেষণা সৃষ্টি হয়, তাকে বলে জৈবিক প্রেষণা। আলাে, বাতাস, খাদ্য এইসকল চাহিদা ব্যক্তি জন্ম থেকেই নিয়ে বড়াে হয়। এই চাহিদাগুলি ছাড়া ব্যক্তির বাঁচা অসম্ভব। এই চাহিদার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে বর্ণিত হল—

  • আলাে, বাতাস, জল, খাদ্য ইত্যাদি জৈবিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে আপৎকালীন অবস্থায় প্রেষণা সৃষ্টি হয়।

  • উন্নত শ্রেণির প্রাণী, মানুষ এদের ক্ষেত্রে যৌন প্রেষণা সবসময় শুধু জৈবিক নয়, মাঝেমধ্যে সমাজ দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে যৌন প্রেষণার তাড়না নিম্নশ্রেণির প্রাণীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদার পর্যায়ে থাকে।

প্রধান তিনটি জৈবিক প্রেষণা ও তাদের শারীরবৃত্তীয় কারণ

(1) ক্ষুধা: ক্ষুধার অনুভূতি প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। খাদ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রাণীর এই তাড়নার নিবৃত্তি হয়। খাদ্যের অভাব দেখা দিলে পাকস্থলীর পেশিগুলির সংকোচন-প্রসারণ ঘটে। ফলে প্রাণীর মধ্যে ক্ষুধার জ্বালা অনভূত হয়।

ক্ষুধার শারীরবৃত্তীয় কারণ: ক্ষুধার শারীরবৃত্তীয় প্রধান দুটি কারণ হল—  (১) পাকস্থলীতে খাদ্যের অভাব এবং (২) রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস পাওয়া। অগ্ন্যাশয়ে উপস্থিত (আলফা) কোশ থেকে নিঃসৃত গ্রুকাগন রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে অগ্ন্যাশয়ের B (বিটা) কোশ থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে।

(2) তৃষ্মা: জলপানের ইচ্ছায় যে প্রেষণাটি কার্যকরী হয় তা হল তৃষ্মা। তৃষ্মাশক্তিশালী একটি জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় প্রেষণা। বিভিন্ন কারণে (মূত্র, ঘর্ম) দেহে জলের ঘাটতি দেখা দিলে প্রাণীর লালা নিঃসরণ হ্রাস পায় এবং মুখের ভিতরের অংশ শুকিয়ে যায়। ফলে প্রাণীর জলপানের ইচ্ছা জাগে।

তৃষ্মার শারীরবৃত্তীয় কার : (১) বিপাক ক্রিয়া পরিচালনার জন্য জলের অভাব, (২) ঘর্ম, মূত্র প্রভৃতি কারণে দেহ থেকে জল নির্গমনের জন্য পাকস্থলীতে উপযুক্ত পরিমাণ জলের অভাব।

(3) যৌনতা: শারীরবৃত্তীয় প্রেষণাগুলির মধ্যে অন্যতম এবং তাৎপর্যপূর্ণ হল যৌন প্রেষণা। এই প্রেষণাটি সম্পূর্ণভাবে যৌন হরমােন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কৈশােরকালে এবং যৌবনকালে যৌন গ্রন্থি থেকে বিশেষ প্রকার হরমােন নিঃসৃত হয়। তার ফলেই যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগে বা যৌন প্রেষণার সৃষ্টি হয়।

যৌনতার শারীরবৃত্তীয় কারণগুলি হল: (১) অ্যান্ড্রোজেন, ইস্ট্রোজেন প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার যৌন হরমােনের প্রভাব, (২) অপত্য সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা।

উপরের আলােচনা থেকে বলা যেতে পারে যে, জৈবিক প্রেষণা মানুষের জন্মগত। প্রত্যেকটি মানুষের কাজের পেছনে অনুপ্রেরণা জোগায় প্রেষণা। অনুপ্রেরণা পায় বলে মানুষ কাজ করতে উৎসুক হয়ে ওঠে। জৈবিক প্রেষণার তাড়নায় মানুষ তার দৈহিক চাহিদাগুলি পরিতৃপ্ত করে দৈহিক ভারসাম্য বজায় রাখে।

প্রেষণার বৈশিষ্ট্যগুলি । প্রেষণার প্রকারভেদ ।

প্রেষণার নির্ধারক বলতে কি বোঝো | প্রেষণার উল্লেখযােগ্য শর্ত আলোচনা করো 

সামাজিক প্রেষণা কী? যে-কোনাে ছয় প্রকার সামাজিক প্রেষণা সম্পর্কে আলােচনা করাে।

Rate this post