জাতীয় শিক্ষানীতি, ১৯৮৬-এর মূল্যায়নের জন্য দুটি কমিটি গঠিত হয়েছিল—(a) ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে রামমূর্তি কমিটির (b) ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের জনার্দন রেড্ডি কমিটি।

জনার্দন রেড্ডি কমিটির সুপারিশ গুলি POA (Programme of Action)-1992 নামে পরিচিত। POA-1992-এর পরিপ্রেক্ষিতে তদানীন্তন মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ্রী অর্জুন সিং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর থেকে পড়াশোনার বোঝা (Academic Burden) কমানোর জন্য প্রাক্তন UGC (University Grants Commission) চেয়ারম্যান যশপাল-এর সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করেন, যা যশপাল কমিটি নামে সমধিক পরিচিত। এই কমিটি শিক্ষার্থীদের উপর পড়াশোনা বোঝাস্বরূপ হয়ে ওঠার যে কারণগুলো দিয়েছিল সেগুলো নিম্নরূপ—

(১) অত্যন্ত অল্প বয়সে পড়াশোনা শুরু : বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অভিভাবকদের মনে এমন ধারণা জন্মেছে যে, পড়াশোনায় ভালো হতে হলে খুব অল্প বয়স থেকেই পড়াশোনা শুরু করতে হবে। তাই বর্তমানে নার্সারি স্তরের পড়াশোনার জন্য অনেক স্কুল স্থাপিত হয়েছে বা হচ্ছে, যার বেশিরভাগই বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত এবং সেখানে বাচ্চাদের ভর্তি করা হচ্ছে ২-২/ বছর বয়সে।

(২) স্কুলব্যাগের আকার: গত কয়েক বছর ধরেই এটা দেখা যাচ্ছে। যে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগের আকার, আয়তন অর্থাৎ তথ্য বোঝাই বই-খাতার ভার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও বাচ্চাদের দৈনন্দিন রুটিনে কাজের চাপ, যেমন— হােমওয়ার্ক শেষ করা, টিউশান বা কোচিং ক্লাসে যাওয়া, Extra Curricular Activities যেমন— সাঁতার, গান ইত্যাদির ক্লাসে যাওয়া ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(৩) পরীক্ষা পদ্ধতি: বর্তমান মূল্যায়ন ব্যবস্থায় এটা দেখা যাচ্ছে। যে, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের অনেকেই চান ছাত্রছাত্রীরা তথ্যনির্ভর বিষয় থেকে তথ্য মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে ভালো রেজাল্ট করুক। বর্তমান ঘটনাক্রমে এটাকে সমর্থন করছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে গঠনমূলক ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার প্রকৃত রূপ অধরাই থেকে যাচ্ছে।

(৪) আনন্দবিহীন শিখন: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কিছু তথ্য মুখস্থ করে যে পড়াশোনা তাতে আনন্দ পায় না। আনন্দবিহীন শিখনের শরিক তারা।

(৫) পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক: পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক যদি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা না হয় তবে শিক্ষার্থীদের উপর তার বােঝা চাপতে বাধ্য। কমিটির অভিমত অনুযায়ী প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকে প্রচুর নতুন নতুন ধারণার সন্নিবেশ ঘটলেও সেগুলোর ব্যাখ্যা যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তার অনেকাংশে ছাত্রছাত্রীদের বোধগম্য হয় না। ফলে তারা আনন্দহীন শিখনের (Joyless Learning) অংশীদার হয়।

আনন্দ পূর্ণ শিখন: আনন্দপূর্ণ শিখনের (Joyful Learning) জন্য। যশপাল কমিটির সুপারিশ গুলি নিম্নলিখিত —

  • পড়াশোনা শুরু করার ন্যূনতম বয়স বৃদ্ধি।
  • বিদ্যালয়ে পড়াশোনার বেশিরভাগ টা শেষ করতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা, যাতে বাড়িতে Homework শেষ করার মানসিক চাপ না থাকে।
  • তথ্যনির্ভর পাঠক্রম কে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম পরিবর্তন করা।
  • নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতি (Continuous Evaluation Process)-এর প্রবর্তন।
  • আনন্দপূর্ণ শিখন (Joyful Learning)-এর জন্য বিদ্যালয়গুলিতে সহপাঠক্রমিক বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান।

ক্ষুদ্র পরিকল্পনা : প্রতিটি শিশু যাতে কমপক্ষে ৪ বছরের সর্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষা লাভের জন্য বিদ্যালয় বা NFE Centre গুলোতে ভর্তির সুযোগ লাভ করতে পারে, তার জন্য পরিবারভিত্তিক এবং শিশুভিত্তিক পরিকল্পনাই POA-1992-তে ক্ষুদ্র পরিকল্পনা (Micro Planning) নামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন ব্লক, তালুক বা জেলাস্তরে এই ক্ষুদ্র পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করবে সে ব্যাপারে POA-1992-তে যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নলিখিত —

  • ব্লকস্তর বা জেলাস্তরে ক্ষুদ্র পরিকল্পনা যথাযথ প্রয়োগে Village Education Committee সর্বতোভাবে কাজ করবে।
  • বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সকল শিশু যাতে রোজ বিদ্যালয়ে আসে তা সুনিশ্চিত করা।
  • SC বা ST বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির শিশুরা যাতে বিদ্যালয়ে বিশেষ গুরুত্ব পায় তা দেখা।
  • বিদ্যালয়গুলির উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা করা। 
  • স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী করা।
  • সাহায্যকারী সম্পদের পুনর্নবীকরণ ঘটনা।
  • শিক্ষা প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটনা।
  • বিদ্যালয়ের উন্নয়নে যে-সমস্ত স্কিমগুলি চালু আছে, যেমন- Operation Blackboard, Jawahar Rojgar Yojana (JRY), ICDS ইত্যাদির যথাযথ রূপায়ণ।
Rate this post