প্রশ্নঃ প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখ।

ভূমিকাঃ নৈতিকতার মানদণ্ড সম্পর্কীয় মতবাদ হিসেবে স্বজ্ঞাবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বজ্ঞাবাদ কোনাে প্রকার বিচার বুদ্ধির সাহায্য নেয় না। মানুষের অন্তরে যে বিবেক বা অন্তদৃষ্টি আছে তার সাহায্যে সে তার চারপাশের অবস্থাকে মূল্যায়ন করে থাকে। স্বজ্ঞাবাদ নিয়ে বিভিন্ন চিন্তাবিদ বিভিন্ন রকম আলাপ-আলােচনা করেছেন। প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদ তাদের মধ্যে অন্যতম।

প্রিচার্ডের স্বজ্ঞাবাদঃ নীতিদর্শনের উপর প্রিচার্ডের লেখাগুলাে প্রবন্ধ ও বক্তৃতা অনসুরে বের হয় এবং এগুলােকে কেন্দ্র করেই ‘Moral obligation’ শীর্ষক তার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ‘Does moral philosophy Rest. on a mistake’ শীর্ষক প্রিচার্ডের উল্লেখযােগ্য প্রবন্ধটি ১৯১২ সালে ‘Mind’ এ প্রকাশিত হয়। পদ্ধতিগত স্পষ্টতা এবং অধিকতর সাঠক উপস্থাপনার ব্যাপারে প্রিচার্ড নিজেকে একজন অগ্রদূত হিসেবেই মনে করতেন। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার যে, এ প্রবন্ধটির প্রথম দিকের অনুচ্ছেদগুলােতে যে যুক্তিগুলাে রয়েছে, যেগুলাে ব্রাডলি এবং মূরের লেখাও রয়েছে, সে সম্পর্কে প্রিচার্ডের আপাত অসজাগতা রয়েছে।

কর্তব্য একটা চূড়ান্ত গুণঃ “কেন আমাদের কর্তব্য পালন করা উচিত” এ প্রশ্নটির উত্তর প্রিচার্ড তার প্রবন্ধে দুই রকম হতে পারে। এদের প্রথমটি হচ্ছে সুখের জন্য এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে শুভ বা পাওয়ার জন্য। কিন্তু সরলতম ক্ষেত্রে এ দুটি মত একত্রিত হয়ে যায় এবং মনে করা হয় যে, সুখই হচ্ছে সেই শুভ যার উপলব্ধি কাম্য।

নৈতিক সত্যতা স্বতঃপ্রমাণিতঃ এ প্রসঙ্গে মেরী ওয়ারনক বলেন যে, যদি ভালাে একটা রহস্যাত্মক গুণ হয়, তাহলে বাধ্যতাবােধ আরও রহস্যাত্মক গুণ হতে বাধ্য। ব্রাডলি যখন তার মতের সমর্থনের ব্যাপারে নৈতিক সচেতনতার কথা বলেন। প্রিচার্ড তখন সম্ভব সহজ বুদ্ধির মতাে অধিকতর কোনাে কিছুর কথা বলেন। প্রিচার্ড বাধ্যবাধকতার সঙ্গে অন্য কোনাে কিছুর একত্রীকরণের কোনাে যুক্তির অনুপপত্তি আছে।

বাধ্যতাবােধ ও নৈতিক কর্তার সুখঃ প্রিচার্ড একদিকে বাধ্যতাবােধ ও নৈতিক কর্তার সুখ এবং অপরদিকে বাধ্যতাবােধের সাথে সুখের ভালাে উৎপাদনের সম্পর্ক সম্বন্ধেও আলােচনা করেন। বাধ্যকতাবােধের অধীনে কোনাে কাজ করার পেছনে নানা রকম বিষয় জড়িত।

বাধ্যতাবােধের অধীন হওয়াঃ এটা মনে হয় প্রিচার্ডের অনির্দিষ্টতর স্বজ্ঞার মধ্যে একটি। বাধ্যতাবােধ যদি একটি উপলক্ষণই হয়ে থাকে, তাহলে হলুদত্বের মতাে একটা উপলক্ষণ হবে। এ বক্তব্যটির উপর জোর দেয়ার ফলেই সমস্যাটির উদ্ভব হয় এবং সম্ভবত চিন্তা দ্বারাও সমস্যাটির উদ্ভব হয়।

বাধ্যতাবােধের অধীন হওয়া স্বয়ং আমাদেরই বৈশিষ্ট্যঃ ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ একাডেমীতে এক প্রদত্ত ভাষণে Duty and Ignorance of Fact শীর্ষক একটি প্রবন্ধে প্ৰিচার্ড এ সমস্যার বিবেচনা করেন।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাধ্যবাধকতা তার চিন্তার উপর নির্ভর করে। এই বক্তব্য সম্পর্কীয় তার দ্বিতীয় সমাধানটিকে প্ৰিচার্ড বিষয়ীগত মত বলে আখ্যায়িত করেন এবং এর উপরেই তিনি পরিশেষে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তিনি মনে করেন, বাধ্যবাধকতার অধীন হওয়াকে মানুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমাদের চিন্তা করা উচিত।

Rate this post