প্রশ্নঃ জীবদেহ ও যন্ত্রের সংজ্ঞা দাও।

অথবা, জীবদেহ ও যন্ত্র কী?

ভূমিকাঃ প্রাণশক্তির নির্ধারণ করতে গিয়ে যন্ত্র ও জীবদেহের আবির্ভাব হয়। প্রাণ বলতে আমরা এমন এক শক্তিকে বুঝি, যার বলে জীবের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিকাশসাধন, ঐক্য স্থাপন, দেহের ক্ষয় ক্ষতি পূরণ, পারিপার্শিকের সাথে দেহের সামঞ্জস্য বিধান, দেহ থকে দেহের উৎপাদন অর্থাৎবংশবৃদ্ধিকরণ প্রভৃতি কার্যসাধিত হয়ে থাকে।

যন্ত্রের সংজ্ঞাঃ যন্ত্রের ইংরেজী প্রতিশব্দ Machine। সাধারণত যন্ত্র হলাে কতকগুলাে জড় বস্তু সমন্বয়ে গঠিত একটি যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফল অর্থাৎ যন্ত্র হলাে কতকগুলাে অংশের সমষ্টি যাদের এমনভাবে আকার, আয়তন ও অবস্থানের দিক থেকে খাপ-খাওয়ানাে হয়েছে যে, তাদের পারস্পরিক ক্রিয়া এবং সহযােগিতার ফলে একটা যুক্ত বিষয়ের উৎপাদন হতে পারে; যেমনঃ ঘড়ি, কলম, বাড়ি, মােটর গাড়ি ইত্যাদি নিষ্প্রাণ এবং কৃত্রিম উপায়ে তৈরী জড়বস্তু বিশেষ। যন্ত্র হলাে কতকগুলাে জড় অংশের যান্ত্রিক সমষ্টি। যন্ত্রের সমগ্রতা অংশের ওপর নির্ভর করে কিন্তু অংশগুলাের অস্তিত্ব সমগ্রের ওপর নির্ভর করে না। যন্ত্রের কোনাে অংশের নিজস্ব লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে না। কেননা এদের স্বতন্ত্র কোনাে গতি নেই। মালিক বা যন্ত্রী যে প্রয়ােজনে যন্ত্রটিকে তৈরী করে তা সম্পূর্ণ করাই এর কাজ। অর্থাৎ যন্ত্রের নিজের কোনাে সুযােগ-সুবিধা বা মঙ্গলের জন্য নয় বরং মালিকের মেটানােই প্রয়ােজন যন্ত্রের প্রধান কাজ। সুতরাং যন্ত্র পরাধীন। এবং পর নিয়ন্ত্রিত তাই যন্ত্র কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট জড়বিশেষ।

জীবদেহের সংজ্ঞাঃ যন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবদেহ গঠিত। জীবদেহের ইংরেজী প্রতিশব্দ organism সেটি মূলত স্বয়ংক্রিয়া কিছুকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ একটা জীবন্ত জীবদেহ কতকগুলাে পরস্পর নির্ভরশীল এবং অন্তর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত জীবাংশের জৈবিক সমগ্রতা। প্রাণশক্তিকে কেন্দ্র করে এই অংশগুলাে গােটা জীবদেহের মধ্যে বিরাজ করে। জীবদেহ একটা কৃত্রিম সমগ্র নয়। জীবদেহ হহলাে তার সংখ্যাগুলাের একটা ঐক্য বা সংহতি। এর অংশগুলাে পরস্পর নির্ভরশীল এবং অংশগুলাে সমগ্রের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। যেমন দেহের কোনাে অঙ্গ বিকল হলে দেহের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। অন্যদিকে যদি কোনো একটি অঙ্গ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পরে তা বিকল হয়ে যায়। কেননা জীবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গের একটা নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে এবং এগুলাে সংযােজনের যােগ্য নয়। জীবদেহ অনুভূতি শক্তিতে উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া করে। অর্থাৎ জীবদেহ বহির্জগতের উত্তেজনা ও বেদনাহত ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তা ছাড়া জীবদেহ পরিবেশের সাথে খাপ-খাইয়ে চলে। নিজেবে সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে। স্বাধীনভাবে কোনাে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেহেতু জীবদেহ নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করে, তাই তার নিজস্ব উদ্দেশ্য আছে এবং সেটা পূরণে নিয়ােজিত থাকে। তবে এ জীবদেহ কাম উত্তেজনায় বংশ বৃদ্ধি করে বা প্রজনন ঘটায় এবং মৃত্যুতে প্রাণ ত্যাগ করে নিঃশেষ হয়ে যায়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, ওপরের আলােচনায় জীবদেহ ও যন্ত্রের কিছু পৃথক বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা এর সংজ্ঞা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাই। তবে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্যও রয়েছে।

Rate this post