আমাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়া হচ্ছে
আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। শরীর ও মনের সমন্বিত প্রয়াসে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যেসব কার্যাবলি সম্পাদিত হয় তার সাফল্যের উপর নির্ভর করে আমাদের আনন্দময় জীবন-যাপন। খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় জীবন বিকাশের পথ, পায় জীবন সংগ্রামের দৃঢ় ইচ্ছা ও মনোবল লাভ করে।
কখনও সাফল্য, কখনও ব্যর্থতা, কখনও জয়-পরাজয়ের গ্লানিকে সহজভাবে মেনে নেয়ার মানসিকতা। জীবনকে পরিচ্ছন্ন, গতিময় ও সাবলীল করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেলাধুলা। সুস্থ, সবল, নিরোগ ও কর্মক্ষম শরীর গঠন অর্থাৎ সুন্দর জীবনের জন্য আমাদের প্রত্যেককেই খেলাধুলায় নিযুক্ত করা উচিত।
আজকের খেলাধুলা অবশ্য খেলাধুলাকে বাদ দিয়ে কেবল নিষ্প্রাণ গ্রন্থ ও তথ্য-প্রযুক্তির নামে যন্ত্র দানবকে নিয়ে খেলার প্রতিযোগিতায় সমগ্র জাতি নিমজ্জিত। শিশুরাও একই বৃত্তের অন্তর্গত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আজকের খেলাধুলা শিশুরা একই চোরাবালিতে আটকে গেছে। তাদের ভুবনে কেবলই যন্ত্রদানবের খেলা আছে।
এ অবস্থা থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে এখনই ফিরে যেতে হবে লোকসংস্কৃতির সীমানায়। যেখানে লোকক্রীড়া হাতছানি দিয়ে ডাকছে শিশুদের। বলছে-
“এসো আনন্দ ভুবনে।
যেখানে শরীর ও মস্তিষ্ক একই তাল-ছন্দে খেলা করে।
শিক্ষা নাও, শিক্ষা দাও।
মেলাও মিলো।
এর থেকে বড় খেলা আর কী হতে পারে!”
কোথায় গেল সেই সব খেলা। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের মারবেল খেলার ছড়াটিও শিশুর জন্য খুবই আনন্দদায়ক । শুধু আনন্দদায়ক কেন এর থেকে শিক্ষাও অর্জন করেছে ।
- একে – ইন্দুর
- দুইয়ে – দাঁত
- তিনে – তেলি
- চারে – চোর
- পাঁচে – পেঁচা
- ছয়ে – ছঁচো
- সাতে – শালিক
- আটে – দাদার পা চাটে
- নয়ে – নাপিত
- দশে – ধোপা
- এগারোয় – এঁড়ে বাছুর
- বারোয় – বকনা বাছুর
- তেরয় – তেন্দড় বান্দর
- চৌদ্দয় – চাদর
- পনেরয় – সম্বন্ধ
- ষোলয় – পাকা দেখা
- সতেরয় – আর্শীবাদ
- আঠারোয় – বিয়ে
- ঊনিশে – বৌভাত
- বিশে – এক ছেলের বাপ
- একুশে – ছেলের মুখে ভাত
- বাইশে – এক ছেলে এক মেয়ের বাপ
- তেইশে – মেয়ের মুখে ভাত
- চব্বিশে – মেয়ের সম্বন্ধ ইত্যাদি।
মারবেল খেলা ছাড়াও রয়েছে অ্যাথলেটিকস্, কবাডি, ক্রিকেট, ফুটবল, সাঁতার, ঘুড়ি উড়ানো আরও কত খেলা । চলুন জেনে নিই এইসব খেলা সম্পর্কে।
অ্যাথলেটিকস্ :-
পৃথিবীতে যত প্রকার খেলাধুলার প্রচলন আছে তার মধ্যে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপই সবচেয়ে প্রাচীন। আদিম যুগে মানুষকে বাঁচার জন্য দৌড়াতে, বাধা অতিক্রম করতে লাফাতে এবং শিকার বা শত্রুকে ঘায়েল করতে নিক্ষেপের সাহায্য নিতে হতো।
আরও পড়ুন :- বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য লেখ?
এই অ্যাথলেটিকস-কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে-
- ট্র্যাক ইভেন্ট সকল প্রকার দৌড় ও হাঁটা
- ফিল্ড ইভেন্ট সকল প্রকার লাফ ও নিক্ষেপ।
সাঁতার খেলা :-
বর্তমানে যে ধরনের সীতার আমরা দেখতে পাই সে সাঁতার প্রথমে ইংরেজরা শুরু করে। ১৮৩৭ সালে লন্ডনে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। অলিম্পিকে পুরুষদের ১৮৯৬ সাল থেকে ও মহিলাদের ১৯১২ সাল থেকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯০৮ সালে সাঁতারের আন্তর্জাতিক সংস্থা FINA (Federation Internationale de Nation Amateur) গঠিত হয়।
প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার চার প্রকার-
- মুক্ত সাঁতার (ফ্রি স্টাইল)
- চিৎ সাঁতার (ব্যাক স্ট্রোক)
- বুক সাঁতার (ব্রেস্ট স্ট্রোক)
- প্রজাপতি সাঁতার (বাটারফ্লাই)।
কবাডি খেলা :-
ভারতীয় উপমহাদেশে কাবাডি খেলা অতি প্রাচীন। বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে হাডুডু নামেও এই খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয়। আঞ্চলিক খেলা হওয়ার কারণে এই খেলার তেমন কোনো বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ছিল না। স্বাধীনতার পর এই গ্রামীণ হাডুডু খেলা কাবাডি নামে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে কবাডি খেলতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। তো চলুন জেনে নেই কবাডি খেলার নিয়ম-কানুন।
আরও পড়ুন :- পড়াশোনা কি জীবনে গুরুত্বপূর্ণ
খেলোয়াড়ের শরীরের যে কোনো অংশ বাউন্ডারির বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে সে আউট হবে। স্ট্রাগল হলে বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে ঐ খেলোয়াড় আউট হবে না যদি তার শরীরের কোনো অংশ বাউন্ডারির ভিতরের ভূমির সাথে সংস্পর্শ থাকে।
খেলার সময় যদি কোনো খেলোয়াড় বাউন্ডারির বাইরে যায় তাহলে সে আউট হবে। রেফারি বা আম্পায়ার তার নম্বর কল করে তৎক্ষণাৎ ঐ খেলোয়াড়কে কোর্টের বাইরে নিয়ে যাবে।
রেইডার অনুমোদিত শব্দ কাবাড়ি উচ্চারণ করে দম নেবে। যদি রেইডার ঠিকমতো কাবাডি উচ্চারণ না করে তাহলে রেফারি বা আম্পায়ার তাকে কলব্যাক করাবে এবং বিপক্ষ দল একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট পাবে।
রেইডার বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার পূর্বেই দম ধরতে হবে যদি সে দম দেরিতে বা কোর্ট স্পর্শ করে ধরে তাহলে রেফারি/আম্পায়ার তাকে নিজের কোর্টে ফেরত পাঠাবে এবং বিপক্ষ দলকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট ও দম দেয়ার সুযোগ দেবে।
দম দেয়ার সুযোগ (tum) না থাকা সত্বেও যদি রেইডার দম দেয়ার জন্য বিপক্ষের কোর্টে প্রবেশ করে তাহলে তাকে রেফারি/আম্পায়ার নিজের কোর্টে ফেরত পাঠাবে ও বিপক্ষ দলকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট দেবে।
ক্রিকেট খেলা :-
ক্রিকেট খেলার নিয়ন্ত্রকারী সর্বোচ্চ সংস্থার নাম হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আই.সি.সি (International cricket council)। এটি ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থাই ক্রিকেট খেলার নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, প্রচার ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করে থাকে।
আরও পড়ুন :- প্রবন্ধ কি বা কাকে বলে?
ক্রিকেট খেলার প্রক্রিয়াকে প্রধানত চারটি বিভাগে পৃথক করা হয়-
- ব্যাটিং
- বোলিং
- ফিল্ডিং ও ক্যাচিং
- উইকেট কিপিং।
ফুটবল খেলা :-
আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফুটবল খেলার আইন প্রণয়ন প্রয়োগের ব্যবস্থা করে থাকে। এই খেলা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৭টি আইন রয়েছে। একটি দলের ১১ জন খেলোয়াড় মাঠে খেলে এবং খেলোয়াড়দের সাজপোশাক হচ্ছে শার্ট বা জার্সি, শর্টস বা হাফ প্যান্ট, মোজা, শিনগার্ড ও ব্রুস।
আমার মনে হয় সবার প্রিয় খেলা ফুটবল সম্পর্কে আর কিছু বলতে হবে।
Leave a comment