বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা

অথবা, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা

অথবা, বাংলাদেশে শিক্ষার মান ও বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা

অথবা, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ

[সংকেত : ভূমিকা; বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ; ইসলামি বা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা; ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা; বর্তমানে দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি; বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষার মান; শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ; উপসংহার ।]

ভূমিকা : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড । শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না । মানুষকে জ্ঞানের আলো দান করে সমাজ থেকে কুসংস্কার দূরীভূত করতে ভূমিকা রাখে শিক্ষা । শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে । বৰ্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শিক্ষা ব্যতীত টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব । সর্বস্তরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে না পারলে দেশ ও জাতিকে আলোর পথে নিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়বে । তাই অশিক্ষার অন্ধকার দূর করে শিক্ষার আলো জ্বালাতে হবে প্রতি ঘরে । তবেই দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে ।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্বরূপ : বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত । বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দুটি ধরন দেখা যায়—

(ক) সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা ও
(খ) কারিগরী শিক্ষাব্যবস্থা ।

(ক) সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা : সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট । যথা :

১. প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা : প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৫ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত হয় । প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য অত্যাবশ্যক হওয়ায় একে ‘সর্বজনীন শিক্ষা’ বলা হয় । প্রাথমিক স্তরে পঞ্চম শ্রেণি শেষে জাতীয়ভাবে অভিন্ন প্রশ্নে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । এটি প্রাইমারি এডুকেশন সার্টিফিকেট (PEC) নামে পরিচিত।

২. মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা : শিক্ষার দ্বিতীয় স্তরটি গঠিত হয় মূলত সাত বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমন্বয়ে । এর মধ্যে প্রথম তিন বছরের শিক্ষা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ধরা হয় । একে বলা হয় জুনিয়র মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা । এখানে অষ্টম শ্রেণি শেষে ‘জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট’ পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় । একে জেএসসি বলা হয় । পরবর্তীতে ২ বছরের শিক্ষা নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত ধরা হয় । একে বলা হয় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা । দশম শ্রেণির শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য এসএসসি পরীক্ষার আয়োজন করা হয় । এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা, যার মেয়াদ থাকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত । দ্বাদশ শ্রেণি শেষে এইচএসসি পরীক্ষা হয় এবং শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হয় ।

৩. উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা : শিক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় স্তরটি গঠিত হয় ২-৬ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কেন্দ্ৰ করে । উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ভর্তিচ্ছুদের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৩ বছরের ডিগ্রি পাশ কোর্সে ভর্তি হতে হয় এবং অনেকে ৪ বছরের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয় । ডিগ্রি/অনার্স পাশ করার পরে ডিগ্রি পাশকৃতদের জন্য রয়েছে ২ বছরের মাস্টার্স কোর্স এবং অনার্স পাশকৃতদের জন্য রয়েছে ১ বছরের মাস্টার্স কোর্সের প্রোগ্রাম । পরবর্তী সময়ে এমফিল এবং পিএইচডি করারও ব্যবস্থা রয়েছে । আগ্রহী শিক্ষার্থীগণ মাস্টার্স পর্বে অধ্যয়ন শেষে এমফিল এবং ৩-৪ বছরের জন্য পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হতে পারে । 

(খ) কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের দেশে বর্তমানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা প্রচলিত আছে । এর পাশাপাশি কারিগরি, প্রকৌশলী, ডাক্তারি, ভোকেশনাল ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলেই বৃত্তিমূলক শিক্ষায় প্রবেশ করতে পারে । এ ধরনের শিক্ষার মধ্যে রয়েছে— কুটিরশিল্প, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, নার্সারি, ধাত্রীবিদ্যা, সেলাইয়ের কাজ, কাঠমিস্ত্রির কাজ, দর্জির কাজ ইত্যাদি । হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব কাজ শেখানো হয়, যেন পরবর্তীতে তারা আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিতে সক্ষম হয় ।

ইসলামি বা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা : ১৭৮০ সালে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন হয় । মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা ইসলাম ধর্মভিত্তিক শিক্ষার সাথে সাথে সাধারণ শিক্ষাও গ্রহণ করে থাকে । জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর সুপারিশের আলোকে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার, সংস্থাপন এবং : অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েকটি স্তর লক্ষ করা যায়। এগুলো হলো : : প্রাইমারি স্তর : ইবতেদায়ি শিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর : যথাক্রমে দাখিল ও আলিম শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার স্তর : ফাজিল ও কামিল শিক্ষা ।

ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা : বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমও রয়েছে । অনেক শিক্ষার্থীই ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করে থাকে । এক্ষেত্রে ‘ও’ লেভেলকে এসএসসি এবং ‘এ’ লেভেলকে এইচএসসি’র সমমান বিবেচনা করা হয় ।

বর্তমানে দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি : বর্তমানে আমাদের দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ‘সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি’র আওতায় পরীক্ষা নেওয়া হয় । এ পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের যেকোনো বিষয়ের শিক্ষনফলের ওপর ভিত্তি করে পূর্বের ‘কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপদ্ধতি’র পরিবর্তে যেকোনো একটি উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্পের প্রেক্ষিতে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতাভিত্তিক প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয় । অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এ ধরনের প্রশ্নপদ্ধতিকে ‘সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি’ নামে অভিহিত করেন। প্রাথমিক স্তরে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় আবার দুভাবে প্রশ্ন করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে যোগ্যতাভিত্তিক এবং যোগ্যতাভিত্তিক বহির্ভূত। উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা পদ্ধতিতে সেমিস্টারভিত্তিক ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্ষকে ভিত্তি করে শিক্ষা পদ্ধতি চলমান আছে। 

বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষার মান : আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণশীল হলেও শিক্ষার গুণগত মানের অবনতি লক্ষ করা যায়। এর কারণ— ১. সুস্পষ্ট ও বিস্তৃত শিক্ষানীতির অভাব, ২. শিক্ষা সংস্কারমূলক পদক্ষেপের অভাব, ৩. রাজনীতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি। আমাদের দেশে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার স্তরগুলোতে কোনো সামঞ্জস্য না থাকায় গোটা শিক্ষাব্যবস্থায়ই এক অরাজকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার স্তরকে অনেক আগেই জাতীয়করণ করা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরকে এখনও অবহেলিত স্তর হিসেবেই রাখা হয়েছে । এ স্তরে হাতে গোনা কিছু স্কুল ও কলেজ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও মান দুটি প্রসঙ্গেই তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বেসরকারি স্কুলগুলোতে রয়েছে উপযুক্ত শিক্ষকমণ্ডলীর অভাব । সাধারণ প্রাইমারি এবং ইংরেজি মাধ্যমের লেখাপড়ার মানে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে, যার সামঞ্জস্য বিধানেরও কোনো উদ্যোগ সরকারের নেই । আধুনিক শিক্ষা উপকরণ, ব্যবহারিক ও সরেজমিন শিক্ষার বদলে আমাদের শিক্ষা এখনও নিষ্প্রাণ ও বক্তৃতানির্ভর । আমাদের দেশে প্রচলিত বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতেও নানা ধরনের ত্রুটি লক্ষণীয় রচনামূলক প্রশ্নের মূল্যায়ন অনেক ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য হয় না। পাঠ্যক্রমের বোঝা বৃদ্ধি, পরীক্ষার ফলাফলের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ ইত্যাদির ফলে পরীক্ষায় দুর্নীতির অবসান হয়নি । ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার মান নয় বরং ভালো জিপিএ নিয়ে পরীক্ষায় পাশের ব্যাপারেই অধিক তৎপর। ফলে শিক্ষকরাও সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পেশাদার মনোবৃত্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন। গৃহশিক্ষকতা কিংবা কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে আয়ের পথ সন্ধান করছেন তারা। আমাদের পাঠ্যগ্রন্থ ও পাঠ্যক্রম এখনও গতানুগতিক । উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার চলমান ধারাকে যুগোপযোগী ও প্রযুক্তিনির্ভর করা প্রয়োজন ।

শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ : বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন । এগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো一

১. বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ : সরকার প্রতিবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে। ২০১০ সাল থেকে সকল শ্রেণিতে ১০০% বই নতুন প্রদান করা হচ্ছে ।

২. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা : দরিদ্র পিতা-মাতা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে উপার্জনের জন্য বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রাখেন । এ সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ৩৯০০.২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ অর্থায়নে ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের ২য় পর্যায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের এক সন্তান বিদ্যালয়ে প্রেরণের জন্য মাসিক ১০০ টাকা এবং একাধিক সন্তানের জন্য মাসিক ১২৫ টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান চলছে ।

৩. বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা : ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয় । সারা দেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে Millenium Development ও PRSR-এর আলোকে এ কর্মসূচি এখনও চালু আছে ।

৪. কর্মজীবী দরিদ্র শিশুদের জন্য গৃহীত কার্যক্রম : কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকর করতে ২য় পর্যায়ে আরও বৃহৎ পরিসরে ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর আওতায় ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় এমন কেন্দ্রগুলোতে বার্ষিক ২৫,৭০০ টাকা হারে এবং ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় এমন কেন্দ্রগুলোতে বার্ষিক ৩০,৯৫০ টাকা হারে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। শিশুদের ১ম থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত মাথাপিছু ৫০ টাকা হারে এবং ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মাথাপিছু ৬০ টাকা হারে শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির শিশুরা ইউনিফর্ম-এর জন্য বছরে ২০০ টাকা এবং ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিশুরা ২৫০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে ।

৫. বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম : যে সমস্ত শিক্ষা বঞ্চিত নারী-পুরুষ গণশিক্ষা কর্মসূচির আওতায় সাক্ষর জ্ঞান লাভ করেছে, তাদের অর্জিত শিক্ষাকে আরও বর্ধিত করা এবং তাদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘সাক্ষরতা উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-১’ গ্রহণ করেছে।

৬. নারী শিক্ষাকে উৎসাহিতকরণ : নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে সরকার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রাপ্ত মেয়েদের বেতন মওকুফ করেছে। এর পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

৭. দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় গৃহীত কর্মসূচি : দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, নির্বাচিত ১২টি জেলা সদরে পিটিআই স্থাপন এবং বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। আইডিবি সাহায্যপুষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, চর, হাওড় এলাকায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন এবং দেশের সকল উপজেলাকে মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

৮. মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ : Teaching Quality Improvement (TQL) in Seccondary Education প্রকল্পের আওতায় দূরবর্তী ও পশ্চাৎপদ সকল স্কুলকে তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে ‘আইটি বেইজড মোবাইল ভ্যান’ চালু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ৫৬৮টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটার বিতরণ করা হয়েছে।

৯. কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ : দরিদ্র পরিবারের তরুণ-তরুণীদের আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী ও দেশে-বিদেশে চাকরির বাজার চাহিদার সাথে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য যুগোপযোগী ট্রেড কারিগরি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদেশে যেতে আগ্রহী ডাক্তার, নার্স ও বেকারদের জন্য আরবি, ইংরেজি, কোরিয়ান ও মালয় ভাষায় কথা বলার দক্ষতা অর্জনের নিমিত্তে দেশের ছয়টি বিভাগে ১১টি আধুনিক ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে ।

১০. মাদ্রাসা শিক্ষাকে উন্নীতকরণে সরকারের ভূমিকা : মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার, সংস্থাপন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা হয়েছে । চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসায় কম্পিউটার কোর্স চালু করা হয়েছে এবং কম্পিউটার শিক্ষাদান করা হচ্ছে ।

১১. উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপ : বর্তমান চাহিদার তুলনায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুবিধা কম থাকায় সরকার নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও অনুমতি প্রদান করেছে । এছাড়াও উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন Higher Education Quality Enhancement শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সৃজনশীলতায় উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে গবেষণার পরিবেশ তৈরির জন্য Academic Innovation

Fund প্রদান করা হচ্ছে।

উপসংহার : বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান নানা অসংগতি দূর করার জন্য সরকারের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সন্তোষজনক অবস্থানে রাখতে। শিক্ষাকে গুণগত মানের দিক থেকে উন্নত করতে পারলেই জাতীয় জীবনে অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে ।

Rate this post