মহম্মদ-বিন্-তুঘলক (১৩২৪-‘৫১ খ্রি:):

পিতা গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পরে জুনা খাঁ (উলুঘ খাঁ) সিংহাসনে বসেন। সুলতানি পদে বসার পর তিনি মহম্মদ-বিন্-তুঘলক, মহম্মদ তুঘলক বা মহম্মদ শাহ্ ইত্যাদি নানা নামে সমসাময়িক লেখকগণ কর্তৃক উল্লিখিত হয়েছেন। আমরা মহম্মদ তুঘলক নামেই তাঁকে উল্লেখ করব। সম্ভবত, দিল্লির সুলতানদের মধ্যে মহম্মদ তুঘলকের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না। কেউ তাঁকে বলেছেন ‘অসভ্য বর্বর’, কারও ভাষায় তিনি ছিলেন ‘বিকৃত মস্তিষ্ক’, আবার কেউ তাঁকে বলেছিলেন, ‘দয়ার সাগর’। মধ্যযুগ থেকে আজও তাঁর চরিত্র এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে নিরস্তর বিতর্ক চলে আসছে পণ্ডিতদের মধ্যে।

সুলতান মহম্মদ তুঘলকের রাজত্বকাল সম্পর্কে মূল আকর গ্রন্থ তিনটি হল—জিয়াউদ্দিন বারাণীর *তারিখ-ই-ফিরোজশাহি’, ‘ইসামীর ‘ফুতুহ-উস্-সালাতিন’ এবং ইবন বতুতার ‘রেহালা’। কিন্তু এঁরা কেউই মহম্মদ তুঘলক সম্পর্কে আন্তরিক ও নিরপেক্ষ ছিলেন না। সুলতানের শিক্ষা, ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় উদারতা, হিন্দু ও সুফি-সন্তদের সাথে সুসম্পর্ক। সর্বোপরি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্র থেকে ‘উলেমা’ প্রমুখ ধর্মীয় নেতাদের বিচ্ছিন্ন করা প্রভৃতির জন্য এঁরা সুলতানের ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। পরন্তু এঁদের বিবরণীতে ঘটনাবলির সময়কাল কিংবা কালানুক্রম উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি সুলতান কর্তৃক পরিকল্পিত এবং রূপায়িত কার্যাবলির উদ্দেশ্য, প্রকৃতি ও ফলাফল বিশ্লেষণের কোনো চেষ্টা এঁরা করেননি। স্বভাবতই এঁদের রচনা থেকে ইতিহাসভিত্তিক বিবরণ প্রস্তুত করার কাজ বেশ দুরূহ। এ ছাড়া আমির খসরু’র ‘তুঘলকনামা’, ফেরিস্তা’র ‘তারিখ-ই-ফেরিস্তা’ ইয়াহিয়া বিন্ আহমেদ (শিরহিন্দি)-এর ‘তারিখ-ই-মুবারকশাহি, শামস্-ই-সিরাজ আফিফের ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহি’ গ্রন্থ থেকেও মহম্মদ তুঘলকের রাজত্বকালের নানা তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই সকল গ্রন্থের ক্ষেত্রেও ঘটনার ধারাবাহিকতা সম্পর্কিত ত্রুটি বর্তমান। আধুনিক গবেষক ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে ড. আগা মেহদী হোসেন, এন. এইচ. রিজভী, কে. এস. নিজামী, ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রমুখ আকর গ্রন্থসমূহের ভিত্তিতে মহম্মদ তুঘলকের কর্মসূচির কালানুক্রম ও প্রকৃতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। তবে মধ্যযুগীয় লেখকদের মতোই আধুনিক গবেষক ও ইতিহাসবিদগণও মহম্মদ তুঘলকের চরিত্র ও রাজতন্ত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেননি।

গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের জ্যেষ্ঠপুত্র ফকরউদ্দিন মহম্মদ জুনা খাঁ সৈনিক হিসেবেই জীবন শুরু করেন। সুলতান মুবারক খলজি এবং খসরু শাহ’র অধীনে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। খসরু শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় জুনা খাঁ পিতার পাশে এসে দাঁড়ান এবং সাহায্য করেন। পিতা গিয়াসউদ্দিন সিংহাসনে বসে জুনা খাঁ’কে ‘উলুঘ খাঁ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বরঙ্গলের বিরুদ্ধে দুটি সামরিক অভিযানে উলুঘ খাঁ সুলতানি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। অতঃপর পিতার দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর পরে ‘মহম্মদ তুঘলক শাহ’ উপাধি ধারণ করে তিনি দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

বারাণীর মতে, মহম্মদ তুঘলক ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে তুঘলকাবাদে সিংহাসনে বসেন। ইসামীর বিবরণ অনুযায়ী তাঁর সিংহাসনারোহণের কাল ১৩২৪ খ্রিঃ। খসরুর ‘তুঘলকনামা’র বিবরণ অনুযায়ী গিয়াসউদ্দিন সিংহাসনে বসেন ১৩২০-র সেপ্টেম্বরে এবং রাজত্ব করেন ৪ বছর ৩ মাস। ১৩২৪ এর নভেম্বরে জারি করা মহম্মদ তুঘলকের একটি সরকারি দানপত্রও পাওয়া গেছে। সম্ভবত ১৩২৪ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মহম্মদ সিংহাসনে বসেন এবং ৪০ দিন পরে অর্থাৎ ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে তাঁর অভিষেক সম্পন্ন হয়। বারাণী মহম্মদের অভিষেক অনুষ্ঠানের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। অভিষেক উপলক্ষ্যে সমগ্র দিল্লি শহরকে সুসজ্জিত করা হয়। নির্মিত হয় একাধিক বিশাল ও অলংকৃত তোরণ। শোভাযাত্রার গমনপথগুলিকে রঙিন কাপড়ে ঘিরে দেওয়া হয়। মুঠো মুঠো স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা ছুঁড়ে দেওয়া হয় পথের দু’পাশে অপেক্ষমান দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে। এমনকি হাতির পিঠে চড়ে মুদ্রা ছুঁড়ে দেওয়া হয় পথিপার্শ্বের গৃহের বারান্দার অভ্যন্তরেও। ফলে শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান, মুক্ত মানুষ বা ক্রীতদাস সবাই সুলতানের দীর্ঘায়ু ও শুভেচ্ছা কামনা করতে থাকে। বস্তুত, আলাউদ্দিন খলজি ছাড়া অন্য কোনো সুলতান সিংহাসনলাভের মুহূর্তে এত উদার হস্তে জনসাধারণের মধ্যে অর্থ বিতরণ করেননি।

কালানুক্রম :

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বারাণী বা ইসামী প্রমুখ মহম্মদ তুঘলকের রাজত্বকালে সংঘটিত ঘটনাবলির ধারাবাহিক বিবরণ দেননি। বারাণী তাঁর নিজের বিচারে ঘটনার গুরুত্ব বা প্রকৃতি অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করেছেন ; সংগঠনের কাল অনুযায়ী নয়। ইবন বতুতা এদেশে আসার পর যা ঘটেছে, সেগুলির ধারাবাহিক বিবরণ দেবার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাঁর আগমনপূর্বের ঘটনা সম্পর্কে তাঁর আলোচনা পরিষ্কার নয়। তুলনামূলকভাবে ইসামী ও বদর-ই-চার্চ-এর বিবরণ অনেক বেশি উপযোগী। যাই হোক, এঁদের বিবরণ সমকালীন কাব্য-সাহিত্য, মুদ্রা ও লিপি, মরমিয়া সাহিত্য এবং বিদেশি পর্যটকদের বিবরণের ভিত্তিতে মহম্মদের রাজত্বকালের প্রধান ঘটনাবলির একটা ধারাবাহিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করা যেতে পারে।

মহম্মদ তুঘলকের সিংহাসনে বসার অব্যবহিত পরবর্তী প্রধান ঘটনা হিসেবে তরমাশিরিন খাঁ’র নেতৃত্বে মোঙ্গল আক্রমণের কথা উল্লেখ করা যায়। ফেরিস্তা মোঙ্গল আক্রমণের কাল হিসেবে ১৩২৬ ‘২৭ খ্রিস্টাব্দের কথা লিখেছেন। শিরহিন্দি ‘মুবারক শাহি’ গ্রন্থে এই সময়কাল নির্দিষ্ট করেছেন ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দে। ড. নিজামী, ইসামীর একটি বক্তব্যের ভিত্তিতে ১৩২৫-২৬ খ্রিস্টাব্দের কথা লিখেছেন। শিরহিন্দী ‘মুবারক শাহি’ গ্রন্থে এই সময়কাল নির্দিষ্ট করেছেন ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দ। ড. নিজামী ইসামীর একটি বক্তব্যের ভিত্তিতে ১৩২৫-২৬ খ্রিস্টাব্দকে মোঙ্গল আক্রমণের সঠিক কাল বলে মনে করেন। ইসামী লিখেছেন : সিংহাসনে আরোহণের অব্যবহিত পরেই সুলতান কালানুর ও ফারাসুর (পেশোয়ার) অভিযান করেছিলেন।” ড. নিজামীর মতে, “মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার পরেই সম্ভবত সুলতান সীমান্ত নিরাপত্তা সুদৃঢ় ও সুনিশ্চিত করার জন্য এই দুটি সীমান্তপ্রদেশে অভিযান চালান।”

ইসামীর বিবরণ অনুসারে সুলতানের ক্ষমতালাভের দুই বছর পরে তাঁর আত্মীয় বাহাউদ্দিন গুরুসাস্প বিদ্রোহ করেছিলেন। অর্থাৎ এর সময়কাল ছিল ১৩২৬-‘২৭ খ্রিস্টাব্দ। এটি ছিল সুলতানের বিরুদ্ধে প্রথম চ্যালেঞ্জ। এই ঘটনার পর সম্ভবত তিনি কোন্ধানা দুর্গ দখলের চেষ্টা করেন। ইসামী লিখেছেন : “এই দুর্গের অবরোধ ভাঙতে লেগেছিল প্রায় ৮ মাস। গুরুসাস্প-এর বিদ্রোহ করতে সময় ব্যয় হয়েছিল কম করেও পাঁচ থেকে ছয় মাস। তাহলে সুলতান কোন্ধানা বিজয় সম্পন্ন করেছিলেন ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধে।”

কোন্ধানা দুর্গ জয়ের পর সুলতান যখন দেবগিরিতে বিশ্রামরত ছিলেন, তখন তিনি বাহরাম আইবা কিসলু খাঁ’র বিদ্রোহের সংবাদ পান। বারাণী এই বিদ্রোহের কোনো সময় উল্লেখ করেননি, তবে এটিকে প্রথম বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য কালানুক্রম অনুযায়ী ঠিক নয়। নিজামী, ইসামীর বিবরণের ভিত্তিতে এই বিদ্রোহের কাল ১৩২৭-‘২৮ খ্রিস্টাব্দ বলে মনে করেন।

প্রায় একই সময়ে গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ্ বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন বলে ইসামী উল্লেখ করেছেন। সুলতান আইবার বিদ্রোহ দমনের পরে সংবাদ পান যে, গিয়াসউদ্দিনের বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং ধরা যেতে পারে, গিয়াসউদ্দিনের বিদ্রোহ ১৩২৮-এর শেষদিকে সংঘটিত হয়েছিল। মুদ্রা থেকেও এই অভিমতের সমর্থন পাওয়া যায়। ১৩২৮-এর পর সুলতান মহম্মদ ও বাহাদুর শাহ’র যুগ্মনামাঙ্কিত কোনো মুদ্রা পাওয়া যায়নি।

মহম্মদ-বিন্-তুঘলকের দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথা বিতর্কিত পরিকল্পনা দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর এবং তাম্রমুদ্রার প্রচলনের সময়কাল যথাক্রমে ১৩২৮-২৯ এবং ১৩২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দে স্থির করা যায়। ইসামীর বিবরণ অনুযায়ী তামার মুদ্রা চালু ছিল তিন বছর। এই কাজ শুরু করা হয়েছিল রাজধানী স্থানান্তরের পরে। আবার রাজধানী স্থানান্তর কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল সুলতান কর্তৃক মুলতানে আইবার বিদ্রোহ দমন করে দিল্লি ফেরার পরে। তাহলে তামার মুদ্রা চালু ছিল ১৩৩১-৩২ খ্রিঃ পর্যন্ত। অর্থাৎ মুদ্রা চালু হয়েছিল ১৩৩১/৩২-৩৩ অর্থাৎ ১৩২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দে। এবং রাজধানী স্থানান্তর ঘটেছিল ১৩২৮-‘২৯ খ্রিস্টাব্দে।

মহম্মদ কর্তৃক খোরাসান বিজয়ের জন্য বাহিনী গঠন এবং কারাচল অভিযানের সময়কাল নিরূপণ করা কিছুটা কঠিন। কারণ সমকালীন লেখকেরা এ সম্পর্কে নীরব থেকেছেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিচারে বলা চলে যে, এই দুটি প্রকল্পের সময় ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দের পরে নিশ্চয় ছিল না। কারণ ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দের অনাবৃষ্টি দেশে প্রচণ্ড খাদ্যাভাব সৃষ্টি করেছিল। ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইবন বতুতা দিল্লিতে পৌঁছে লক্ষ্য করেন যে, তখনো সরকারের তরফ থেকে জনগণকে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এর পরে দক্ষিণ ভারতের বিশৃঙ্খলা দমনের কাজে সুলতান প্রায় আড়াই বছর ব্যস্ত ছিলেন। সুতরাং খোরাসান বা কারাচল প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল অবশ্যই ১৩৩৩-এর আগে। মির খুর্দ-এর ‘সিয়াল-উল-আউলিয়া’ গ্রন্থের ভিত্তিতে ড. নিজামী মনে করেন, ১৩৩০-৩১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান খোরাসান জয়ের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করেছিলেন এবং এই সময়কালেই তা ভেঙে দেন। এর এক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করেন কারাচল অভিযান।

সম্ভবত, এর পরে সংঘটিত হয়েছিল মাবার ও বাংলাদেশের দুটি বিদ্রোহ। মাবারের শাসক জালালউদ্দিন শাহের শেষ মুদ্রার তারিখ ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দ। তাই ধরা যেতে পারে, এই সময়ের পরেই তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। ড. নিজামীর হিসেবে বাংলাদেশের বিদ্রোহ ঘটেছিল ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময়ে। ইসামী লিখেছেন : “দৌলতাবাদ থেকে সুলতানের প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশে বিদ্রোহ ঘটেছিল।” ইবন বতুতা লিখেছেন: “সুলতান দৌলতাবাদে ছিলেন প্রায় আড়াই বছর। অর্থাৎ তিনি ফিরেছিলেন ১৩৩৬-৩৭-এর কোনো এক সময় এবং এর পরে বাংলাদেশের বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছিলেন।”

ইসামীর বিবরণ অনুযায়ী সুলতান ১৪ বছর পর দিল্লির অধিবাসীদের পুনরায় স্বস্থানে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেন। সেই অনুসারে দিল্লির নবজীবন লাভের বছরটিও ছিল ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু বারাণী তথ্য সহকারে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ১৩৩৫-৩৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই ইচ্ছুক ব্যক্তিরা দক্ষিণ ভারত থেকে উত্তর ভারতে ফিরে আসার কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন। মহম্মদ তুঘলকের অন্যান্য ঘটনাবলি সম্পর্কে মোটামুটিভাবে নির্দিষ্ট সময়কাল সমকালীন রচনা থেকে পাওয়া যায়।

Rate this post