✱ঢাকা শহরে প্রথম দিন কাটানাের ঘটনা নিয়ে দিনলিপি লেখ।


ঢাকা শহরে প্রথম দিন 

২২ জানুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার 

ভাের ৬টায় বাসের ভেতর ঘুম ভাঙতেই দেখি আমাদের বাস গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে পৌছেছে। গত রাতে রাজশাহী থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম ঢাকার উদ্দেশে। নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ফুফাতাে ভাইকে সাথে নিয়ে ঢাকায় এসেছি। আমাদের প্রথম গন্তব্য আমার দুঃসম্পর্কের এক চাচার বাসা। আগে থেকেই শুনেছি চাচা অনেক ধনী, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বড়াে পদে চাকরি করেন। নটরডেম কলেজে ভর্তি এবং ঢাকায় থাকার ব্যাপারে তার পরামর্শ আমার খুব প্রয়ােজন।

গাবতলী থেকে চাচার বাসা শ্যামলীতে যেতে হবে। ভুল করে উঠে বসলাম মহাখালীর বাসে। মহাখালীতে নেমেই বুঝলাম যে আমরা ভুল বাসে উঠেছি। লজ্জা ও ভয়ে কাউকে ফোন দেইনি। অগত্যা মহাখালী থেকে শ্যামলীগামী বাসে উঠলাম। শ্যামলীতে চাচার বাসায় যখন পৌছি তখন সকাল ৯টা বাজে। 

বাড়ির ভেতর ঢুকে কলিং বেল চাপতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিলেন। তারপর আমাদের একটি কক্ষে বসার জন্য ইঙ্গিত করলেন। সেখানে আধা ঘণ্টার মতাে বসে থাকলাম। তারপর চাচা ও চাচি বেরিয়ে আমাদের সাথে কথা বললেন। আমরা দুজন তাদের সালাম দিলাম। তারা বললেন চাচাতাে ভাই ও বােনেরা তখনাে ঘুমিয়ে আছে । শুনে অবাক হলাম। হাত-মুখ ধুয়ে আসার সাথে সাথে কাজের লােক আমাদের দুজনকে নাশতা দিয়ে গেলেন। নাশতা সেরে চাচার সাথে আমার থাকার ব্যাপারে আলােচনায় বসলাম। চাচা চললেন এ+ পেয়েছ, নটরডেম কলেজে পড়বে ভালাে কথা। কিন্তু ঢাকায় তুমি থাকবে কোথায়? তাছাড়া নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়া তাে খুব কষ্টকর। এ+ তাে আজকাল ঘরে ঘরেই পাচ্ছে। তােমার বাবার মতাে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাে তােমার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারবে না। 

চাচার কথাগুলাে মনােযােগ দিয়ে শুনছিলাম কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। 

চাচার বাসার নরম ফোমের সােফা ও বিছানা, এয়ারকন্ডিশনার ও চাকচিক্য দেখে আমরা দুজনই আশ্চর্য হয়ে গেলাম । ফলে আমরা যে পিঠা নিয়ে এসেছিলাম তা আর বের করার সাহস হলাে না।

অবশেষে চাচার কাছে অনুরােধ করলাম ভর্তি পরীক্ষার একটি ফর্ম তুলে দেওয়ার জন্য। সেটি অবশ্য চাচা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন | বলেই আজ আমি নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ হােস্টেলে থেকে প্রায়ই মনে পড়ে সেই দিনটির কথা।

Rate this post