‘দুর্গেশনন্দিনী’ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস এ কথার সত্যাসত্য যাচাই কর।
অথবা, ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।

উত্তর: বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ [১৮৬৫]। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় [১৮৩৮-৯৪] রচিত চৌদ্দটি উপন্যাসের মধ্যে এটিই সর্বপ্রথম রচিত উপন্যাস।

‘দুর্গেশনন্দিনী’ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। হিন্দু-মুসলমানের সংঘাত ও যুদ্ধ এ উপন্যাসের পটভূমি।
‘দুর্গেশনন্দিনী’তে জীবন সমস্যা কল্পনা সঞ্জীবিত রোমান্স এর আকার পেয়েছে। তিনটি নারী চরিত্রের জীবন জটিলতাকে কেন্দ্র করে গোটা উপন্যাসটির বহিরঙ্গ গতি তরঙ্গিত হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেগমান ও সক্রিয় চরিত্র বিমলার। অভিরাম স্বামীর কানীন কন্যা বিমলা শূদ্রানী গর্ভজাত। অথচ অভিরাম স্বামীর দুর্লভ প্রতিভাব সফল উত্তরাধিকারিণী সে। অভিরাম শিষ্য রাজা বীরেন্দ্র সিংহ তার রূপে গুণে মুগ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু অসামাজিক উৎস সম্ভবা একটি নারীকে রাজবংশের কুলবধূত্বে বরণ করবেন কি করে? যুগ যুগ সঞ্চিত সংস্কারের বাধাকে বঙ্কিম এখানে অতিক্রম করতে চেয়েছেন নবযুগের পক্ষ থেকে। বীরেন্দ্র সিংহের লোভাতুরতার কড়িকাঠে বিমলার নারীত্বকে তিনি বলি দেননি।

বীরেন্দ্র সিংহের প্রথমা স্ত্রী তিলোত্তমার মৃতা জননীও ছিলেন অভিরাম স্বামীরই অবৈধ সন্তান। দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমা ও বীরেন্দ্রসিংহের শত্রুপুত্র জগৎসিংহের মধ্যে গোপন প্রণয় এবং পিতৃবন্দি জগৎসিংহের কাছে নবাবকন্যা আয়েশার গোপন আত্মসমর্পণ, সবকিছু মিলে যেমন উপন্যাসের, তেমনি সমকালীন জীবন জটিলতার একটি রূপরেখাও উদঘাটিত হয়েছে। নিজের কালের জীবনের এ অনুদগত সমস্যাকে নিয়ে বঙ্কিম ইতিহাসের অতলে ডুব দিয়েছেন। ঐতিহাসিক পরিবেশ বা তথ্যযোজনা দুর্গেশনন্দিনীতে মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। কিন্তু অতীতের বৃহৎ প্রচ্ছদকে শিল্পী তার কল্পনার অবাধ মুক্তির ভিত হিসেবে সফল ব্যবহার করেছেন। এখানেই রোমান্সের যথার্থ উৎস। আয়েশা জগৎসিংহ কাহিনিতে অঙ্গুরীয় বিনিময় এর ক্ষুদ্র পরিসর গল্প সামগ্রিকতা পেয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।

Rate this post