প্রশ্নঃ নির্ভরশীলতা তত্ত্ব কী? ডেভিড ইস্টার্নের বিশ্বব্যবস্থার তত্ত্ব বর্ণনা কর। 

অথবা, নির্ভরশীলতা তত্ত্ব কী? ডেভিড ইস্টার্নের বিশ্বব্যবস্থার তত্ত্ব আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ নির্ভরশীলতা মূলত উপনিবেশবাদ ও নব্য উপনিবেশবাদের প্রত্যক্ষ ফল। বৰ্তমান বিশ্বব্যবস্থা অনুযায়ী, অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহ উন্নত রাষ্ট্রসমূহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে এক ধরনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যার জন্য তৈরি হয়েছে নির্ভরশীলতা তত্ত্ব।

নির্ভরশীলতা তত্ত্বঃ Oxford Dictionary প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী- “Dependency is a set of theories which maintained that the failure to third world states to achieve adequate and sustainable levels of development resulted from their dependence on the advanced capitalist world. Dependency theories developed in opposition to the optimistic claims of modernization theory which saw the less developed countries being able to catch up with the West.” অর্থাৎ, নির্ভরশীলতা তত্ত্ব রাষ্ট্রসমূহের ওপর অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহের নির্ভরতা সম্পর্কে আলোচনা করে।

ডেভিড ইস্টার্নের তত্ত্বঃ নির্ভরশীলতা সম্পর্কে ডেভিড ইস্টার্ন যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা নির্ভরশীলতা ব্যাখ্যায় অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। নির্ভরশীলতার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ইস্টার্নের মতে- “A political system, therefore, will be identifed as a set of interactions, abstracted from the totality of social behaviour, through which values are thoritatively allocated for a society.” রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ইস্টার্ন চারটি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। ক. ব্যবস্থা, খ. পরিবেশ, গ. সাড়া প্রদান, ঘ. ফিডব্যাক।

ব্যবস্থাঃ মানুষের সকল ধরনের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপকে ইস্টার্ন একপ্রকার ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মানুষের সামাজিক আচরণের অন্তর্ভুক্ত ক্রিয়াকলাপের দ্বারাই রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ ব্যবস্থার ধারণাটি স্বতন্ত্র নয়।

পরিবেশঃ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইস্টার্ন পরিবেশকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। ক. অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, খ. বাহ্যিক পরিবেশ।

সাড়াদানঃ রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো একধরনের সাড়াদানকারী ব্যবস্থা।

ফিডব্যাকঃ রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে যে আউটপুট পাওয়া যায়, তাকে ফিডব্যাক বলে। নির্ভরশীলতা ব্যবস্থায় ইস্টার্নের তত্ত্বের অবদান অনস্বীকার্য। তবে এ তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। বিলওয়ারেনের মতে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ধনতান্ত্রিক কাঠামোয় আসার অর্থই যে ক্রমাগত অবন্নোয়ন সঠিক নয়। তিনি দেখান যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দ্রুত শিল্পায়ণ ঘটছে এবং তা স্বাধীনভাবেই ঘটছে।

পিটার ইভান্স দেখিয়েছেন, ফ্রাংক তার তত্ত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের গুরুত্বকে উল্লেখ করেছেন। নরম্যান লংগা বলেন, ফ্রাংকের দুর্বলতা হচ্ছে শ্রেণিগত বিশ্লেষণের ওপর যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে নির্ভরশীলতা ব্যাখ্যায় আন্দ্রে ফ্রাঙ্গের নির্ভরশীলতা তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম, যদিও এ তত্ত্বের অনেক সমালোচনা আছে। তিনি নির্ভরশীলতা তত্ত্বকে যতদূর সম্ভব একটা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সচেষ্ট হয়েছেন। এ তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠেছে। তার প্রদত্ত মেট্রোপলিস ও স্যাটেলাইট স্টেট ব্যবস্থার বাস্তব রূপ বিশ্বে দেখা যায়৷

Rate this post