প্রশ্নঃ ‘কনট্রিবিউশন’ এবং ‘সারোগেশন’ মতবাদের নীতিগুলো বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

কনট্রিবিউশনঃ সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে রেহেন সম্পত্তি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন থাকে এবং ঐ সম্পত্তিতে তাদের স্পষ্ট ও পৃথক পৃথক মালিকানার অধিকার থাকে সেক্ষেত্রে ভিন্ন চুক্তির অবর্তমানে উক্ত সম্পত্তির অংশের মালিকগণ তাদের নিজ নিজ অংশের আনুপাতিক হারে রেহেনের টাকা পরিশোধের জন্য দায়ী হয় এবং কি হারে তারা নিজ নিজ অংশের টাকা আদায় করবে তা নির্ধারণ করার জন্য পূর্ববর্তী অন্য কোন রেহেনের দেনা বা দায় এর মূল্য হতে বাদ দেয়ার পর প্রতি অংশের যে মূল্য থাকবে তাকেই রেহেনের তারিখে প্রতি অংশের মূল্য হিসেবে ধরা হবে।

আরো বলা হয়েছে যে, যখন দু’টি সম্পত্তির একই মালিক একটি সম্পত্তি এক ব্যক্তির নিকট রেহেন দেয় এবং পরে উভয় সম্পত্তি অপর এক ব্যক্তির নিকট রেহেন দেয় এবং প্রথম রেহেনের দেনা প্রথম রেহেন সম্পত্তি হতে পরিশোধ করা হয়, তখন ভিন্ন চুক্তির অবর্তমানে প্রথম সম্পত্তি হতে প্রথম দেনা পরিশোধের পর উভয় সম্পত্তি হতে আনুপাতিক হারে দ্বিতীয় দেনা পরিশোধ করতে হবে।

৮১ ধারা অনুসারে যে সম্পত্তিতে পরবর্তী রেহেন গ্রহীতার দাবী থাকবে তার প্রতি এই ধারার কোন কিছুই প্রযোজ্য হবে না৷

উদাহরণঃ ক এর দু’টি সম্পত্তি প্রত্যেকটির জন্য সম পরিমাণ ঋণের জন্য এর নিকট রেহেন দেয়৷ পরে আবার এর নিকট দেয়। এ পরিস্থিতিতে খ এর দেনা পরিশোধ না করে ক এর সমুদয় সম্পত্তি চ গ্রহণ করে অর্থ প্রদান করলে ছ ও জ এর জন্য অসুবিধাজনক হবে। চ এর এরূপ নির্বাচন আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এরূপ ক্ষেত্রে ক ও খ এর দু’টি সম্পত্তি হতে চ কে তার দায় গ্রহণ করতে হবে।

মার্শালিং ও কন্ট্রিবিউশনের মধ্যে বিরোধঃ মার্শালিং ও কন্ট্রিবিউশনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মার্শালিং নীতি বলবৎ থাকবে, কেননা ৮২ ধারার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কন্ট্রিবিউশনের অধিকার মার্শালিং নীতির শর্তাধীন।

সারোগেশনঃ রেহেন সম্পত্তি রেহেনমুক্ত করা রেহেনদাতার কর্তব্য। কিন্তু রেহেনদাতা ছাড়াও প্রয়োজনবোধে ৪ শ্রেণীর ব্যক্তি এরূপ সম্পত্তি রেহেনমুক্ত করার অধিকারী, যা ৯১ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে। এরা হচ্ছে-
(১) রেহেন সম্পত্তিতে যার স্বার্থ আছে।
(২) রেহেন মুক্তির অধিকারে যার স্বার্থ আছে।
(৩) রেহেনের অর্থ বা এর অংশ বিশেষ পরিশোধের নিশ্চয়তা দানকারী ব্যক্তি।
(৪) রেহেনদাতার যে কোন পাওনাদার যে রেহেন সম্পত্তি বিক্রির জন্য ডিক্রি পেয়েছে।

রেহেনদাতা ব্যতিরেকে অপর কোন ব্যক্তি যে রেহেনের অর্থ পরিশোধ করে সম্পত্তি রেহেনমুক্ত করে সে ব্যক্তি কিরূপ সুবিধা পাবে তার বিধান ৯২ ধারায় দেয়া হয়েছে।

এভাবে রেহেনমুক্ত করার পর রেহেনগ্রহীতার যে সকল স্বত রেহেনদাতা বা অপর কোন রেহেনগ্রহীতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান ছিল তা উক্ত রেহেনমুক্তকারী ব্যক্তি লাভ করবে।

এ ধারায় প্রদত্ত অধিকারকে বলা হয় স্থলাভিষিক্তের অধিকার বা স্থলাবর্তীর অধিকার। যে ব্যক্তি রেহেগ্রহীতার দায় পরিশোধ করে সে ব্যক্তি তার অধিকার অর্জন করে এবং তার স্থলাভিষিক্ত হয়। স্থলাভিষিকের অর্থ এই যে, রেহেনের টাকা পরিশোধের সঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি যদি নিজে পরিশোধ করে তবে যে ব্যক্তির পাওনা সে পরিশোধ করলো তার সমস্ত অধিকার ও প্রতিকারে পরিশোধকারী স্থলবর্তী হয়৷

রেহেনগ্রহীতার প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করে তার স্থলাবর্তী হলে ঐ রেহে গ্রহীতার ক্ষেত্রে সম্পত্তি রেহেনমুক্ত হয় বটে কিন্তু রেহেনের পরিসমাপ্তি ঘটে না। ইহা বলবত থাকে এবং পরিশোধকারী ব্যক্তির উক্ত রেহেনের সুবিধাদি বর্তায়। তবে সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে মুক্ত না হলে কোন ব্যক্তি স্থলাভিষিক্ত হবার অধিকারী হবে না।

৯১ ও ৯২ ধারার বিধান অনুযায়ী নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ স্থলাবর্তী হবার অধিকারীঃ
১. একজন পরবর্তী রেহেনগ্রহীতা, যে কোন পূর্ববর্তী রেহেন মুক্ত করেছে।
২. রেহেন দেনার একজন জামিনদার, যে একটি রেহেন মুক্ত করেছে।
৩. একজন সহ রেহেনদাতা যে একটি রেহেন মুক্ত করেছে।
৪. একজন পাওনাদার যার অর্থ দ্বারা রেহেনদাতা রেহেনমুক্ত করেছে এবং রেহেনদাতা রেজিষ্ট্রি দলিল মাধ্যমে উক্ত পাওনাদারের স্থলাবর্তি হবার সম্মতি দান করেছে।

Rate this post