প্রশ্নঃ নামজারি কি? নামজারি দরখাস্তের কারণ কি? নামজারির দরখাস্তকালে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা বা নামজারির দরখাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ কি কি?

ভূমিকাঃ ভূমি আইনে খতিয়ানের ন্যায় নামজারি বা মিউটেশনও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নামজারির মাধ্যমে সরকারি রেকর্ডে পুরাতন মালিকের নামের স্থানে নতুন মালিকের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। জমি হালনাগাদ করার একটি প্রক্রিয়া হলো নামজারি।

নামজারি (Mutation) কিঃ ইংরেজি Mutation শব্দের বাংলা হলো পরিবর্তন। অর্থাৎ নামজারির অর্থ হলো মালিকানার পরিবর্তন করা।

এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ জমি বা আংশিক জমি নিয়ে কোন ব্যক্তির নামে সরকার অথবা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যে ভূমিস্বত্ব প্রস্তুত করে তাকে খতিয়ান বলে।

বিভিন্ন মাধ্যম যেমনঃ বিক্রয়, বিনিময়, দান ইত্যাদির মাধ্যমে এই ভূমি অন্যের নিকট হস্তান্তর করা হলে সংশ্লিষ্ট খতিয়ান থেকে হস্তান্তরিত অংশ বাদ দিয়ে ভূমি গ্রহীতার নামে খতিয়ান খুলে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। একে নামজারি বা মিউটেশন বলে।

সহজভাবে বলা যায়, পুরাতন মালিকের স্থানে নতুন মালিকের নাম রেকর্ডভুক্ত করার আইনানুগ প্রক্রিয়াকে নামজারি বা মিউটেশন বলে।

নামজারি দরখাস্তের কারণ কিঃ পুরাতন মালিকের স্থানে নতুন মালিকের নাম রেকর্ডভুক্ত করার আইনানুগ প্রক্রিয়াকে নামজারি বা মিউটেশন বলে। নিম্নে নামজারি দরখাস্তের কারণ উল্লেখ করা হলো-

(১) নাম পরিবর্তন হলে : বিক্রয়, বিনিময়, দান, উত্তরাধিকার সূত্রে যে কোন কারণে হোক জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে নামজারির মাধ্যমে পুরাতন মালিকের নামের স্থলে নতুম ক. মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

(২) ভূমি একত্রিকরণ হলে : একই ব্যক্তির নামে একই মৌজায় একাধিক খতিয়ান থাকলে কর পরিশোধের সুবিধার্থে খতিয়ানগুলিকে একত্র করে নামজারি করা হয়।

(৩) ভূমি বিভক্তিকরণ হলে : একই খতিয়ানের কোন অংশ ভূমি যদি অন্য কোন ব্যক্তি লাভ করে তাহলে একটি খতিয়ান একাধিক মালিকানার অধীনে চলে যায়। এক্ষেত্রে জমির (মৌল হাল নাগাদ করার লক্ষ্যে প্রত্যেক মালিকের নামে আলাদা নামজারি করতে হয়।

(৪) সরকার জমি ক্রয় করলে : সরকার যদি তার কোন সংস্থার প্রয়োজনে জমি ক্রয় করে তাহলে সরকারের নামে নামজারি করতে হয়।

(৫) উত্তরাধিকার পরিবর্তন হলে : কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার সম্পত্তিতে তার উত্তরাধিকারগণ মালিকানা লাভ করে। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির নামের স্থলে নতুন মালিকদের নামে আলাদা নামজারি করতে হয়।

(৬) সম্পত্তি পরিত্যাক্ত হলে : কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি ফেলে চলে গেলে উক্ত সম্পত্তি সরকারের মালিকানা চলে যায়। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির স্থলে সরকারের নামে নামজারি করতে হয়।

(৭) সিকস্তির কারণে : সিকস্তির কারণে জমির কোন অংশ কমে গেলে খাজনা ও হারাহারিভাবে হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে সিকস্তি সম্পত্তি সরকারি ১নং খতিয়ানভুক্ত করা হয়। এজন্য নামজারি ও জমাবিভক্তি করতে হয়।

(৮) ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হলে : কোন খাস জমি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদান করা হলে মালিকানা পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে নামজারি করতে হয়।

উপসংহারঃ কোন জমির নামজারি করা না হলে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক বা সহ-শরীক তাদের নামে নামজারি করাতে পারে। এটি মালিকানার জন্য হুমকিস্বরূপ। নিজ নামে নামজারি করে রাখা হলে উক্ত জমি নিরাপদে থাকে। এছাড়া নামজারির কারণে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

Rate this post