আমাদের শিক্ষার্থীদের যেকোন প্রিয় বিষয় নিয়ে রচনা লিখতে আসে। তাই আমি আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা লিখার চেষ্টা করেছি। তোমরা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা লিখতে পারো। তোমরা যারা পরীক্ষায় আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা লিখতে চাও আমার পোস্ট তাদের জন্য।

একজন শিক্ষক আমাদের জাতি গড়ার কারিগর। আর শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আমাদের মাঝে একজন প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠেন। আমি আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা যাবতীয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই তোমরা পরীক্ষায় আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা লিখতে পারো। নিচে আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখা হলো-

আমার প্রিয় শিক্ষক – রচনা 

ভূমিকা

আমার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকই আমার কাছে সমান ভাবে শ্রদ্ধেয়। এরপরেও সবারই স্মৃতিতে কেউ না কেউ বিশেষভাবে বিস্তার করে থাকে। আর এই বিশেষ ব্যক্তিই জীবনের পথ চলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মনেই কোন না কোন শিক্ষকের আদর্শ একটি বিশেষ প্রকারভ ভক্তি ও শ্রদ্ধা সঞ্চিত থাকে। আর এই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির কথা কেউ প্রকাশ করতে পারে আবার কেউ প্রকাশ করতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ  পরিবেশ সচেতনতা – রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

তেমনি আমার জীবনেও একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রয়েছেন যার নাম নুর হোসেন। আমি আমার এই প্রিয় শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি, স্বচ্ছতা, জীবন বোধ সবকিছু অনুসরণ করার চেষ্টা করি। আর আমার এ মহান শিক্ষকের অবদান আমার জীবন গঠনে আদর্শ ভূমিকা পালন করেছে। আর আমার বাবা-মায়ের পরে আমি তাকে আমার জীবনের আদর্শ এবং আপনজন বলে মনে করি।

আমার প্রিয় শিক্ষক

আমার প্রিয় শিক্ষক হিসেবে আমি যাকে আমার হৃদয়ের গভীরে স্থান দিয়েছি তার নাম হলো নূর হোসেন স্যার। তিনি আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি আমার জীবনে হয়তো শেষ শিক্ষক হয়ে থাকবেন। আমি সব সময় তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি।

প্রিয় শিক্ষক হওয়ার কারণ

আমরা শিক্ষা জীবনে অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসি। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাই বলে সব শিক্ষক আমাদের প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন না। যে গুণাবলীর জন্য একজন শিক্ষক প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠেন তা হল-

প্রথম পরিচয়

আমার প্রিয় শিক্ষকের সাথে আমার প্রথম পরিচয়টা ছিল বেশ আকর্ষণীয়। আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় অতিক্রম করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রবেশ করি তখন আমার মনের ভাবনা ছিল অন্যরকম। না জানি কি হয়, স্যারেরা কেমন আচরণ করেন, নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকে বের হয়ে আমি এখন কলেজের পরিসরে পা রেখেছি। স্যার যখন প্রথম ক্লাসে আসলেন আমার ওপর ওনার চোখ পড়তেই উনি হেসে উঠলেন।

তিনি আমাকে আদর করে তার কাছে যাওয়ার জন্য ডাকলেন। আমি ভয়ে ভয়ে তার কাছে গেলাম। তিনি আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন এবং তিনি খুব সুন্দর ভাবে কলেজের পরিবেশ বুঝিয়ে দিলেন। স্যারের সেই স্নেহশিক্ত কথাগুলি এখনো আমার হৃদয়ের মাঝে দোলা দেয়।

তার পাঠদান পদ্ধতি

আমি যখন একাদশ শ্রেণির ছাত্র তখন আমার নূর হোসেন স্যারের সাথে পরিচয় হয়। তিনি ক্লাসে প্রবেশ করতেন একটি হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে তিনি আমাদের ভালো-মন্দ খোঁজখবর নিতেন। তারপর টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেন। শুরু করতেন পূর্ব দিনের ক্লাসের টপিকস নিয়ে গল্প। এরপরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট তিনি সেদিনের ক্লাস নিয়ে আলোচনা করতেন। আর তার আলোচনার মধ্যে পড়াগুলো আমাদের হৃদয়ে একেবারে গেঁথে যেত।

আরো পড়ুনঃ  মাদকাসক্তি ও যুবসমাজ রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

কারণ অন্যান্য শিক্ষকের চেয়ে নুর হোসেন স্যারের বোঝানোর কৌশলটা ছিল একেবারে অন্যরকম। তার ক্লাস নেওয়ার ভঙ্গি আমাদের সবার মন জয় করেছিল। আর এভাবেই তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠলেন।

আদর্শ ব্যক্তিত্ব

নূর হোসেন স্যার ছিলেন একজন আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি উচ্চ ডিগ্রিধারী হয়েও শিক্ষকতার মতো একটি মহান পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মাঝে শিক্ষাদানের মাধ্যমে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি ছিলেন মিষ্টভাষী এবং সদালাপী। তবে পাঠদানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন কঠোর। আর এভাবেই তার ব্যক্তিত্ব আমাদেরকে মুগ্ধ করে তোলে।

আদর্শ শিক্ষকের গুনাবলী

একজন আদর্শ শিক্ষকের যে গুণাবলী থাকা প্রয়োজন নূর হোসেন স্যার এর মধ্যে তার সবগুলোই বিদ্যমান। তার চরিত্র, তার কথা বলার ভঙ্গি, তার পাঠদান পদ্ধতি এবং হৃদয়ের উষ্ণতা আমাদেরকে দারুন ভাবে মুগ্ধ করত। তিনি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় কথা বলতেন। তার হাসিমুখের উপদেশ আমার মনের উপর ছাপ রেখে যায়। কোন ছাত্র যদি কিছু ভুল করে তিনি সহানুভূতির সাথে তা সংশোধন করে দেন।

দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতা

একজন শিক্ষককে আদর্শ শিক্ষক হিসাবে বিচারের ক্ষেত্রে তার দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতা  বিশেষভাবে বিবেচ্য একটি বিষয়। আর আমার প্রিয় শিক্ষকের মাঝে এই দুটি গুণই ছিল প্রধান। তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতেন। তিনি ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও আলোচনা করতেন। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।

পরিশ্রমী এবং সৎ

নুর হোসেন স্যার একজন সৎ ব্যক্তিত্বের অধিকারী যার কারণে তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক। তিনি সৎ পথে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জনকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করতেন। তিনি সুশিক্ষা দান করতেন যার কারণে তিনি ছাত্রদের চেয়ে বেশি অধ্যায়ন করতেন। ছাত্রদের কোন সমস্যায় তিনি কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেননি। যেকোনো সমস্যা তিনি যত্ন সহকারে বুঝিয়ে দিতেন। তার আদর্শনিষ্ঠ জীবন আমাদের চলার পথে প্রেরণা যোগাবে।

চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং মানবিক গুণাবলী

আমার প্রিয় শিক্ষক নুর হোসেন স্যার ছিলেন একজন মানবিক গুণাবলীর অধিকারী। তিনি তার মানবিক গুণাবলী কে কখনোই ভাসিয়ে দেননি বরং তিনি ছিলেন সুন্দর এবং আনন্দের পূজারী। তিনি অন্যায়কে কখনো মেনে নেননি এবং প্রশ্রয় দেননি। তিনি আমাদের বলতেন কখনো কোন অন্যায় করবে না এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে না কারণ অন্যায় এবং অহংকার মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

ছাত্রদের/ছাত্রীদের প্রতি ভালোবাসা

নূর হোসেন স্যার এর ছাত্রদের প্রতি ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। তিনি ধনী-গরিব, মেধাবী, দুর্বল সব ধরনের ছাত্রদের সমানভাবে ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন ধর্ম অনুরাগী। কোন ধর্মের প্রতি তার কোন বিদ্বেষ ছিল না। তার ছিল সরল, সহজ জীবন যাপন যা সবার মনকে জয় করে নিয়েছিল।

একজন সচেতন ব্যক্তিত্ব

নূর হোসেন স্যার ছিলেন একজন সচেতন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি নানা বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন কারণ তিনি প্রচুর অধ্যায়ন করতেন। তার শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল বিজ্ঞানসম্মত। তিনি তার সিলেবাস ও কোর্স যথাসময়ে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি তার ক্লাসের পঠিত বিষয় সমূহ সহজ এবং গ্রহণযোগ্য করার জন্য বাস্তব জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য করে তুলে ধরতেন আর এতে করে ছাত্ররা পড়ার প্রতি আগ্রহী এবং কৌতুহালি হয়ে উঠতো।

একজন সাহিত্যিক ও দার্শনিক

নূর হোসেন স্যার একজন সাহিত্য মনা মানুষ এবং তার চিন্তা ভাবনা, কথা বার্তা সবকিছুই একজন দার্শনিকের মত। তিনি গল্প কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করে ইতোমধ্যে অনেক সুনাম কড়িয়েছেন। তার লেখার মধ্যে দিয়ে তার ব্যক্তি জীবনের জীবনাদর্শ প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্য মনা এই মানুষটি দেশ এবং জাতির জন্য নিঃসন্দেহে অনেক গর্বের।

বাস্তব জীবনে স্যারের পরামর্শ

স্যার আমাদের সব সময় বাস্তবমুখী জীবন যাপনের পরামর্শ দিতেন। স্যারের কাছ থেকে শিক্ষার যে মৌলিক ভিত্তি আমরা অর্জন করতে পেরেছি ব্যবহারিক জীবনে সেই ভিত্তি কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথ খুঁজে পেয়েছি। মানুষের জীবনে চাওয়া পাওয়ার কোন শেষ নেই কিন্তু এই চাওয়া পাওয়ার মাঝে ধৈর্য হারালে চলবে না। স্যার সব সময় একটি কথা বলতেন, “অর্থশক্তির চেয়ে জ্ঞান শক্তি অনেক বড়”।

আর স্যারের এসব বাক্য আমার চিন্তা চেতনাকে সব সময় আচ্ছন্ন করে রাখে। আমি স্যারের মতো মানবতাকে আমার জীবনে সবার উপরে স্থান দিয়েছি। স্যার যে উপদেশ দিয়েছিলেন ব্যবহারিক জীবনে এসব পালন করার তাগিদ অনুভব করি।

বর্তমানের অনুভূতিতে হারানো অতীত

প্রকৃতির নিয়মেই সময় বদলে যায় কিন্তু আমাদের জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আমরা কখনো ভুলতে পারি না। তাই স্যারের কথা যখন আমার মনে হয় অজান্তে আমার চোখের কোনে পানি চলে আসে। স্যারকে দেখার আগ্রহ জাগে কারন তিনি ছিলেন একজন প্রাণবন্ত, কর্মচঞ্চল, উদ্যম, আবেগে সম্পূর্ণ একজন মানুষ।স্যারের প্রতিচ্ছবি এখনো আমার মনের মানষ পটে ভেসে ওঠে। যেদিন কলেজ থেকে বিদায় নিয়েছিলাম সেদিন স্যার কে ধরে অঝোরে কেঁদেছিলাম। 

আরো পড়ুনঃ  জেনে নিন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত – রচনা – সম্পর্কে 

স্যার আমাদের জন্য দোয়া করেছিলেন এবং তার একটাই উপদেশ ছিল- “জীবনে যাই হও না কেন, সবার আগে যেন মানুষ হইয়ো”। তবে আমি যতটুকু হতে পেরেছি তা আমার প্রিয় শিক্ষকের জন্যই সম্ভব হয়েছে। আর এই কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।

উপসংহার

নূর হোসেন স্যার শুধু আমার একজন প্রিয় শিক্ষকই নন তিনি আমার অকৃত্রিম বন্ধু, নির্ভুল উপদেষ্টা, এবং আমার জীবন গড়ার কারিগর। তার মধ্যে আমি আমার জীবন গড়ার সত্য, সুন্দর এবং পরম সত্যকে খুঁজে পেয়েছি। তিনি রয়েছেন আমার জীবনের সমস্ত ভাবনা জুড়ে। তাই আমি আমার প্রিয় শিক্ষকের জন্য গর্ববোধ করি।

এই রচনা পড়ার মাধ্যমে আপনি আরও যে রচনা লিখতে পারবেন তা হল –

প্রিয় শিক্ষক

একজন আদর্শ শিক্ষক

Rate this post