স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন

ভাব-সম্প্রসারণ : স্বাধীনতা একটি জাতির অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা যেকোনাে জাতির জন্য গর্ব এবং এমন অনুপ্রেরণার বিষয়। অনেক সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, এমনকি রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য প্রয়ােজন যেমন নিরলস শ্রম-সাধনা তেমনি প্রয়ােজন যােগ্য নেতৃত্ব। সুতরাং স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করার প্রয়ােজনে আরও কঠিনতম সাধনা অপরিহার্য। 

মানুষমাত্রই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা সকলেরই একটি আরাধ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিমােক্ত চরণটি উল্লেখযােগ্য :

স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়? 

কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন করা একটি দুঃসাধ্য কাজ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নিপীড়িত, অত্যাচারিত জাতিকে মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে হয়। কিন্তু এ অর্জনই শেষ কথা নয়। বরং প্রয়ােজন স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়া। এজন্য আপামর জনসাধারণের ঐক্য একান্তভাবে দরকার। প্রয়ােজন হয়ে দাঁড়ায় সময়ােপযােগী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব । অতি জরুরি হয়ে পড়ে আর্থনীতিক স্বনির্ভরতা এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য তা বরাবরই কঠিন। বরং এরূপ প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবে পরাজিত শক্তি সুযােগের আশায় থাকে শেষ ছােবলের জন্য। আর তাদের দোসররা নানা দুর্বলতার সুযােগ খুঁজতে সদা সচেষ্ট থাকে। বিশ্বেও এ সময় নানা রাজনীতিক চক্রান্তের সৃষ্টি হয়, অসংখ্য সমস্যা জন্ম নেয় । প্রতিবেশী রাষ্ট্র সহায়তা করলেও তাতে অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থ নিহিত থাকে। এরূপ ক্রান্তিকালে অভ্যন্তরীণ বিবাদবিশঙ্খলা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। স্বাধীনতা অর্জনকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি জন্ম দেয় এক প্রতিকূল পরিবেশ। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনীতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনীতিক অস্থিরতায় উপযুক্ত নেতৃত্বের সংকট ঘটতে পারে। ফলে গণমানুষের চাওয়া-পাওয়া চরমভাবে উপেক্ষিত হয়। রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখা দেয় ব্যাপক হতাশা, অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানাবিধ সমস্যা। সর্বোপরি জাতীয় ঐক্যে চিড় ধরে। জাতীয় উন্নতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এমনকি দেশের অর্থনীতির ওপর আঘাত আসে, উৎপাদন কমে যায়। ফলে জন্ম নিতে পারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের। সুতরাং এরূপ প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার মর্যাদা গুরুত রক্ষার প্রশ্ন বড়াে হয়ে ওঠে। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়ােজনে সর্বস্তরের জনগণকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে মাঠে-ঘাটে ময়দানে কল-কারখানায় সর্বত্রই। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রম দিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। শিল্পে, বাণিজ্যে দেশকে উন্নত করতে হবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই আরাধ্য স্বাধীনতাকে ব্যর্থতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতির ঐক্যবদ্ধ ভূমিকাই প্রধান।

অনেক কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব সকলের । সতরা এই যেকোনাে ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তবেই স্বাধীনতা চির-অম্লান হয়ে থাকবে।

Rate this post