প্রশ্নঃ নামজারি কি? ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারির কি সংস্কার হয়েছে? এই সংস্কার কি সঠিক লক্ষ্যে করা হয়েছে?

ভূমিকাঃ ভূমি আইনে খতিয়ানের ন্যায় নামজারি বা মিউটেশনও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নামজারির মাধ্যমে সরকারি রেকর্ডে পুরাতন মালিকের নামের স্থানে নতুন মালিকের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। জমি হালনাগাদ করার একটি প্রক্রিয়া হলো নামজারি।

নামজারি (Mutation) কিঃ ইংরেজি Mutation শব্দের বাংলা হলো পরিবর্তন। অর্থাৎ নামজারির অর্থ হলো মালিকানার পরিবর্তন করা।

এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ জমি বা আংশিক জমি নিয়ে কোন ব্যক্তির নামে সরকার অথবা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যে ভূমিস্বত্ব প্রস্তুত করে তাকে খতিয়ান বলে।

বিভিন্ন মাধ্যম যেমনঃ বিক্রয়, বিনিময়, দান ইত্যাদির মাধ্যমে এই ভূমি অন্যের নিকট হস্তান্তর করা হলে সংশ্লিষ্ট খতিয়ান থেকে হস্তান্তরিত অংশ বাদ দিয়ে ভূমি গ্রহীতার নামে খতিয়ান খুলে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। একে নামজারি বা মিউটেশন বলে।

সহজভাবে বলা যায়, পুরাতন মালিকের স্থানে নতুন মালিকের নাম রেকর্ডভুক্ত করার আইনানুগ প্রক্রিয়াকে নামজারি বা মিউটেশন বলে।

২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারির কি সংস্কার হয়েছেঃ ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারির যে সকল সংস্কার হয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারির ক্ষেত্রে ১৪৩(বি) এবং ১৪৩ (সি) ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

১৪৩(বি) ধারা : কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিত্যাক্ত স্থাবর সম্পত্তি ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীগণ লাভ করেন। এক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীগণ কর্তৃক বন্টননামা দলিল প্রস্তুত করে সকলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন আইন অনুযায়ী রেজিষ্ট্রি করতে হবে।

১৪৩(সি) ধারা : রাজস্ব অফিসার এই আইনের ৮৯ ধারা অনুযায়ী কোন নোটিশ পেলে নামজারির জন্য নথি খুলবেন এবং নামজারি সম্পর্কিত সহ-শরীকদের নোটিশ দিবেন ।

অত:পর রাজস্ব অফিসার নামজারি সম্পর্কিত অভিযোগের জন্য তারিখ র জন্য তার নির্ধারণ করবেন। উক্ত তারিখের মধ্যে আপত্তি না এলে রাজস্ব অফিসার খতিয়ান সংশোধন করবেন।

কিন্তু উক্ত তারিখের মধ্যে কোন সহ-শরীক আপত্তি জানালে রাজস্ব অফিসার উভয়পক্ষের শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন এবং উভয়পক্ষের শুনানি শেষে প্রয়োজনীয় আদেশ দিবেন এবং সেই অনুযায়ী খতিয়ান সংশোধন করবেন।

এই সংস্কার কি সঠিক লক্ষ্যে করা হয়েছেঃ ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারি সঠিক লক্ষ্যে করা হয়েছে কিনা নিম্নে উল্লেখ করা হল-

২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারির সংস্কারের পূর্বে উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে বন্টননামার বিধান ছিল না। অথচ এক্ষেত্রে বন্টননামা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারফলে কোন উত্তরাধিকার ইচ্ছা করলে অন্য শরীককে বাদ দিয়ে নামজারি করতে পারতো। পরবর্তীতে যা জটিলতায় রূপ নিত। ২০০৬ সালে উক্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়- ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে নামজারি নামজারির বিধান সঠিক লক্ষ্যে করা হয়েছে।

উপসংহারঃ কোন জমির নামজারি করা না হলে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক বা সহ-শরীক তাদের নামে নামজারি করাতে পারে। এটি মালিকানার জন্য হুমকিস্বরূপ। নিজ নামে নামজারি করে রাখা হলে উক্ত জমি নিরাপদে থাকে। এছাড়া নামজারির কারণে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

Rate this post