হজ পালন করা প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুমিন-মুসলিমের উপর ফরজ।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত সম্পর্কে একজন মেয়ের অবশ্যই জানা প্রয়োজন। তাই আমি নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত সম্পর্কে আমার আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।

আমি নারীদের হজ পালন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত সম্পর্কীয় যাবতীয় তথ্য জানতে আমার আর্টিকেলটি পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার
শর্ত 

নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয়

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলো হল- কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ এবং যাকাত। প্রত্যেকটি মুসলিম সামর্থ্যবান মানুষের ওপর হজ পালন করা ফরজ। নারীরা সামর্থ্যবান হলে তার ওপর হজ পালন করা ফরজ, তবে নারীদের হজের ব্যাপারে কিছু শর্ত বা নিয়ম আছে। নারী একাকী কখনোই হজে যেতে পারবেন না। ইসলাম নারীদের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছে।

কোন নারী হজ আদায় করতে হলে তাকে স্বামী বা মাহারাম পুরুষের সঙ্গে যেতে হবে। ইসলামী বিধান মতে ৪৮ স্বরীয় মাইল বা ৫৪ মাইল বা ৮৭ কিলোমিটার পথ সফর করা হলো  শরীয় সফর। আর এই সফর পায়ে হেঁটে হোক, বাস, রেল অথবা প্লেনে হোক একদিনের জন্য হোক বা ৭ দিনের জন্য হোক নারীরা একা চলাচল করতে পারবেনা। নারীদের যদি কোন প্রার্থী প্রয়োজন হয় তবুও নারীরা মাহারামপুরুষ বা স্বামী ছাড়া যেতে পারবেনা।

নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য হজ করা ফরজ। মহান আল্লাহতালা সূরা আল ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে বলেন, “মানুষের মধ্যে যারা সেখানে বায়তুল্লায় পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের কাজ করা ফরজ। আর যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত আল্লাহতালা সৃষ্টি জগতের মুখাপেক্ষী নন”। তবে নারীদের আর্থিক সামর্থ্য থাকলে তারা পুরুষের মতো হজ করতে পারে না।

নারীদের হজ করার ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হয়। হজ হলো শারীরিক এবং আর্থিক ইবাদত। হজ করার আর্থিক ক্ষমতা হওয়ার সাথে সাথে মহান আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে হজ করা জরুরী। কোন লোকের যদি হজ হওয়ার সামর্থ্য হওয়ার পর হজ পালন না করে এবং পরবর্তীতে যদি সে গরিব হয়ে যায় তাহলে তার ওপর হজের ফরজিয়ত থেকে যাবে। পরবর্তীতে সে গরিব হয়ে গেলেও তার হজের শর্ত ছুটে যাবে না।

একজন নারীর কাছে তার নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ করার পর আল্লাহর দরবারে পৌঁছে আবার ফিরে আসার আর্থিক সামর্থ্য থাকে এবং মাহরাম পুরুষ যদি থাকে এবং সেই পুরুষ যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে অথবা নারী যদি সামর্থ্য থাকে ওই মহরম পুরুষের খরচ দেয়ার মত তাহলে একজন নারীর উপরও হজ করা ফরজ। এবং ওই নারী যতক্ষণ হজ পালন না করবে ততক্ষণ সে গোনাগার হবে।

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, “কোন ব্যক্তির ওপর যদি হজ ফরজ হয় আর সে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হজ পালন করতে দেরি করে বা হজ আদায় না করে তাহলে আমি জানিনা তার ইহুদী বা খ্রিস্টান রূপে মৃত্যু হলো কিনা”। সকল মুসলিমকে মনে রাখতে হবে হজ এবং ওমরা হল মহান আল্লাহতালার বিধান।

এই হজ এবং ওমরা আল্লাহর বিধান মত পালন করলে মুক্তি পাওয়া যাবে আর যদি আল্লাহর বিধান ছাড়া মন গড়া ভাবে তা পালন করা হয় তাহলে সওয়াব পাওয়ার পরিবর্তে গুনাহগার হতে হবে।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

মাহরাম কাকে বলে

শরীয় দৃষ্টিতে যাদের সাথে বিবাহ বৈধ নয় তাদেরকে মাহরাম বলা হয়। একজন নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ হলো – বাবা, আপন চাচা, আপন  ভাই, আপন মামা, মেয়ের জামাই এবং আপন শশুর।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

মাসয়ালা

যাদের সঙ্গে বিয়ে জায়েজ আছে তারা মাহরাম পুরুষ নয়, তাই তাদের সাথে শুধু হজে কেন কোথাও যাওয়া যাবে না এবং তাদের সাথে পর্দা করা ফরজ। যেমন – চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, পালক পুত্র এমনকি মুখে ডাকা বা পাতানো বাবা, ছেলে বা ভাই মাহরাম হিসাবে গণ্য করা হবে না।

নারীদের জন্য অতিরিক্ত যে বিষয়গুলি জরুরী

নারীদের জন্য যে বিষয়গুলো অতিরিক্ত জরুরি তা হলো-

    • যে নারী হজ করার ইচ্ছা পোষণ করবে তাকে অবশ্যই হজের খরচ নির্বাহ করার আর্থিক সক্ষমতা থাকতে হবে।
    • হজের সফরে নারীদের সাথে অবশ্যই মাহারাম বা বৈধ দায়িত্বশীল ব্যক্তি থাকতে হবে।
    • বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী তিন মাস ইদ্দত পালন পরিপূর্ণ করতে হবে।
    • নারী বিবাহিত হলে তার স্বামীর অনুমতি অবশ্যই থাকতে হবে। তবে ফরজ হজের ক্ষেত্রে অনুমতি এত জরুরী নয়।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

 

যাদের ওপর হজ ফরজ

    • হজের পূর্ণ ফরজ বহন করার সক্ষমতা থাকতে হবে।
    • প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।
    • সুস্থ ও সবল থাকতে হবে।
    • স্বাধীন হতে হবে।
    • আকোল বা জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
    • হজের সময় বা মৌসুম হতে হবে।
    • হজের রাস্তা নিরাপদ ও নিরবিগ্ন হতে হবে।

 

নারীদের অতিরিক্ত আর্থিক সক্ষমতা

যে নারী হজ পালন করার ইচ্ছা পোষণ করবে তার সাথে যে মাহরাম পুরুষ হজ পালন করতে যাবে তার যদি আর্থিক সক্ষমতা  না থাকে তাহলে নারীকে অবশ্যই সেই মাহরাম পুরুষের আর্থিক খরচ বহন করার সক্ষমতা থাকতে হবে। আবার যদি এমন হয় যে নারী হজ পালন করতে যাবে তার মাহরাম পুরুষও যদি নিজ খরচে হজ পালন করতে যেতে চায় তাহলে সেই নারী তার মাহরাম পুরুষের সাথে হজে যেতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে সেই মাহরাম পুরুষের খরচ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়বে না।

নারীদের হজ পালন করার শর্ত

ইমাম আবুল হাসান সুখদি রঃ এর বর্ণনা মতে, মহিলাদের জন্য হজের বিধিমালাতে ১১ টি বিশেষ বিধান রয়েছে। সেগুলো হল-

    • একজন নারীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি তার স্বামী বা
      মাহারম পুরুষ থাকতে হবে।
    • একজন নারীর হজের খরচ থাকা আবশ্যক।
    • নারীরা চেহারা খোলা রাখলেও মাথা ঢাকতে হবে।
    • নারীরা সেলাই কৃত পোশাক পরিধান করতে পারবেন।
    • পুরুষদের জন্য জোরে জোরে তাবলিয়া সুন্নত নারীদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পড়া সুন্নত।
    • পুরুষগণের তাওয়াফ এর ৩ চক্করে বুক উঁচিয়ে হাত নেড়ে এবং বাহাদুরের মতো হাঁটা সুন্নত কিন্তু এমন নিয়ম মেয়েদের ক্ষেত্রে সুন্নত নয়।
    • সাফা – মারওয়া সাঁই করার সময় সবুজ চিহ্নদয়ের মাঝে নারীরা সাধারণ গতিতে হাঁটবেন। দ্রুতগতিতে হাঁটা যাবে না।
    • আরাফায় অবস্থান ও তাওয়াফে জিয়ারতের পর ঋতুস্রাব শুরু হলে মহিলাদের জন্য তাওয়াফে বিদা করা জরুরি নয়।
    • মেয়েদের হাযরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া মহিলাদের সুন্নত নয়। তবে যদি পুরুষ না থাকে তাহলে দিতে পারবে।
    • সাফা মারওয়া পাহাড়ে খালি না পেলে ওঠা সুন্নত নয়, তবে যদি পুরুষ শূন্য হয় তাহলে উঠতে পারবে।
    • পুরুষদের মাথা মন্ডন করতে হয় কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডন করার প্রয়োজন নেই। তারা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত চুল কাটবেন।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

 

ভিড়ের কারণে মহিলাদের শিথিলতা

মহিলা গন যদি ভিড়ের কারণে মুজদালিফায় অবস্থান করার সুযোগ না পায় এবং যদি মুজদালিফায় অবস্থান না করে মিনা চলে যায় তাহলে তাদের ওপর পশু জবাই ওয়াজিব নয়। (মুয়াল্লিমুল হুজজাজ)।
মহিলাগণ ভিড়ের কারণে যদি দিনের বেলায় কঙ্কর  মারার সুযোগ না পায় তাহলে নারীগণ রাতে কংকর মারতে পারবেন। এটা নারীদের জন্য জায়েজ আছে। মেয়েদের জন্য এটা মাকরূহ হবে না।(রদ্দুল মুখতারঃ  ২ / ২৪৮)।

কিছু বিশেষ মাসআলা

হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সঙ্গে হজের ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। হাজীদের কাফেলা যখন আমাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করত তখন আমরা মাথা থেকে চেহারার উপর চাদর ঝুলিয়ে দিতাম। যখন তারা আমাদের অতিক্রম করে যেত তখন চাদর সরিয়ে ফেলতাম। (আবু দাউদ পৃষ্ঠা ২/ ২৫৪ হাদিস ১৮৩৩)।

তাওয়াফে জিয়ারতের পর এবং আরাফায়  অবস্থানকালে যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে মহিলাদের  তাওয়াফে বিদা করা জরুরি নয়। তবে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাওয়াফে বিদা আদায় করে আসা উত্তম।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

হজ  শুরু করার পর যদি মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে শুধু তাওয়াফ ও সাঈ ব্যতীত অন্য সব আমল সম্পাদন করতে পারবেন। হজ শেষ করেঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অতঃপর ঋতুস্রাব বন্ধ হলে তাওয়াফ ও শাঈ  করে হজ শেষ করতে হবে। (আল মাসবুত,৪/১৭৯)।

ইহরামে থাকা অবস্থায় কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা নিষেধ। তবে পর পুরুষগণ থেকে মেয়েদের পর্দা করা ফরজ। প্রত্যেক মেয়েকে বেপর্দা হওয়ার গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা অনেক জরুরী। মেয়েরা তাদের চেহারা এমন ভাবে ঢেকে রাখবেন যাতে করে মুখের ওপর কোন কাপড়  না থাকে। তবে পর পুরুষের সামনে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দিবে আবার চলে যাওয়ার পর তা সরিয়ে দিতে হবে।

তবে যদি কাপড় এক ঘণ্টার বেশি এবং ১২ ঘণ্টার কম সময় চেহারার সাথে লেগে থাকে তাহলে পৌনে দুই কেজি গম বা তার সমমূল্য সাদকা দিতে হবে। আবার ১২ ঘণ্টার বেশি সময় যদি কাপড় দিয়ে চেহারা ঢাকা থাকে তাহলে একটি দম দুম্বা বা ছাগল জবাই করা ওয়াজিব হবে। (মুয়াল্লিম, পৃষ্ঠাঃ ২৩৭)।

হজের দিনগুলোতে যদি নারীরা নামাজ পড়তে না পারে ঋতুস্রাব হয় তাহলে মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার কাজগুলো নিয়ম মোতাবেক করে যেতে হবে। শুধু তাওয়াফে জিয়ারত স্থগিত রাখবে।ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর বা পবিত্র হওয়ার পর তা করে নিতে হবে। হজের কোরবানির পর নারীদের পূর্ণ মাথার চুল কাটার কোন প্রয়োজন নেই শুধু চুলের অগ্রভাগ কাটা ওয়াজিব। তবে মেয়ে যদি ছোট হয় তাহলে চুল কামানো যাবে তবে মনে রাখতে হবে চুল অবশ্যই মাহরাম ব্যক্তির মাধ্যমে কাটতে হবে পর পুরুষ বা বেগানা পুরুষ দিয়ে চুল কাটানো যাবে না। (ফাতাওয়া সামি, ২/৫১৬)।

যদি কোন নারী ঋতুস্রাব অবস্থায় তাওয়াফ করতে না পারে এবং তার যদি কোনভাবেই দেরি করা সম্ভব না হয় তাহলে এ অবস্থাতে তাওয়াফ করতে হবে এবং একটি উট বা গরু দম হিসাবে জবাই করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে তোওবা ও করে নিতে হবে। যদি তাওয়াফ না করে ফিরে আসে তাহলে মক্কায় গিয়ে আবার জিয়ারত করে আসতে হবে। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্ক বৈধ হবে না। ফাতাওয়া সামি, ২/৫১৮-৫১৯)।

মেয়েদের ক্ষেত্রে একা ঘরে নামাজ পড়া উত্তম এবং সেটা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর এই নিয়ম মক্কা মদিনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তাই মেয়েরা মসজিদুল হারাম এর পরিবর্তে নিজ  অবস্থানস্থলে নামাজ আদায় করলেও মসজিদে নামাজ আদায়কারীদের সমান সওয়াবে লাভ করবে। (পবিত্র মক্কা মদিনার পথে, পৃষ্ঠা ২৫)।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

নারীরা যদি মসজিদে নামাজ আদায় করতে চায় তাহলে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে যেতে হবে অন্যথায় তাদের দিকে দৃষ্টি পড়ার কারণে পুরুষেরা যেমন কোন হাগার হবে তেমনি নারীরাও গোনাগার হবে। নারীরা যদি পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজে শরিক হয় তাহলে কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নারীদের নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই নারীরা যদি মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না পায় তাহলে পুরুষের একপাশে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন। এতে করে কারো নামাজ নষ্ট হবে না।(ফাতাওয়া সামি,১/৫৭৪-৫৭৬)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মোবারকের সালাম পেশ করতে যাওয়া নারীদের জন্য মুস্তাহাব। তবে নারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত সময় জেনে নিয়ে নির্ধারিত গেট দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং পূর্ব দিকের নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করবে। ঋতুস্রাব অবস্থায় সালাম পেশ করতে মসজিদে যাওয়া যাবে না।( ওয়াফাউল ওয়াফা, ৪/ ১৩৬২)।

তবে মেয়েরা হজের সময় ঋতুস্রাব বন্ধের জন্য পিল খেতে পারেন। তবে যদি তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয় তাহলে খেতে পারেন। (কিতাবুল হজ্জ,পৃষ্ঠাঃ ৫৩)।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

মাসআলা

নারীদের ওপর যদি হজ ফরজ হয় তাহলে হজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্বামীর বাধা দিলেও তা মানা যাবে না। তবে যদি নফল হওয়া যায় তাহলে স্বামীর অনুমতি নেওয়া জরুরী।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

মাসআলা

কোন নারীর যদি টাকা থাকে কিন্তু যদি মাহারাম পুরুষ না থাকে তাহলে তার বদলে হজের ওসিয়ত করা যাবে। তার মৃত্যুর পর তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা তা আদায় করতে হবে।

মাসআলা

নারীর মাহারাম পুরুষ ছাড়া অন্য নারী সঙ্গে মিশেও হজ পালন করা যাবে না। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, “কোন নারী মাহারাম ছাড়া যেন হজ না করে”।

নারী পুরুষের হজের পার্থক্য

হজে নারী এবং পুরুষের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। হজ পালন করতে একজন পুরুষকে যেসব কাজ করতে হয় একজন নারীকেও ঠিক একই কাজ করতে হয়। তবে নারী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে যে সকল পার্থক্য থাকে তা হল-

মাহরাম পুরুষ

একজন পুরুষ আর্থিক অবস্থা থাকলে হজ করতে পারেন কিন্তু একজন নারী আর্থিক সচ্ছল হলেও মাহরাম পুরুষ ছাড়া হজ করতে পারে না।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

তালবিয়া পাঠ

ইহরাম বাধার পর তালবিয়া “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”পাঠ করতে হয়। আর তালবিয়া পুরুষেরা পড়বেন উঁচু স্বরে কিন্তু মেয়েরা তা উঁচু স্বরে পড়বে না নিচু স্বরে পড়বেন।

তাওয়াফ

তাওয়াফ করার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। কারণ তাওয়াফে পুরুষদের বুক উঁচু করে হাঁটতে হয় আর মেয়েরা স্বাভাবিক অবস্থায় হাঁটতে হবে।

পোশাক

হজের ইহরাম বাধা অবস্থায় পুরুষেরা সেলাই বিহীন চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করবে কিন্তু মেয়েরা স্বাভাবিক পর্দা করবে। শুধু মুখের উপর কাপড় লাগিয়ে রাখবে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কাপড় পরার পাশাপাশি মাথা ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে।

ইদ্দত পালন

কোন নারীর যদি স্বামী মারা যায় অথবা তালাকপ্রাপ্ত হয় তখন তাদের তিন মাস ইজ্জত পালন করতে হবে। এ সময় হজ পালন করা যাবে না। ইদ্দত পূর্ণ হলে হজের জন্য বের হতে পারবে।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

হাযরে আসওয়াদ স্পর্শ

কাবা শরীফের হাযরে আসওয়াদের চুম্বন বা স্পর্শের জন্য পুরুষের সাথে ঠেলাঠেলি করা যাবে না। পুরুষদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ছাড়া অথবা ভিড় ছাড়া যদি হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করা যায় তাহলে কোন বাধা নেই।

সাঈ অবস্থায়

সাফা মারওয়া পাহাড়ে সাঈ বা দৌড়ানো একজন নারীর কাছ থেকে এসেছে। তাই নারীরাও স্থায়ী করবে তবে দু সবুজ বাতির এলাকায় নারীরা দৌড়াবে না।

ঋতু বর্তি হওয়া

একজন নারী তাওয়াফ অবস্থায় ঋতুবর্তী হতে পারে তবে ঋতু চলাকালীন সময়ে এসে সবকিছুই করতে পারবে শুধু তাওয়াফ জিয়ারত করতে পারবেনা। তাহলে এক্ষেত্রে নারীকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফে জিয়ারত করে হজ পালন শেষ করবে। ঋতুস্রাব ১২ তারিখের পর বন্ধ হলেও জরিমানা দিতে হবে না।

শেষ কথা

হজ ইসলামী শরিয়ায় একটি ফরজ ইবাদত। জীবনে একবার ফরজ হজ হজ পালন করা আর্থিক সচ্ছল মানুষের ওপর ফরজ। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত আর্থিক সচ্ছলতা আসার সঙ্গে সঙ্গে হজ পালন করা। হজ পালন করা পুরুষের ওপর যেমন ফরজ তেমনি মেয়েদের ওপর ফরজ ইবাদত। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম আছে যেগুলো পালন করতে পারলে তবেই হজ পালন করতে পারবে।

একজন নারীর ওপর কখন হজ্ব ফরজ হয় এবং তাকে অবশ্যই হজ পালন করতে হয় আমি এ
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা অনেক
মেয়ের জীবনে কাজে আসবে।নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ হয় – নারীদের হজ পালন করার
শর্ত প্রতিটা মেয়ের জানা উচিত।

 

Rate this post