শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা

[ সংকেত : ভূমিকা; গণমাধ্যম পরিচিতি; বিভিন্ন গণমাধ্যমের অবদান; শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্র; শিক্ষাবিস্তারে বেতার বা রেডিও; শিক্ষাবিস্তারে দূরদর্শন বা টেলিভিশন; শিক্ষাবিস্তারে চলচ্চিত্র; গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব; উপসংহার।]

ভূমিকা : যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় মানুষের যাপিত জীবনের দৃশ্যপট। এককালের বিলাস আরেককালে উপহাস বলে গণ্য হয় । চলমান সময়ের এটাই হলো পরিবর্তনের ছাপ। নতুন এসে যেমন পুরাতনের স্থান দখল করে নেয় তেমনি বিজ্ঞান এসে মানুষের পুরোনো ধ্যান-ধারণা বদলে চিন্তার নতুন ক্ষেত্র দখল করে নিল। মানুষ বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় শামিল হলো, মেতে উঠল আবিষ্কারের নেশায় । সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ হলো । বস্তুত গণশিক্ষার উপযোগিতা এবং প্রয়োজনীয়তা আজ সর্বদেশে স্বীকৃত । গণশিক্ষার জন্য গণমাধ্যম অপরিহার্য— যা বাতাসের মতো নিরপেক্ষ, পানির মতো সর্বত্রগামী এবং আলোর মতো দ্রুত বিস্তার লাভ করতে সক্ষম। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত, সর্বস্তরের জনগণকে প্রভাবান্বিত করতে সবচেয়ে বড়ো শক্তি হলো গণমাধ্যম। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সব মানুষের জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল।

গণমাধ্যম পরিচিতি : গণমাধ্যম হলো প্রচার মাধ্যম— যা একই সঙ্গে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম । বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় গণমাধ্যম হলো রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও চলচ্চিত্র । এর সাথে হাল যুগের কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার বিভিন্ন সাময়িকী, ই-বুক ইত্যাদি গৌণ গণমাধ্যম হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে । এসব গণমাধ্যমের দ্বারা দূরের মানুষের কাছে যেমন সহজেই বার্তা পাঠানো যায় তেমনি এটা বিনোদন মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত ও বিশেষভাবে বিবেচ্য । তাছাড়া শিক্ষাবঞ্চিত গ্রামীণ কৃষকদের চাষাবাদ সম্বন্ধে আধুনিক ধারণা লাভ, নারীদের প্রজনন ও মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সেবাসহ কিশোর- কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যাকে তুলে ধরে অনির্বচনীয় মঙ্গল সাধন করে গণমাধ্যম । একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি হলো গণমাধ্যম । জনগণের মতামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে দেশ ও সমাজের শিল্প-সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রতিফলন ঘটে গণমাধ্যমে। গণমাধ্যমের দ্বারাই এক দেশের সংস্কৃতি-কৃষ্টি অন্য দেশে পৌঁছায়। মানুষের সাথে মানুষের ভাবের আদান-প্রদান ঘটে । তাই জ্ঞানমূলক শিক্ষাবিস্তারে এবং সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধনে গণমাধ্যমের কার্যকরী ভূমিকা অনস্বীকার্য ।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের অবদান : বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সম্প্রতি শিক্ষা-বিস্তারে গণমাধ্যম আমাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে । বিশেষ করে আমাদের উন্নয়নশীল, অর্ধশিক্ষিত বাংলাদেশে গণমাধ্যম এক উন্মুক্ত শিক্ষা নিকেতন । এখানে যারা স্বল্পশিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, সংবাদপত্র তাদের জ্ঞানবুদ্ধি বাড়িয়ে তোলে, তারা বিনোদনের মধ্য দিয়ে সহজাত শিক্ষালাভে ঋদ্ধ হয় । বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র এই ত্রয়ী মাধ্যমের দ্বারা একদম নিরক্ষররাও উপকৃত হতে সক্ষম । বেতার বা রেডিওতে সর্বস্তরের শ্রোতারা শুনে শিখতে ও জানতে পারে অনেক নতুন নতুন বিষয় সম্বন্ধে । শোনার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি দেখতে পারে বলে দূরদর্শন বা টেলিভিশন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং তার আবেদনও সর্বাপেক্ষা জোরালো। এককথায়, পত্রিকায় পড়ে, রেডিওতে শুনে আর টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে দেখে-শুনে শিখতে পারে মানুষ । তাই প্রচারমাধ্যম হিসেবে এই ত্রয়ীর অবদান সর্বাপেক্ষা অধিক বলে বিবেচ্য। সম্প্রতি স্মার্ট মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এবং ফেসবুকে প্রচারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্র : প্রতিদিনের দুটি বিস্ময়কর ঘটনার মধ্যে একটি হলো সূর্যোদয়, অন্যটি হলো সংবাদপত্র। প্রিন্টমিডিয়া হিসেবে সংবাদপত্র চলমান পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনার সঙ্গে আমাদের রোজ পরিচয় করিয়ে দেয়। তা যেমন চমকপ্রদ তেমনি নিত্য-নতুন অভিজ্ঞতায় ভরপুর । রাজনীতিক উত্থান-পতন, যুদ্ধবিগ্রহ, বিদ্রোহ, বিপ্লব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্নীতি, রাহাজানি, ধর্ষণ, খুন, দেশের সামাজিক এবং আর্থনীতিক অবস্থা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিসহ খেলাধুলা ও বিনোদন সংবাদপত্রের আওতাভুক্ত। সংবাদপত্র গণশিক্ষার একটি বলিষ্ঠ হাতিয়ার । এছাড়াও আইন-আদালত, শেয়ার মার্কেট, বাজার দর, কর্মখালির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ কৃষিবিপ্লব ও বাণিজ্যিক প্রতিবেদনের দ্বারা মানুষকে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করে তোলে। সংবাদপত্র মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, সামাজিক চিত্র সম্বলিত নিত্য-নতুন সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও তথ্যবহুল অসংখ্য বিষয় জনসমক্ষে তুলে ধরে । এটি জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ গড়ে তোলে। তাছাড়া, সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র, জ্ঞানী-গুণী বিশেষজ্ঞদের কলাম, অভিমতের তর্কবিতর্ক জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে- যা প্রগতিশীল চিন্তাকে শানিত করে। দুর্ঘটনা, অপহরণ, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিসহ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাপ্রবাহ পত্রিকায় প্রকাশ পায় বলে মানুষ দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত হতে পারে, যা অনিবার্য নাগরিক জ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত। প্রিন্টমিডিয়া বা দৈনিক সংবাদপত্র, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্র-পত্রিকা পড়ার জন্য যেহেতু ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন, তাই শিক্ষার সঙ্গে প্রিন্টমিডিয়ার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রচারের বিভিন্ন মাধ্যম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং তা সংবাদ প্রাপ্তিতে সহজলভ্য বিধায় প্রিন্টমিডিয়ার গ্রাহকের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম । তাছাড়া কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ত্রুটিপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে- যা প্রচারের নামে অপপ্রচার বলে গণ্য হয় । সর্বোপরি, সংবাদপত্র শিক্ষাবিস্তার ও সামাজিক তথ্যগত সেবাদানে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে ।

শিক্ষাবিস্তারে বেতার বা রেডিও : আধুনিক বিজ্ঞান নির্ভর যুগে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভূমিকা রাখতে পারে বেতার । উচ্চস্তর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত, শহরের অট্টালিকা থেকে গ্রামের দরিদ্র কুটির পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে বেতার। বেতারের শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক অবদান প্রমাণিত। বেতার খুব সহজেই জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে দেশ-বিদেশের নানা খবর এবং জ্ঞান- বিজ্ঞানের নিত্য-নতুন তথ্য। বেতারে প্রচারিত শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীর হৃদয়-মনকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে । তাছাড়া ভাষাশিক্ষা তথা শুদ্ধ উচ্চারণ শেখাতে বেতার সবিশেষ উপযোগী । বিদ্যার্থীদের বয়স ও চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করলে তা বহুলাংশে শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয় হবে। নিরক্ষরদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে রেডিও বিশেষ সহায়ক হতে পারে । বিভিন্ন আসরের মাধ্যমে গণশিক্ষা প্রচার বেতারের জনপ্রিয় পন্থা। বিভিন্ন শিশুতোষ অনুষ্ঠানের সঙ্গে রেডিও টুডে, রেডিও ফুর্তি, সম্প্রতি বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছে । গণমাধ্যম হিসেবে বেতারের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিবিসি বেতার অনুষ্ঠান শোনার জন্য হাটের নাম বদলে হয়ে গিয়েছিল বিবিসির হাট । বেতারযন্ত্রের শক্তিশালী ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে দেখেছিল ও বুঝেছিল । বেতার মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের চেতনাকে উজ্জীবিত করতে সম্পূর্ণ সক্ষম হয়েছিল । রেডিও সস্তা এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজলভ্য গণমাধ্যম। বৃক্ষরোপণ, মাছ চাষ, উন্নত জাতের হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালন, পরিবার পরিকল্পনা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে জনগণ রেডিও শুনে বেশি উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং হচ্ছে । এ ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্যে— ‘দেশ আমার মাটি আমার’, ‘সুখী পরিবার’, ‘বৃক্ষ রোপণ’, সুযোগ চাই মানুষ হব’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য । তাই নির্দ্বিধায় স্বীকার্য যে, রেডিও গণযোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা শিক্ষাবিস্তারে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে । 

শিক্ষাবিস্তারে দূরদর্শন বা টেলিভিশন : টেলিভিশন বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার । গণশিক্ষা বিস্তারে বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এ শক্তির প্রভাব অপ্রতিরোধ্য । স্বনামধন্য স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সরাসরি টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার ফলে গ্রামের সুযোগ বঞ্চিত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও বিদ্যার্থীরা অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে, যা তাদের যুগোপযোগী শিক্ষার বিকাশকে সমৃদ্ধ করছে । টেলিভিশন চিত্তবিনোদনের উপকরণ হলেও তা থেকে মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয় এবং বিনোদনের মাধ্যমে প্রচারিত শিক্ষা মন ও মস্তিষ্কে ভালোভাবে গেঁথে যায় বলে তা স্থায়ী হয় । টেলিভিশনে চলমান দৃশ্যের সঙ্গে বাস্তব জীবনের স্পর্শ জড়িয়ে থাকে বলেই তা মানুষকে এত বেশি আকর্ষণ করে। এর মাধ্যমে তিক্ত সময় আনন্দময় হয়ে ওঠে। শিক্ষা ও জ্ঞানবিস্তারের মাধ্যমে জাতি গঠনে টেলিভিশন ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পারে । গণশিক্ষা কর্মসূচি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতো বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করতে পারে দূরদর্শন । উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে টেলিভিশনে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয়জীবনে এক বিরাট অবদান রাখছে । টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠান সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । আজকাল টেলিভিশনে নানা ধরনের টক-শো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । টেলিভিশন জনমত গঠনের মাধ্যমে জনগণের বিভ্রান্তি দূর করে, জনগণের মতামত স্পৃহাকে অধিকতর জোরালো করে এবং জনগণকে করে তোলে সচেতন ও আত্মপ্রত্যয়ী ।

শিক্ষাবিস্তারে চলচ্চিত্র : চলচ্চিত্র এক আকর্ষণীয় গণমাধ্যম । চলচ্চিত্রে মানুষের জীবনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে । চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড়ো প্রভাব হলো মানুষের মনোভাব ও অভিরুচিকে বদলে দেওয়া। মানুষ বিদেশি ভাষা সহজে রপ্ত করতে পারে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে । পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, অরণ্যসহ নানা দর্শনীয় অদেখা স্থান ভ্রমণ না করেও চলচ্চিত্রের দ্বারা পরিচিত হওয়া যায় । এতে জ্ঞান যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় । চলচ্চিত্র মানবীয় ও বোধমূলক নৈতিক শিক্ষা দানে দার্শনিকের ভূমিকা পালন করে । সৎ চলচ্চিত্র মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে, মহৎ ও উন্নত জীবনবোধে উজ্জীবিত করে মনুষ্যত্ববোধের উন্মেষ ঘটায় । আর্ট ফিল্ম উচ্চ রুচি ও গভীর বোধের আলোকে সৃষ্ট বিধায় তা দর্শকের হৃদয়ে অভিনব ব্যঞ্জনা জাগায়। তাই সঠিক শিক্ষাবিস্তারে চলচ্চিত্র এক বিচিত্র ও প্রোজ্জ্বল মাধ্যম।

গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব : গণমাধ্যমের মধ্যে দৃশ্য-মাধ্যম সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর, কুসংস্কারাচ্ছন্ন; জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এখানে ব্যাপকভাবে পরিদৃশ্যমান। অথচ এখানকার দৃশ্য-মাধ্যমগুলো শিক্ষামূলক না হয়ে ব্যাপকভাবে বিনোদনমূলক, এটা ভীষণ পরিতাপের বিষয়। বিশেষ করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অত্যন্ত নিম্ন রুচির বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে । যার বিরূপ প্রভাবে সমাজে অবক্ষয় দেখা দেয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ ভারতীয় ‘স্টার জলসার’ কথা বলা যায় । যার নেতিবাচক প্রভাবে সংসারে অশান্তি, অবিশ্বাস, পরকীয়া প্রভৃতি কীটের মতো বাসা বেঁধে আছে । অশ্লীল চলচ্চিত্র নৈতিক ও আদর্শিক সত্তাকে বিনষ্ট করে । আর কুরুচিপূর্ণ নাচ-গান এবং নগ্নতা যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় । অন্তসারশূন্য দেহসর্বস্ব বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের প্রভাবে কিশোর-তরুণেরা তাদের সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে ফেলে । বিশেষ করে চলমান পর্নোগ্রাফির রুচিহীন নগ্নতা বর্তমান সমাজকে রাহুর মতো গ্রাস করে ফেলছে । চলচ্চিত্রের অহেতুক খুন-জখম, রাহাজানি, ডাকাতি, শালীনতা বর্জিত নায়ক-নায়িকার উদ্দাম প্রণয়চিত্র সমাজে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রভাবিত করছে। টেলিভিশনগুলোতে যেমন ডিশ অ্যান্টেনা সংযুক্ত হয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে বিজাতীয় সংস্কৃতি তেমনি চলচ্চিত্রগুলো বিদেশি অনুকরণে হয়ে পড়েছে কুরুচিপূর্ণ । সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এই ধরনের অসংগতি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ । হলুদ সাংবাদিকতা বলে একটা কথা আছে । যার মাধ্যমে অসত্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উপস্থাপন করা হয় । জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অসৎ মহল হীনস্বার্থ কায়েম করতে চায় । বিদ্বেষমূলক লেখা লিখে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়া হয়। তাছাড়া উদ্ভট নগ্ন ছবি ও অশ্লীল আজগুবি কল্পকাহিনিসহ নিষিদ্ধ বিষয়াবলি এমনভাবে পরিবেশিত হয়, যা বিদেশি অপসংস্কৃতিকেও হার মানায়। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড দিন দিন আমাদের দেশ-সমাজ ও সংস্কৃতিকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার : মানুষের সাংস্কৃতিক মান উন্নয়নে এবং সভ্যতা বিকাশে গণমাধ্যম প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু, পুষ্টি ছাড়া জাতি অসুস্থ এবং শিক্ষা ছাড়া জাতি মৃত, সেহেতু গণমাধ্যম জাতির প্রাণ সঞ্চালনের কাজ করতে পারে। রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে একটি হলো গণতন্ত্র, যা গণমাধ্যমের সাহায্যে বিকশিত হতে পারে। বাকস্বাধীনতা রক্ষাসহ ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম অপরিহার্য। পরিশেষে প্রত্যাশা এই যে, ভবিষ্যতে শিক্ষাসহ জাতীয় অগ্রগতিতে ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের দ্বারা তার ধারাবাহিক অবদান বজায় রাখবে।

Rate this post