‘দিবসহি বহুড়ী কাউহি ডর ভাই। রাতি ভইলে কামরু জাই।’
উত্তর: প্রদত্ত চরণগুচ্ছ কুকুরীপাদানাম রচিত ২নং চর্যাপদ থেকে গৃহীত হয়েছে। প্রদত্ত চর্যার চরণগুচ্ছে একইসাথে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ অর্থ প্রকাশ পেয়েছে।
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন। এটি বৌদ্ধতান্ত্রিক সহজিয়া ধর্মতত্ত্বের বাহন হলেও চিত্রকল্প, উপমা, রূপক ইত্যাদির আশ্রয়ে চর্যা রচয়িতাগণ যে সৌন্দর্যচিত্র ও জীবনচিত্র এঁকেছেন তা সাধারণ পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এটি একালের পাঠককেও মুগ্ধ করে। কায়বৃক্ষ, নদী পারপার, হরিণ শিকার, শবর-শবরীর উন্মত্ত উল্লাস, অভাবী নারীর মনোবেদনা, বরযাত্রা, জলদস্যুর আক্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাচীনকালের মানুষের জীবনচিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
উপরিউক্ত পদটি ‘চর্যাগীতির’ ২নং চর্যার অন্তর্গত। পদটির রেকড রচয়িতা কুকুরীপা। কুকুরীপা চর্যাগীতির তিনটি গানের রচয়িতা। এই উক্তিতে প্রাচীনকালের সমাজের সুন্দর একটি চিত্র আছে।
‘দিবসহি বহুড়ী কাউহি ডর ভাই’ অর্থ দিনের বেলা বউটি কাকে ভয়ে ভীত।
‘রাতি ভইলে কামরু জাই’ অর্থ-রাত্রি হলে সে কামরূপে (কামে প্রীত হতে) যায়।
যারা অনভিজ্ঞ তারা চিত্তকে নির্বাণের পথে চালিত করতে পারে না। কিন্তু যে গুরু উপদেশ অনুসারে চলে সে তার চিত্তকে নির্দিষ্ট নির্বাণের পথে নিয়ে যেতে পারে। দেহস্বরূপ ঘরের মধ্যেই মহাসুখের বা সহজানন্দের আঙিনা সেখানেই নির্বাণ লাভ করা যায়। যোগীর মনে পরিশুদ্ধ প্রকৃতিরূপিণী বধূ জেগে থাকে। সহজানন্দ লাভ করার পর চিত্ত লয় প্রাপ্ত হয়। দিন অর্থ চিত্তের পরিশুদ্ধ যোগলব্ধ সুষুপ্তি অবস্থা। এই সুষুপ্তি অবস্থায় চিত্ত মহাসুখসঙ্গমে কামরূপে যায়। কুকুরীপাদ বলেছেন এই চর্যার অর্থ কোটির মধ্যে একজনের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারে।