বেকার সমস্যা
বেকার সমস্যা : কারণ ও সমাধান

[সংকেত : ভূমিকা; বেকার বলতে যা বোঝায়; বাংলাদেশের বেকারত্বের স্বরূপ; বেকারত্বের আর্থ-সামাজিক প্রভাব; বাংলাদেশের বেকার সমস্যার কারণ; বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধান; উপসংহার।]

ভূমিকা : বেকারত্ব মানবজীবনের এক দুর্বিষহ অভিশাপের নাম। বেকার ব্যক্তি দেশ ও জাতির বোঝাস্বরূপ। সে নিজের কাছে যেমন অসহায় তেমনি পরিবারের কাছে অপরাধী । বেকারত্ব যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথে এক দুর্লঙ্ঘ্য বাধা । বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের প্রধান সমস্যাগুলোর অন্যতম হলো বেকার সমস্যা। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের জনসংখ্যাবহুল উন্নয়নশীল দেশে বেকার সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এদেশে কর্মক্ষম জনশক্তির অনুপাতে কলকারখানা, বাণিজ্য সংস্থা, অফিস-আদালত তথা কর্মসংস্থানের সুযোগ অপ্রতুল। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন হবে। তাই ব্যক্তিত্বের বিকাশ, আত্মশক্তি অর্জন, আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি এবং দেশের আর্থনীতিক সমৃদ্ধি ও জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে বেকারত্ব লাঘবের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

বেকার বলতে যা বোঝায় : ফারসি উপসর্গ ‘বে’ আবার ফারসি শব্দ ‘কার’ যুক্ত হয়ে ‘বেকার’ শব্দটি তৈরি হয়েছে । ‘বে’ অর্থ হীন আর কার অর্থ কর্ম, অর্থাৎ বেকার অর্থ কর্মহীন । অর্থনীতির পরিভাষায় সেই বেকার, যে কাজ করার যোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ পায় না । বস্তুত কোনো দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয় । সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেকারত্ব বলতে এমন অবস্থাকে বোঝায়, যাতে সমাজে কর্মক্ষম লোক যথেষ্ট থাকে কিন্তু কাজ থাকে না । অর্থাৎ, যার কোনো কাজ নেই সেই বেকার আর বেকার অবস্থাটাই হলো বেকারত্ব ।

বাংলাদেশে বেকারত্বের স্বরূপ : বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ছোটো দেশটিতে প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি লোকের বাস । এখানে মানুষের মাথাপিছু গড় আয় মাত্র ১৩১৬ মার্কিন ডলার । এদেশে শতকরা প্রায় ৪৪.৭ ভাগ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে । তাই বেকার সমস্যা বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে । পর্যাপ্ত শিল্প-কারখানা না থাকায় এবং স্বকর্মসংস্থান ও সরকারি চাকরির সীমিত সুযোগের কারণে এদেশে কর্মক্ষম অধিকাংশ মানুষ কাজ খুঁজে পাচ্ছে না । কর্মক্ষম লোকের প্রায় ৪০% বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত । বাংলাদেশের বেকারত্বের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো প্রচ্ছন্ন ও মৌসুমি বেকারত্ব । বাংলাদেশের শ্রমশক্তির অন্তত ৪৮.১০% কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত । কৃষিতে কাজ ও ফসল কর্তন মৌসুমের পর করার মতো কোনো কাজ থাকে না । ফলে কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমশক্তি প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের শিকার । আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিক্ষিত বেকার । এদেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৭০%-এর হাতে প্রত্যাশিত পেশা বা বৃত্তি নেই । দিন দিন এ অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করছে। সুতরাং বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রগতি ও আর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বেকারত্বই এখন একমাত্র বাধার বিন্ধ্যাচল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেকারত্বের আর্থ-সামাজিক প্রভাব : বেকারত্বের অমঙ্গল অন্ধকার ব্যক্তিগত জীবনে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয় । এ হতাশা থেকে তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বৈধ উপায়ে উপার্জনের সংস্থান করতে না পেরে অনেকে চোরাচালানি, ছিনতাই, রাহাজানির পথে পা বাড়ায় । বেকারত্বের ফলে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ে। বেকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ যুবকরা রাজনীতিক দলের সাথে যুক্ত হয়ে মাস্তানি ও সন্ত্রাসের প্রসার ঘটায়। দেশের বিশাল জনশক্তি উৎপাদনশীল খাতে অবদান রাখতে না পারায় জাতীয় আয় হ্রাস পায় । ফলে দেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন ব্যাহত হয় । এছাড়াও, বেকারত্বের কারণে গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় । কথায় বলে, অভাবে স্বভাব নষ্ট । মূলত তাই, অভাবের তাড়নায় মানুষ অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়, যা দেশের জন্য নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক । আর এরূপ অবস্থায় মানুষ সমাজ ও দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে । সর্বোপরি বেকারত্বের ফলে পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় । বেকারত্বের পরোক্ষ প্রভাবে সমাজে দাম্পত্য কলহ, বিবাহ- বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, ভিক্ষাবৃত্তি প্রভৃতি সমস্যা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানুষ আইনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে । বস্তুত বেকারত্বের নেতিবাচক প্রভাবে দেশের সর্বস্তরে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকে ।

বাংলাদেশে বেকার সমস্যার কারণ : বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও জনবহুল দেশে বেকার সমস্যার বহু কারণ বিদ্যমান এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি সমস্যা অপরটির সাথে সম্পৃক্ত বিধায় আরও বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে । নিম্নে এর প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ : বাংলাদেশে বেকারত্বের অভিশাপ সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও বঞ্চনার কারণে । ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তি এদেশের প্রচলিত শিল্পকে ধ্বংস করে এদেশকে বিদেশি পণ্যের বাজারে পরিণত করে । পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও সুপরিকল্পিতভাবে এদেশকে আর্থনীতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে রাখার অপচেষ্টা চালায় । এভাবে ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনা বাংলাদেশে বেকারত্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে ।

মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি : জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম । ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোটো এই দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,০৩৩ জন লোক বাস করে । জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে পৃথিবীতে বাংলাদেশের স্থান বারোতম । এদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১.৯০% । প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না । ফলে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে ।

ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল সেই ব্রিটিশ আমলে । আজও এ শিক্ষাব্যবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি । একমুখী শিক্ষাব্যবস্থার ফলে আমাদের দেশে আধুনিক যুগের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানব-সম্পদ গড়ে উঠছে না । তাছাড়া, আমাদের দেশের সনদসর্বস্ব তথাকথিত শিক্ষিতরা চাকরি ভিন্ন অন্য পেশায় নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক । ফলে চাকরির কোটা যেখানে সীমাবদ্ধ, সেখানে প্রতিবছর জ্যামিতিক হারে পরীক্ষা পাশের সংখ্যা বৃদ্ধি বেকার, সমস্যাকে আরও বেশি ঘনীভূত করে তুলছে ।

রাজনীতিক অস্থিতিশীলতা : বাংলাদেশের রাজনীতিক দলগুলো একে অপরের প্রতি অসহিষ্ণু । বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা ও অহেতুক মতানৈক্যের কারণে জাতীয় কোনো সমস্যা সমাধানে রাজনীতিক দলগুলো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না । অধিকন্তু তাদের ডাকা অযথা হরতাল ও ধর্মঘটের কারণে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ফলে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্ত হয় । শিল্পায়নের এ যুগে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া কর্মসংস্থান সম্ভব নয় । তাই বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

কুটির শিল্পের অবলুপ্তি : বাংলাদেশের কুটিরশিল্প ছিল ঐতিহ্যবাহী । কামার, কুমার, কাঁসারি, শাঁখারি, তাঁতি, বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে হাজার হাজার মানুষ নীরবে-নিভৃতে নিজ নিজ চিরাচরিত পেশায় নিয়োজিত ছিল । যন্ত্রসভ্যতা ও শিল্প বিপ্লবের ফলে এদেশের কুটিরশিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে । ঐতিহ্যবাহী দেশীয় পণ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে কলে তৈরি বিভিন্ন পণ্য ও উপকরণ । ফলে কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত অসংখ্য মানুষ তাদের সহজাত পেশা হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ : বাংলাদেশে নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে । বন্যা, খরা, নদী ভাঙন প্রভৃতি কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটায় এবং গ্রামীণ জীবনে বেকারত্ব ডেকে আনে । বিশেষত নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ জমিজমা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে । দুর্যোগ কবলিত এসব নিঃস্ব মানুষ দেশে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ।

হীন মানসিকতা : আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে অশিক্ষিত ও মূর্খদের কাজ বলে মনে করা হয় । যে কারণে লেখাপড়া করে অফিস-আদালতের বাইরে শারীরিক শ্রমমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করার কথা কেউ ভাবতেই পারে না । অনেকে শারীরিক কাজকে অসম্মানজনক মনে করে বিধায় দৈহিক শ্রমসাপেক্ষ কাজে নিয়োজিত হতে চায় না । ফলে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায় । 

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধান : বেকার সমস্যার কারণ চিহ্নিত করা যতটা সহজ এ সমস্যা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে দেওয়া ততটা সহজ নয় । তবে একথা সত্য যে, বাস্তবমুখী দূরদর্শী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে বেকার সমস্যায় জর্জরিত অনেক দেশই উন্নয়নের স্রোতে অবগাহন করছে। প্রকৃতপক্ষে বেকার সমস্যার কারণগুলো যথাসম্ভব দূর করতে পারলেই এ সমস্যার ভয়াবহতা বহুলাংশে হ্রাস পাবে । বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানকল্পে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গৃহীত হতে পারে :

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না । অতএব, জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশ রক্ষা পেতে পারে । তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলাসহ জন্মনিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ।

স্বকর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচি গ্রহণ : প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রেরণা ও প্রেষণা যোগানো গেলে আমাদের বেকার তরুণ শ্রেণি স্বকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে । ডেইরি ও পোলট্রি ফার্ম স্থাপন, মৎস্য চাষ, নার্সারি, মৌ-চাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋণ দানের ব্যবস্থা করা ও আনুষঙ্গিক সরকারি সহায়তার মাধ্যমে স্বকর্মসংস্থানকে বেকারত্ব লাঘবের উপায় হিসেবে অবলম্বন করা যায় ।

কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ : দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে হস্তজাত পণ্যের বিশাল বাজার ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে । কুটির শিল্পের পুনর্জাগরণ ঘটানো গেলে বেকারত্ব লাঘবের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে । এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে ।

জনশক্তি রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ : লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে কর্মরত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে । তবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে এক্ষেত্রে আরও অধিক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ মধ্যপ্রাচ্যে দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । পরিকল্পিত প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলে এবং সরকারি উদ্যোগে জনশক্তি রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণ করলে আমাদের দেশে বেকারত্ব বহুলাংশে হ্রাস পাবে এবং সেই সাথে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের আর্থনীতিক সমৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে ।

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা : আমাদের বিশাল শ্রমশক্তি থাকলেও শ্রমের মূল্য এখানে খুবই কম । উন্নত বিশ্বের উদ্যোক্তারা এখন মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে তাদের শিল্প-কারখানা স্থাপন করছে । বাংলাদেশ ইপিজেড গঠন করে বেশকিছু বৈদেশিক উদ্যোক্তাকে আকৃষ্ট করেছে সত্য, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল । তাছাড়া রাজনীতিক অস্থিরতা, হরতাল, ধর্মঘট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ অন্যান্য বাধা অপসারণ করে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে । তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে । ফলে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

উপসংহার : বেকারত্ব বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথে সবচেয়ে বড়ো বাধা । সরকার এ সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করছে । যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণদানের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে । আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে ঋণপ্রাপ্তিকে সহজতর করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বেকার সমস্যার ন্যায় এ ভয়াবহ সমস্যা সমাধান কেবল সরকারের একারই দায়িত্ব নয়। বরং দেশের সমাজ সচেতন শিক্ষিত ও ধনিক শ্রেণিকেও এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ হয়তো একদিন উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে যাবে চিরকাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধির স্বপ্নলোকে।

Rate this post