প্রশ্নঃ জুডিশিয়াল নোটিশ বলতে কি বুঝ? আদালত কর্তৃক লক্ষণীয় ঘটনাসমূহ প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই—ব্যাখ্যা কর। যে সকল ঘটনা সম্পর্কে আদালত অবশ্যই জুডিশিয়াল নোটিশ গ্রহণ করবে তা বর্ণনা কর।

অথবা, “যে সকল ঘটনা আদালত কর্তৃক লক্ষণীয় তা প্রমাণ করার প্রয়োজন সেই”—উক্তিটির আইনগত তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। এবং যে সকল ঘটনা সম্পর্কে আদালত অবশ্যই জুডিশিয়াল নোটিশ নিবেন সেগুলির তালিকা দাও ৷

[‘Facts judicially noticeable need not be proved. Explain this principle of law and enumerate the facts of which a court must take judicial notice.]

জুডিশিয়াল নোটিশঃ সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়ম হচ্ছে মামলার পক্ষগণ তাদের বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করবেন এবং আদালত সেই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ঘটনাকে বা ঘটনাবলীকে সংশ্লিষ্ট আইনের আলোকে বিশ্লেষণ পূর্বক নিষ্পত্তি করবেন। কিন্তু এমন কতকগুলি বিষয় আছে যা পক্ষগণকে প্রমাণ করতে হয় না, ইহা সর্বজন স্বীকৃত ও চিরসত্য। এইগুলিকেই জুডিশিয়াল নোটিশ বলা হয়। সাক্ষ্য আইনের ৫৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালত যে সকল ঘটনা জুডিশিয়াল নোটিশে নিবেন অর্থাৎ বিচারক হিসেবে যে সকল ঘটনা দৃষ্টিগোচরে নিবেন তা প্রমাণের প্রয়োজন নেই।

এমন অনেক বিষয় আছে যা প্রায় সকলেরই জানা কিংবা প্রয়োজনবোধে সকলেই জানতে পারে। কাজেই আদালতও ইচ্ছা করলেই সহজেই তা জেনে নিতে পারেন। এজন্য কাউকে প্রমাণের দায়িত্ব দেয়া নিরর্থক। এটাই হচ্ছে বিচারকরূপে অবগত হওয়া বা জুডিশিয়াল নোটিশে নেয়ার মূল কথা।

যে সকল বিষয় আদালতকে জুডিশিয়াল নোটিশে নিতে হবে বা বিচারক হিসেবে দৃষ্টিগোচরে নিতে হবে তার বিবরণ সাক্ষ্য আইনের ৫৭ ধারায় দেয়া হয়েছে। এগুলি হচ্ছে নিম্নরূপ- 

(১) বাংলাদেশের আইনসমূহ, 

(২) সশস্ত্র বাহিনীসমূহের জন্য প্রণীত যুদ্ধবিধিসমূহ;

(৩) সংসদ এবং বাংলাদেশের বলবৎ আইনের বলে প্রতিষ্ঠিত কোন আইনসভার কার্যপদ্ধতি

(৪) বাংলাদেশের সকল আদালতের সীলমোহর, এডমিরালটি ও সামুদ্রিক এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতসমূহের সীলমোহর, নোটারী পাবলিকের সীলমোহর এবং উপযুক্ত ক্ষমতাবলে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সীলমোহর;

(৫) বাংলাদেশে কোন সরকারী পদে কারো যোগদানের বিষয় সরকারী গেজেটে বিজ্ঞাপিত হলে সেই পদে যোগদান, যোগদানকারী ব্যক্তির নাম, উপাধি, কর্তব্য, কাজ ও স্বাক্ষর; 

(৬) সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোন রাষ্ট্র অথবা রাজা বা রাণীর অস্তিত্ব, উপাধি ও জাতীয় পতাকা; 

(৭) সময়ের বিভাগ ও পৃথিবীর ভৌগোলিক বিভাগসমূহ;

(৮) বাংলাদেশের ভূখণ্ডসমূহ;

(৯) বাংলাদেশের সহিত অপর কোন রাষ্ট্রের বা সংগঠনের বিরোধ আরম্ভ হওয়া, চলতে থাকা ও অবসান হওয়া; 

(১০) আদালতের সদস্যবৃন্দ ও অফিসারদের ও তাদের সহকারী ও অধীনস্থ অফিসারদের ও কেরানিগণের এবং আদালতের কার্যসম্পাদনকারী অন্যান্য অফিসারদের এবং আইন অনুসারে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত সকল এ্যাডভোকেট ও অন্যান্য ব্যক্তিদের নাম;

(১১) স্থল বা সমুদ্রপথের নিয়মাবলী।

উপরিউক্ত সকল ক্ষেত্রে এবং সাধারণ্যে প্রকাশিত ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা বিষয়ে আদালত উপযুক্ত রেফারেন্স, পুস্তক বা দলিলাদির সাহায্য গ্রহণ করতে পারেন।

কোন ঘটনা জুডিশিয়াল নোটিশে নেয়ার জন্য কেউ যদি আদালতের নিকট দাবি জানায় তবে যে ব্যক্তি দাবি জানাবে সে উক্তরূপে প্রয়োজনীয় পুস্তক বা দলিল দাখিল না করা পর্যন্ত আদালত সেই ঘটনা দৃষ্টিগোচরে নিতে অস্বীকার করতে পারেন৷

Rate this post