আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত। সাধারণভাবে বলা যায় যে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা হল নাগরিকদের আনুগত্য। এই আনুগত্য রাষ্ট্রীয় আইন ও আদেশ-নির্দেশের প্রতি। রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার কেন্দ্রীয় প্রশ্ন হল কেন নাগরিকরা এই আনুগত্য দেখায়। বাধ্যবাধকতা হল একটা বন্ধন যার প্রতি নাগরিক বা ব্যক্তি আবদ্ধ থাকে। এই বন্ধন নৈতিক বা বৈধ হতে পারে। কোন ব্যক্তির উপর আরোপ করা হয়েছে যে কর্তব্য তার ঔচিত্যকে বলে নৈতিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু আইন ও রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় আইন ও কর্তৃত্বের প্রতি নাগরিকদের বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়। যাইহোক বাধ্যবাধকতা মানুষকে আরোপিত কোন একটি বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে বার্কারের অভিমত:

বার্কার তাঁর Principles of Social and Political Theory শীর্ষক গ্রন্থে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতানুসারে রোমান আইন থেকে ‘বাধ্যবাধকতা’ কথাটি এসেছে (“The term obligation’ is a term derived from Roman Law.”)। জাস্টিনিয়ান ইন্‌স্টিটিউট (Institutes of Justinian)-এ বাধ্যবাধকতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংজ্ঞা অনুযায়ী বাধ্যবাধকতা হল একটি আইনগত বন্ধন। এই বন্ধনের দরুন কোন কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি অপরিহার্যভাবে বাধ্য হয়ে পড়ে (“…a legal bond juris vinculum) in virtue of which we are tied by necessity to some performance.”)। বার্কারের অভিমত অনুসারে এই বাধ্যবাধকতা দু’ধরনের হতে পারে। বাধ্যবাধকতার এই দুটি ধরন হল ব্যক্তিগত এবং রাজনীতিক। ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতাও একটি বন্ধন। এই বন্ধন সাধারণ মানুষের মধ্যে। এর জন্য একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে প্রত্যেক ব্যক্তি অনুরূপ আর একজন ব্যক্তির হয়ে কোন কাজ করতে বাধ্য হয়। বার্কারের মতানুসারে এই ধরনের বাধ্যবাধকতা বলবৎকৃত আইনের বাধ্যবাধকতা। বার্কার বলেছেন: “When it is civil, and takes the form of a bond between private person, I am tied as a private person to perform some act for another such private person, and the necessity by which I am tied is that of enforced law.” রাজনীতিক বাধ্যবাধকতাও হল একটি বন্ধন। এই বন্ধন নাগরিক হিসাবে একজন ব্যক্তি এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের (governing authority) মধ্যেকার। প্রত্যেক ব্যক্তি নাগরিক হিসাবে শাসক-কর্তৃপক্ষের জন্য কোন বা কিছু কাজ করতে দায়বদ্ধ। বার্কার বলেছেন: “When the obligation is political, and takes the form of a bond between me as a citizen and the governing authority as such, I am tied as a citizen to perform an act, or rather a number of acts, for the governing authority ; ….”

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার প্রকৃতি ও উৎস:

বার্কার এই বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনীয়তা বা কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে একজনের সঙ্গে আর একজনের বন্ধনের উপর বলবৎকৃৎ আইনের বাধ্যবাধকতা বর্তমান থাকে। এই বাধ্যবাধকতা সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কিছু। নাগরিক হিসাবে ব্যক্তির উপর এবং কর্তৃত্ব হিসাবে শাসক কর্তৃত্ব উভয়ের উপর এই বাধ্যবাধকতা বর্তমান থাকে। এই বাধ্যবাধকতা উভয়ের থেকেই স্বতন্ত্র। বার্কার এই বাধ্যবাধকতার প্রকৃতি পর্যালোচনার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতানুসারে এই বাধ্যবাধকতা বলবৎকৃত আইন নয়। কারণ আইন হল শাসক-কর্তৃত্বেরই একটি দিক বা পদ্ধতি। সুতরাং আইনকে শাসক কর্তৃত্বের ঊর্ধ্বে অবস্থিত বলা যায় না। আবার আইন শাসক-কর্তৃত্ব থেকে স্বতন্ত্র নয়। তাই বার্কার আইনের এক্তিয়ারের বাইরে এই বাধ্যবাধকতার সূত্রের সন্ধান করেছেন। তিনি বলেছেন: “It cannot be enforced law; that is simply a mode or aspect of governing authority, and not something above it and separate from it. Some other answer has to be found.” এ ক্ষেত্রে তিনটি ভিন্ন মতবাদের কথা বলা হয়েছে। এই মতবাদগুলি হল: 

  • (ক) ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্ব (The Theory of Divine Right), 

  • (খ) ভোগ-দখলী স্বত্বের তত্ত্ব (The Theory of Prescriptive Possession) এবং 

  • (গ) চুক্তি তত্ত্ব (The Theory of Contract).

রাজনৈতিক মতবাদ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা:

নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য এবং রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি বাধ্যবাধকতার বিষয় বিশেষভাবে বিতর্কিত। এ ক্ষেত্রে সর্বজনগ্রাহ্য কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সহজ নয়। প্রচলিত ধারণা অনুসারে আইনের প্রতি বাধ্যবাধকতার কারণ আইনের উৎসের মধ্যেই বর্তমান। আইনের উৎস হল রাষ্ট্র-কর্তৃত্ব। এই রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন বা চরম ও চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী। এই ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে, প্রয়োগ করে এবং সকলকে তা মেনে চলতে বাধ্য করে। এই কারণে রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করে চলতে নাগরিকরা বাধ্য হয়। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি নাগরিকদের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত এই ব্যাখ্যা সকলে স্বীকার করেন না। অনেকে এ ক্ষেত্রে আইনের উৎসের পরিবর্তে উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু ও বক্তব্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার প্রকৃতি বিচার-বিবেচনার ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথা, সম্মতি প্রভৃতির কথাও বলা হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা যে যার সমকালীন অবস্থা ও অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বটির প্রভাব ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়। তারপর অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত চুক্তিগত তত্ত্বের প্রাধান্য প্রতীয়মান হয়। আবার ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আদর্শবাদ, উপযোগিতাবাদ ও উদারনীতিক মতবাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আবার কালক্রমে এ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা এবং মার্কসীয় ধ্যান-ধারণার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এবং বিংশ শতাব্দী জুড়ে এই প্রভাব অব্যাহত থাকে। যাইহোক্ রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মতবাদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা দরকার।


(ক) ঐশ্বরিক অধিকার মতবাদ

রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত একটি অতি প্রাচীন মতবাদ হল ঐশ্বরিক অধিকারের মতবাদ। এই মতবাদের মূল কথা হল যে, রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা হল ঐশ্বরিক ইচ্ছা বা আদেশের বাধ্যবাধকতা। এই বাধ্যবাধকতা নাগরিক ও শাসক কর্তৃত্বের ঊর্ধ্বে অবস্থিত এবং তাদের উভয়ের থেকে স্বতন্ত্র। এই মতবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল: ব্যক্তি মানুষ ঈশ্বরের কাছে অনুগত এবং তাই শাসক কর্তৃত্বের কাছেও সে অনুগত থাকতে বাধ্য। কারণ প্রত্যেক শাসক কর্তৃত্বের উৎপত্তি হয়েছে ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব থেকে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকেই শাসক-কর্তৃত্ব যাবতীয় ক্ষমতা পেয়েছে। বার্কার বলেছেন: “I am obliged to obey the governing authority because I am obliged to obey God, and because any governing authority is essentially an emanation and delegation of divine authority.”

ঐশ্বরিক অধিকারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়:

এই মতবাদে রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এই পার্থিব রাজার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় ঈশ্বরের অভিপ্রায় ও আদেশ-নির্দেশ। রাজার আদেশ হল ঈশ্বরের নির্দেশ। রাজা যে আদেশ ঘোষণা করেন তার মাধ্যমেই ব্যক্ত হয় স্বর্গীয় অভিপ্রায়। অর্থাৎ আইন হল ঈশ্বর প্রদত্ত। এই আইনের মধ্যে নিহিত আছে স্বর্গীয় ক্ষমতা। সুতরাং এই আইন মান্য করা দরকার। এবং তা অমান্য করার অর্থ ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করা। রাজার আদেশ অমান্য করার অর্থ ঈশ্বরের আদেশ অস্বীকার করা। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে রাজা প্রজাসাধারণের শর্তহীন আনুগত্যের অধিকারী। প্রাচীনকালে মানুষ ভগবানের কোপানল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাজার প্রতি চরম ও নিঃর্শত আনুগত্য প্রদর্শন করত। রাষ্ট্রের মধ্যে রাজা হলেন সর্বেসর্বা। রাজা ঈশ্বরের মনোনীত প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি। রাজার আদেশই হল ঈশ্বরের নির্দেশ। তাই জনগণের কর্তব্য হল দ্বিধাহীন ও প্রশ্নাতীতভাবে রাজার আজ্ঞা মেনে চলা। রাজার আদেশ অমান্য করার অর্থ ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরোধিতা করা। সুতরাং রাজদ্রোহিতা ধর্মদ্রোহিতার সামিল। তাঁর যাবতীয় দায় দায়িত্ব ভগবানের কাছে। প্রজাসাধারণের কাছে তাঁর কোন দায়দায়িত্ব নেই। তা ছাড়া রাজা কোন অন্যায় করতে পারেন না। কারণ ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারে রাজা শাসনকার্য পরিচালনা করেন। সুতরাং জনসাধারণের উচিত রাজার প্রতি প্রশ্নাতীত চরম আনুগত্য প্রদর্শন করা। প্রকৃত প্রস্তাবে এই মতবাদে ঈশ্বরকে রাজনীতির উৎস হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এবং এইভাবে বাধ্যবাধকতাকে করা হয়েছে নিঃশর্ত। সর্বোপরি এই মতবাদে পার্থিব মানুষের আনুগত্যকে অপার্থিব বিষয় হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

ঐশ্বরিক অধিকার সম্পর্কিত অ্যাকুইনাসের মতবাদ:

রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত ঐশ্বরিক অধিকার মতবাদের প্রচলন পরিলক্ষিত হয় প্রাচীনকালে প্রাচ্য ভূখণ্ডে এবং রাজতন্ত্রগুলিতে। রোমান ধর্মযাজক সেন্ট পল (St. Paul), অ্যাকুইনাস (St. Thomas Acquinas) প্রমুখ চিন্তাবিদের লেখায় এই মতবাদের সমর্থন পাওয়া যায়। বলা হয় সেন্ট পলের বক্তব্যের মাধ্যমে ইউরোপের ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বের সূত্রপাত ঘটে। অ্যাকুইনাস সেন্ট পলকে অনুসরণ করে বলেন যে, সকল কর্তৃত্বের উৎস হলেন ঈশ্বর। কিন্তু অ্যাকুইনাস রোমান আইনবিদদের বক্তব্য এবং অ্যারিস্টটলের অভিমত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তাই তিনি সেন্ট পলের মতামতের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে বলেন যে, নিজে ঈশ্বর কর্তৃত্বের উৎস সরবরাহ করলেও জনগণ ঠিক করে দেয় তার স্থায়ী শাসনতান্ত্রিক রূপ। বাস্তবে যে ব্যক্তি বা কতিপয় ব্যক্তিকে জনগণ ক্ষমতা ভোগ ও প্রয়োগের অধিকার প্রদান করে, তা সাময়িক কালের জন্য করে। অ্যাকুইনাস তাঁর De Regimine Principum শীর্ষক গ্রন্থে আরও বলেছেন যে জনগণ ক্ষমতাধিকারীর সমালোচনা করতে পারে এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ক্ষমতা তুলে নিতে পারে। অ্যাকুইনাসের মতবাদ মধ্যযুগের স্বীকৃত মতবাদ হিসাবে পরিচিত। তাঁর অভিমত অনুসারে রাজা হলেন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রধান। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত সকলের বাধ্যতামূলক আনুগত্য আদায়ের অধিকার তাঁর আছে। কারণ রাজার কর্তৃত্বের উৎস হলেন ঈশ্বর। তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে এই কর্তৃত্ব এসেছে। এবং রাজা হলেন এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রধান। বার্কারের কথায়: “The theory of St. Thomas, which was the generally accepted theory of the Middle Ages, was thus a theory that the King, as the head of a body politic, had a claim to the necessary obedience of each member of that body in virtue of an authority coming from God, but coming, in its course, through the body politic of which he was head.”

ষোড়শ শতাব্দীতে পরিবর্তিত মতবাদ:

মধ্যযুগে স্বীকৃত সেন্ট টমাসের মতবাদ ষোড়শ শতাব্দীতে পরিবর্তিত হয়। বলা হয় যে রাজার কর্তৃত্ব রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে আসেনি। এবং এ কথাও বলা হয় যে রাজার কর্তৃত্ব জনগণের নিয়ন্ত্রণমুক্ত। বার্কারের অভিমত অনুসারে এই পরিবর্তিত মতবাদটি হল একটি দেহহীন মস্তক স্বরূপ। মধ্যযুগের চিন্তাধারা থেকে সরে এসে ষোড়শ শতাব্দীর চিন্তাধারায় যেন দেহটিকে মস্তক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বার্কার বলেছেন: “The thought of the sixteenth century, departing from that of the Middle Ages, amputated as it were the body from the head: it rejected the notion that authority came to the head through the body: it left the head with a solitary authority unqualified by an act of the people.”

ঐশ্বরিক অধিকারের মূল্যায়ন

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বটি সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিশেষভাবে বিচার-বিবেচনা করা দরকার।

(১) এই মতবাদ অনুসারে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে পার্থিব রাজা হলেন সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন। এই রাজা কোন রকম দায়-দায়িত্বের দ্বারা আবদ্ধ নন। এই মতবাদে জনসাধারণকে একটি অধিকার দেওয়া হয়েছে। এবং এই অধিকারটি হল দ্বিধাহীন ও শর্তহীন আনুগত্য প্রদর্শনের অধিকার। রাজনীতিক আনুগত্যের ভিত্তি হিসাবে এই মতবাদের বক্তব্য অগণতান্ত্রিক।

(২) এই মতবাদে রাজনীতির মধ্যে ঈশ্বরকে টেনে আনা হয়েছে এবং রাজনীতিক বাধ্যবাধকতাকে করা হয়েছে নিঃশর্ত। তা ছাড়া এই মতবাদে ব্যক্তি মানুষের আনুগত্যের মত একটি পার্থিব বিষয়কে অপার্থিব বিষয় হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

(৩) ঐশ্বরিক অধিকার মতবাদে যাবতীয় অধিকার ও ক্ষমতাকে ঐশ্বরিক অধিকার ও ক্ষমতা হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এই তত্ত্বে একজন ব্যক্তির কাছে প্রত্যেকের আনুগত্য প্রকাশের কথা বলা হয়েছে। এবং এই ব্যক্তিটি হলেন রাজা। 

(৪) আলোচ্য মতবাদে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনসাধারণের অভিজ্ঞতা ও স্বাধীন উদ্যোগকে অস্বীকার করা হয়েছে। এই মতবাদ অনুসারে রাজনীতিক আনুগত্যের বিষয়টি জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অবস্থিত। জনগণের আনুগত্য ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আলোচ্য মতবাদটি আদিম ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 

(৫) ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বে ধর্মীয় অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক গবেষণায় এই ব্যাখ্যাকে অস্বীকার করা হয়েছে। এই কারণে ল্যাস্কি মতবাদটির উপযোগিতা সম্পর্কে বিরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।

(৬) Introduction to Politics শীর্ষক গ্রন্থে ডরোথি পিক্‌স (Dorothy Pickles) এ প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতানুসারে এই মতবাদে রাজা ও ভগবানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে যোগসূত্র স্থাপনের স্বার্থে রাজার ঐশ্বরিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ অর্থহীন।

(৭) ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণের কোন অধিকারকে স্বীকার করা হয়নি। 

(৮) বার্কারের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বটি গ্রহণ করার বা বর্জন করার দরকার নেই। মানব সভ্যতার আদিম অবস্থায় মতবাদটির প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কিন্তু মানুষের চিন্তা-চেতনার বিকাশ ও গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার প্রসারের ফলে ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বটি এখন একটি অতীতের বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বার্কার বলেছেন: “It is not necessary here to accept or reject the theory of divine right….But the form and vesture of the theory belong to a vanished age, in which king governed as well as reigned….”


(খ) ভোগদখলী-স্বত্ত্বের তত্ত্ব

রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত ভোগদখলী স্বত্বের তত্ত্ব বৈধকরণের তত্ত্ব (theory of legitirism) হিসাবেও পরিচিত। এই মতবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল যে, সুদীর্ঘ কাল যাবৎ রাজা শাসন করে আসছেন। তার ফলে রাজার প্রাধিকারের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রাধিকার বলেই রাজা প্রজাসাধারণের কাছ থেকে বাধ্যবাধকতা দাবি করেন। কোন অবস্থাতেই প্রজাসাধারণ এই বাধ্যবাধকতাকে অস্বীকার করতে পারে না। এই মতবাদ অনুসারে রাজনীতিক কর্তৃত্ব এবং রাজনীতিক কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রথাগত অধিকারের উপর প্রতিষ্ঠিত। কোন বিষয়ে ভোগদখলী স্বত্ব দীর্ঘকালীন হলে শেষ পর্যন্ত তা সম্পত্তিতে পরিণত হয়। তার মধ্যেই নিহিত থাকে কর্তৃত্বের বৈধতা। এটাই হল রাজার দাবি বা অধিকার। এবং এরই বলে তিনি শাসক কর্তৃপক্ষ হিসাবে পরিচিত। রাজা রাজত্ব করেন প্রথাগত অধিকার (customary right) অনুসারে। দীর্ঘকালীন প্রথাগত অধিকারের ভোগের ভিত্তিতে রাজা প্রকৃত শাসকে পরিণত হন। তিনি শাসন-কর্তৃত্বের অধিকারী হন। এই কর্তৃত্বের বিরোধিতা করা যায় না। রাজ্যের সকল সম্পত্তির উপর রাজার কর্তৃত্ব বর্তমান। এবং সম্পত্তির ভোগ-দখলের পরিপ্রেক্ষিতে রাজার কর্তৃত্বের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরিহার্যবশতঃ মানুষ সব রকম সম্পত্তির অধিকারকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য। রাজার সম্পত্তির অধিকারের প্রতি প্রজাসাধারণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এবং এই কারণে সংশ্লিষ্ট অধিকারকে কর্তৃত্বের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়।

রাজনৈতিক আনুগত্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ভোগদখলী-স্বত্বের তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে ফ্রান্সে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা হিসাবে দু’জন ফরাসী দার্শনিকের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন বদ্যা (Bodin) এবং লয়সিয়োঁ (Loyseau)।

ভোগদখলী-স্বত্ত্বের তত্ত্বের সম্পর্কে বদ্যার বক্তব্য:

ভোগদখলী-স্বত্ব সম্পর্কিত বদ্যার বক্তব্য জানা যায় তাঁর De Republica শীর্ষক গ্রন্থটি থেকে। গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে ১৫৭৬ সালে। বদ্যা এই তত্ত্বকে গোষ্ঠীতান্ত্রিক তত্ত্বের (Patriarchy) সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। বদ্যার মতবাদের মধ্যে তিনটি প্রধান বক্তব্য বর্তমান। (১) পরিবার হল নির্দিষ্ট স্বাভাবিক একটি বাস্তব সত্য। একে অস্বীকার করা যায় না। পরিবারের সম্পত্তির উপর এবং পরিবারের সকলের উপর পরিবারের প্রধান অধিকার ও কর্তৃত্ব বর্তমান। পরিবারে প্রধানের এই কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা যায় না। (২) রাষ্ট্রের উৎপত্তির মূলে পরিবার বর্তমান। (৩) পরিবারের প্রধানের অধিকার ও কর্তৃত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধানের অধিকার ও কর্তৃত্বের সাদৃশ্য আছে। তার কারণ পরিবার থেকেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। পরিবারের সম্প্রসারিত রূপই হল রাষ্ট্র। অধ্যাপক বার্কারের অভিমত অনুসারে সমকালীন ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বের থেকে বদ্যার মতবাদ অনেক উন্নত। বদ্যার মতবাদে রাজা দেহহীন মাথা নন; তিনি হলেন পরিবারের প্রধান। পরিবারের ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে বদ্যা শাসন-কর্তৃত্বকে ভোগদখলী-স্বত্বের অধিকার দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট অধিকারকে মানবিক অনুভূতিযুক্ত করেছেন। তার ফলে সংশ্লিষ্ট অধিকার স্বাভাবিকতা লাভ করেছে। বার্কার বলেছেন: “The theory of Bodin is in one way superior to the theory of divine right current in his day. He makes the king not a bodiless head, but the head of a family; and by thus introducing the idea of the family he gives to governing authority not only the title of prescriptive possession, but also a natural title grounded in human feeling.”

ভোগদখলী-স্বত্ত্বের তত্ত্বের সম্পর্কে লয়সিয়োঁর অভিমত:

ফরাসী আইনবিদ লয়সিয়োঁ আরও ব্যাপকভাবে ভোগদখলী-স্বত্বের তত্ত্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। এ সম্পর্কিত তাঁর বইটির নাম হল Traite des Offices। বইটি প্রকাশিত হয় ১৬১৪ সালে। রাজার উত্তরাধিকারমূলক ধারণার মূল সূত্র হিসাবে তিনি ভোগদখলী স্বত্বের তত্ত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে রাজাদের আবির্ভাব ঘটেছে বিভিন্নভাবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের দ্বারা ক্ষমতা অর্পণ, কেবল বলপ্রয়োগ এবং উচ্ছেদ সাধন প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কালক্রমে রাজারা ভোগদখলী-স্বত্বের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বভৌম ক্ষমতা নামক সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। বিষয় সম্পত্তির দীর্ঘকালীন নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহারের ফলে তাদের হাতে কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষমতা এসেছে। এবং এইভাবে রাজারা কর্তৃত্বের অধিকার বা মালিকানা পেয়েছেন। প্রজাসাধারণের পক্ষে অপরিহার্য হল রাজার এই মালিকানা এবং তাঁর সকল অধিকারকে মান্য করা। এইভাবে প্রজাসাধারণ রাজাদের এবং তাঁদের কর্তৃত্বের অধীনস্থ হয়। লয়সিয়োর মতানুসারে নিজের মধ্যেই যদি শাসক-কর্তৃত্বের স্থায়িত্বের উপাদান বর্তমান থাকে, তাহলে শাসক কর্তৃত্বের বাধ্যবাধকতা আরোপের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপাদানই যথেষ্ট বিবেচিত হয়।

ভোগদখলী-স্বত্ত্বের তত্ত্বের মূল্যায়ন

ভোগদখলী-স্বত্বের তত্ত্বের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে বার্কারের মতামত বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। (১) ভোগদখলী স্বত্বের তত্ত্বকে ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। দীর্ঘকালীন নিরবচ্ছিন্ন অধিকারের ভোগ ঐশ্বরিক অধিকারে রূপান্তরিত হয়। (২) শাসক কর্তৃত্বের প্রতি প্রজাসাধারণ কেন আনুগত্য প্রদর্শন করে ভোগদখলী-স্বত্বের তত্ত্বে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। (৩) এই মতবাদে মানুষের উপর রাজার কর্তৃত্বের দাবিকে সম্পত্তির অধিকার হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়েছে। অর্থাৎ রাজনীতিক কর্তৃত্বকে বৈষয়িক সম্পত্তির উপর কর্তৃত্বের পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে। (৪) ভোগদখলী স্বত্বের তত্ত্বে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতাকে নাগরিকের পৌর বাধ্যবাধকতার পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে। (৫) আলোচ্য মতবাদটির উপযোগিতাও সীমাবদ্ধ। কারণ কেবলমাত্র সেই রাজতন্ত্র সম্পর্কে এই মতবাদ প্রয়োগযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, যেখানে রাজা একাধারে শাসন ও রাজত্ব করেন।


(গ) চুক্তির তত্ত্ব

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা ব্যাখ্যার সঙ্গে চুক্তি তত্ত্বের সম্পর্ক প্রসঙ্গে চিন্তাবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। শাসক কর্তৃত্বের প্রতি নাগরিকদের বাধ্যবাধকতার দুটি সরল কারণের কথা এই তত্ত্বে বলা হয়েছে।

(১) অন্যান্য নাগরিকদের সঙ্গে মিলিতভাবে নাগরিক মাত্রেই কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় নিরাপত্তা, শান্তি ও পরিষেবা পাওয়ার জন্য এবং নাগরিকরা এই উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির হাতে কর্তৃত্ব স্থাপনের অধিকার ন্যস্ত করে।

(২) নাগরিকরা স্বাভাবিক আইন (natural law)-এর অধীনে সংশ্লিষ্ট চুক্তি মান্য করে চলতে এবং তদনুসারে আচরণ করতে বাধ্য থাকে। চুক্তি তত্ত্বের প্রবক্তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে চুক্তি হয়েছিল দুটি।

  • প্রথমটি, ‘সমাজের চুক্তি’ (pacted’ association) এবং
  • দ্বিতীয়টি ‘সরকারের চুক্তি’ (Pactede government)।

প্রথম চুক্তি অনুসারে নির্দিষ্ট কোন এলাকার সকল মানুষ এই মর্মে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে যে, তার অংশ দায়িত্বমূলক একটি যৌথ সংস্থায় নিজেদের সংগঠিত করবে। দ্বিতীয় চুক্তি অনুসারে সংশ্লিষ্ট অংশীদারিত্বের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকগণ কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টিকে একটি সরকার গঠন করার অধিকার প্রদান করে। সরকার গঠনকারী এই ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি নাগরিকদের থেকে আলাদা। দুটি চুক্তিই হল সাধারণ সম্মতির ফল। তবে প্রথম চুক্তিটির ফলে সৃষ্টি হয় অংশীদারিত্বের এবং দ্বিতীয় চুক্তিটির ফলে সৃষ্টি হয় সরকারের।

বার্কারের অভিমত অনুসারে শাসনতন্ত্র হল একটি রাজনীতিক চুক্তি। এই রাজনীতিক চুক্তি বা শাসনতন্ত্র হল দেশের সর্বোচ্চ আইন। নাগরিক এর প্রতি রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা প্রদর্শন করে। এই বাধ্যবাধকতা নাগরিকরা প্রত্যাহার করে নিতে পারে না। বার্কারের মতানুসারে এই বাধ্যবাধকতা চুক্তিবদ্ধ। জনগণের জন্য কতকগুলি অধিকার কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি শাসনতন্ত্রে থাকে। শাসনতন্ত্রে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ বাধ্যবাধকতা প্রদর্শন করে।

চুক্তির তত্ত্ব অনুসারে আইনের ভিত্তি হল চুক্তি বা সম্মতি। এর উপরই আইনের বৈধতা নির্ভরশীল। রাষ্ট্র নাগরিকদের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই রাষ্ট্র নাগরিকদের উপর আইন প্রয়োগের অধিকারযুক্ত। মানুষই রাষ্ট্রকে আদেশ-নির্দেশ জারি করার ক্ষমতা দিয়েছে।

চুক্তি তত্ত্বের মূল্যায়ন

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা বা আনুগত্য সম্পর্কে চুক্তি-তত্ত্বের কতকগুলি সীমাবদ্ধতা বর্তমান।

  • চুক্তির শর্তাদি মান্য করতে বাধ্য কেবল তারাই যারা চুক্তিতে আবদ্ধ। উত্তর পুরুষকে এই চুক্তির শর্তের অধীন করা যায় না। অর্থাৎ চুক্তি রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা বা আনুগত্যের স্থায়ী ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে না।
  • রাষ্ট্র বা সরকারের সৃষ্টি হয়েছে চুক্তির মাধ্যমে এমন কোন ঐতিহাসিক নজির নেই। 
  • আইনের ফলাফলের বিচার-বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি তার সম্মতি প্রত্যাহার করে নিতে পারে। 
  • রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে চুক্তি-তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা অস্বীকার করা যায় না। সব সময় জনগণের সকল অংশের মতামতের অনুকূলে শাসনকার্য পরিচালনা করা যায় না। অনেক সময় সংখ্যালঘু অংশের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়া যায় না। 
  • বার্কারের অভিমত অনুসারে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার ব্যাখ্যা হিসাবে এই মতবাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ ও পর্যাপ্ত নয়।

তবে এই মতবাদে শাসিতের মর্যাদাকে স্বীকার করা হয়েছে। এই মতবাদের মাধ্যমে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার গণতান্ত্রিক ভাষ্য পাওয়া যায়। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টিকে চুক্তির শর্ত পালনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

Rate this post