ঐশ্বরিক অধিকার তত্ত্ব, ভোগদখলী-স্বত্বের তত্ত্ব ও চুক্তির তত্ত্বের পর্যালোচনা:

রাজনীতিক আনুগত্য সম্পর্কে আলোচিত মতবাদগুলিতে রাজনীতিক আনুগত্যের উৎস, কারণ এবং রাষ্ট্রের বিরোধিতার অধিকার সম্পর্কে আলোচনা আছে। ঐশ্বরিক অধিকারের তত্ত্ব এবং ভোগদখলী-স্বত্বের তত্ত্বে রাষ্ট্রের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। এবং এই দুটি মতবাদে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণের কোন অধিকারই স্বীকার করা হয়নি। চুক্তির তত্ত্বেও রাজনীতিক আনুগত্য সম্পর্কে আলোচনা আছে। চুক্তিবাদী ইংরেজ দার্শনিক হস নিঃশর্ত আনুগত্যের কথা বলেছেন। কিন্তু চুক্তিবাদী লকের মতবাদে সরকারের বিরোধিতার অধিকারকে স্বীকার করা হয়েছে। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করা হলে লক্ সরকারের বিরোধিতার কথা বলেছেন। ফরাসী চুক্তিবাদী রাষ্ট্র-দার্শনিক প্রশ্নাতীত আনুগত্যের কথা বলেছেন। তবে রুশোর মতবাদ অনুসারে এই আনুগত্য সমষ্টিগত ইচ্ছা (General will)-র প্রতি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির প্রতি নয়।

ভাববাদী তত্ত্বের পর্যালোচনা:

আদর্শবাদী জার্মান দার্শনিকরাও রাষ্ট্রের প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্যের কথা বলেছেন। এবং জার্মান আদর্শবাদীরা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করার অধিকারকে স্বীকার করেননি। ইংরেজ আদর্শবাদীরা জার্মান আদর্শবাদকে সম্পূর্ণ স্বীকার করেননি। তাঁরা রাষ্ট্রকে সর্বশক্তিমান ও শ্রেষ্ঠতম গুণসম্পন্ন সংগঠন হিসাবে স্বীকার করলেও রাষ্ট্রীয় যুপকাষ্ঠে ব্যক্তিসত্তাকে বলি দেওয়ার বিরোধী। গ্রীণের মতানুসারে রাষ্ট্র ভুল বা অন্যায় করলে রাষ্ট্রীয় মঙ্গলের স্বার্থেই ব্যক্তির কর্তব্য হল রাষ্ট্রকে বাধা দেওয়া। বোসাংকেত রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা স্বীকার করেও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের উপর নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনেছেন। সামাজিক স্বার্থ বা সার্বজনীন কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রের বিরোধিতা করার কর্তব্যকে স্বীকার করা হয়েছে। তবে বাস্তবে সার্বজনীন কল্যাণ ও সামাজিক স্বার্থের ধারণা অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির। এই ধারণার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণের অধিকারকে কার্যকর করা কঠিন ব্যাপার।

উদারনীতিক মতবাদের পর্যালোচনা:

উদারনীতিক মতবাদে গণতন্ত্র এবং আনুষঙ্গিক বিধিব্যবস্থার কথা বলা হয় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি হিসাবে সর্বজনীন ও ব্যাপক সম্মতির উপর জোর দেওয়া হয়। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবক্তাদের অভিমত অনুসারে এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রদর্শন করা যায়। জনসাধারণের এই অধিকার স্বীকৃত। তবে এ ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থায় একটা সাধারণ মূল্যবোধ থাকে। এবং এই মূল্যবোধ জনসাধারণের ব্যাপক মতৈক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনও জনগণের ব্যাপক মতৈক্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এই ব্যাপক ও সর্বজনীন চক্যের মতবাদের ভিত্তিতে উদারনীতিক গণতন্ত্রের প্রবক্তারা রাজনীতিক বাধ্যবাধকতায় সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তাঁরা এইভাবে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের প্রতি নির্বিরোধ আনুগত্য প্রদর্শনের ব্যাপারে নিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এই শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা জনগণের রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার স্বরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা রাজনীতিক আনুগত্যের উৎস, রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার সীমাবদ্ধতা বা বিরুদ্ধাচরণের অধিকার সম্পর্কে কোন সুষ্ঠু সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নি।

রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার সীমাবদ্ধতা ও বিরুদ্ধাচরণের অধিকার- বার্কারের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার দ্বৈত সমস্যা:

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার সীমাবদ্ধতা এবং বিরুদ্ধাচরণ সম্পর্কিত সমস্যাটির দুটি দিক বর্তমান। আলোচ্য সমস্যাটির দুটি দিক হল: (১) রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সম্পর্ক রহিত জীবনের এমন কোন দিক বা আচরণের অস্তিত্ব অনস্তিত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন। এবং (২) যে কোন ব্যবস্থায় রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা শর্তহীন কিনা এ সম্পর্কিত প্রশ্ন। মিল তাঁর Essay on Liberty শীর্ষক গ্রন্থে ব্যক্তি-মানুষের আচরণকে দুভাগে বিভক্ত করেছেন। আচরণের এই দুটি ভাগের একটি হল অপর সম্পর্কিত (which concerns others)। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি সমাজের বাধ্য (amenable to society)। আচরণের আর একটি ভাগ হল আত্ম সম্পর্কিত (which merely concerns himself)। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীন ও সার্বভৌম।

ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে মিলের মতবাদ এবং বার্কারের সমালোচনা:

মিলের উপরিউক্ত বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বার্কার। তিনি দু’দিক থেকে মিলের এই তত্ত্বের সমালোচনা করেছেন। (১) যা অবিভাজ্য মিল তাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছেন। মানুষের আচরণ হল একটি সমগ্র বিষয়। এই আচরণের মধ্যে শুধুমাত্র আত্ম সম্পর্কিত কিছু থাকতে পারে না। ব্যক্তির যে-কোন ভূমিকা ও কাজ অন্যকে স্পর্শ করে, এবং এই কারণে তা অন্যেরও বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বার্কার বলেছেন: “The conduct of any man is a single whole there can be nothing in it that concerns himself only, and does not concern other men….” (২) মিল যা বিভাজ্য তাকে বিভক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর সম্পর্কিত কাজের জন্য ব্যক্তি সমাজের বাধ্য’ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। এই উক্তির দ্বারা মিল সামাজিক ও রাজনীতিক উভয়কে মিলিয়ে গুলিয়ে বিভ্রান্তিকর এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। বার্কারের অভিমত অনুসারে, মিল ব্যক্তির আচরণের যে দুটি দিকের কথা বলেছেন তা অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু রাষ্ট্রীয় এলাকা থেকে সামাজিক এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। বার্কার বলেছেন: “We cannot separate two different compartments of individual conduct; but we can separate the sphere of Society from that of the State.” আমরা স্বীকার করতে বাধ্য যে আমাদের সমগ্র আচরণ আমাদের মত অন্যদেরও জড়িয়ে ফেলে। এবং এই কারণে আমাদের সমগ্র আচরণটি হল নিয়ন্ত্রণযোগ্য। রাষ্ট্রের কাজকর্মের পদ্ধতি হল বাধ্যতামূলক বা পীড়নমূলক। তাই যে সমস্ত বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করা দরকার সেগুলি রাষ্ট্রের এক্তিয়ারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অপরদিকে সমাজের কাজকর্মের পদ্ধতি হল স্বেচ্ছামূলক বা সহযোগিতামূলক। তাই সমাজের এক্তিয়ারে সেই সমস্ত বিষয় থাকা বাঞ্ছনীয় যেগুলি স্বাধীনভাবে সম্পাদিত হওয়া উচিত। তাহলে সেগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং তার গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হয় না।

স্বাভাবিক আইনের যুক্তি:

এর পর বার্কার রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কিত দ্বিতীয় সমস্যাটি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় সমস্যাটি হল রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা চরম কিনা। অর্থাৎ তার এক্তিয়ারের মধ্যে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা কি চূড়ান্তভাবে বাধ্যতামূলক? সর্বাবস্থাতেই কি এই বাধ্যবাধকতার অনুগামী হতে হবে? বিভিন্নভাবে এই প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বার্কার প্রথমে স্বাভাবিক আইনের যুক্তির (ground of natural law) অবতারণা করেছেন। এ ক্ষেত্রে এই যুক্তিটিই হল সর্বাধিক প্রাচীন। স্বাভাবিক আইনের যুক্তি অনুসারে রাষ্ট্রীয় আইন এবং প্রশাসনিক নিয়মকানুন যদি স্বাভাবিক আইনের বিরোধী হয় তা হলে সেগুলি অবৈধ। এবং এই অবৈধ আইন বা নিয়মকানুনগুলিকে অমান্য করা যায়। আবার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এগুলিকে বলবৎ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে, তা প্রতিরোধ করাই হবে ন্যায়সঙ্গত কাজ। অর্থাৎ ন্যায়সঙ্গত কারণেই অন্যায় আইনকে অমান্য করা যায়। সব সময়েই আইন হবে ন্যায়ের ধারণার অভিব্যক্তি। এর অন্যথা ঘটলে অন্যায় আইনকে ন্যায়ের স্বার্থেই অমান্য করা দরকার। বার্কার বলেছেন: “It is that law may be disobeyed justly, and that it is possible, in the name of justice, to disobey a law which does not express, as all law should, the idea of justice.”

উপযোগিতাবাদের যুক্তি:

এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় যুক্তিটি হল উপযোগিতাবাদের। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এই যুক্তিটির প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এই যুক্তির অনুগামীরা বস্তুগত উপযোগিতার গাণিতিক হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক বাধকতাকে স্বীকার বা অস্বীকার করার বিষয়টিকে বিবেচনা করার পক্ষপাতী। বার্কার বলেছেন: “On this ground the issue between the acceptance and the rejection of political obligaiton was reduce to a calculus of material utility.” ocaga (Bentham) -এর অভিমত অনুসারে আনুগত্যজনিত সম্ভাব্য ক্ষতির থেকে প্রতিরোধজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি যদি কম হয় তা হলে প্রত্যেকে কর্তব্য হিসাবে না হলেও, অধিকার হিসাবে প্রতিরোধ করবে। কিন্তু এইভাবে নিছক হিসাব গণনা ও পরিণতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টির বিচার সন্তোষজনক বিবেচিত হয় না। ফরাসী আইনবিদ দ্যুগুই (Duguit) রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার সীমাবদ্ধ ও শর্তাধীন প্রকৃতির কথা বলেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে আর্থনীতিক সংহতির (economic solidarity) মৌলিক বিষয়সম্ভূত ন্যায়সঙ্গত অনুশাসনের বিরোধী হলে যে-কোন আইনের বিরুদ্ধে বা শাসকদের দ্বারা প্রণীত বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পরোক্ষ, আত্মরক্ষামূলক এবং এমনকি আক্রমণাত্মক প্রতিরোধ সম্ভব। এই যুক্তিতে ন্যায় সঙ্গতাকে আইনের ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়েছে। বার্কার বলেছেন: “The ground thus taken enthroned Right above law, and makes the obligation of obedience to law conditional on the conformity of law to Right; but the Right thus enthroned by Duguit is only a derivative or expression of economic fact and process, or rather of a part of such fact and process.”

বার্কার উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে একটি ব্যাপক ও গ্রহণ যোগ্য ধারণা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। (১) রাষ্ট্রের এক্তিয়ারের মধ্যে সংবিধান অনুসারে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন বা সরকার কর্তৃক অনুরূপভাবে প্রণীত আইনানুসারে সম্পাদিত কাজকে মান্য করার ব্যাপারে চরম ও নিঃশর্ত বাধ্যবাধকতা সংশ্লিষ্ট সকলের উপর বর্তমান। বার্কার বলেছেন: “Within the State…there is an absolute and unconditional obligation, incumbent upon its members as such, to obey a law duly passed by the legislature in conformity with the constitution, or an act of government duly done under a law so passed.” অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের এলাকার মধ্যে আইনের প্রতি আনুগত্য শর্তাধীন হয়ে পড়েছে। শর্তটি হল আইনকে হতে হবে সংবিধানের অনুবর্তী। সুতরাং প্রকৃত প্রস্তাবে নিঃশর্ত বাধ্যবাধকতা বলতে সংবিধানের প্রতি বাধ্যবাধকতাকে বোঝায়। বার্কার বলেছেন: “…the only conditional obligation is the obligation due to the constitution.” (২) বার্কারের অভিমত অনুসারে সমাজ ও সামাজিক কার্যধারার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক বাধ্য বাধকতার স্বরূপকে সম্প্রসারিত করা দরকার। সামাজিকভাবে সৃষ্ট এবং সামাজিকভাবে বিকশিত ন্যায়ের ধারণাই হল চূড়ান্তভাবে সার্বভৌম। বার্কার বলেছেন: “…the socially created and socially developed idea of justice is the supreme sovereign.” সুতরাং সংবিধান অনুসারে প্রণীত আইনের প্রতি আনুগত্য ও নিঃশর্ত নয়। কারণ সংবিধানের অনুবর্তী আইনকেও ন্যায় ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সুতরাং সাধারণভাবে প্রতিপন্ন হচ্ছে যে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা একধারে শর্তহীন ও শর্তাধীন। প্রকৃত প্রস্তাবে রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা অবশ্যই বাধ্যবাধকতা হিসাবে থাকে। রাষ্ট্রের এক্তিয়ারের অভ্যন্তরে এই বাধ্যবাধকতা শর্তহীনভাবেই থাকে। তবে নতুন ও উচ্চতর একটি রাজনীতিক ধারণার বাধ্যবাধকতার প্রশ্নও দেখা দেয়। সামাজিকভাবে সৃষ্ট ও সামাজিকভাবে বিকশিত ন্যায়ের ধারণাকে আমরা যখন বিচার-বিবেচনা করি, তখন উচ্চতর নতুন এক রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন দেখা দেয়। এ হল উচ্চতর রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা বা সামাজিক বাধ্যবাধকতা। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের এক্তিয়ারের অন্তর্ভুক্ত রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার বিরোধ বাধতে পারে। এইভাবে এক উভয় সংকটের সৃষ্টি হয়।

রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা হল চরম ও নিঃশর্ত। তবে সামাজিক বাধ্যবাধকতার পরিপ্রেক্ষিতে কোন আইন অমান্য বা প্রতিরোধের ঘটনা ঘটলে প্রচলিত আইনকে কার্যকর করতে হয়। আবার অমান্যকারী বা প্রতিরোধকারী নাগরিকের কর্তব্য হল তার সংশ্লিষ্ট কাজের আইনগত পরিণতিকে নির্বিরোধে মেনে নেওয়া। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত আইনকে মেনে নেওয়া। তবে সামাজিক বাধ্যবাধকতাও হল একটি বাস্তব বিষয়। এর সার্বভৌম প্রকৃতি সম্পর্কে প্রতিবাদকারীর দৃঢ় বিশ্বাস বর্তমান এবং উচ্চতম বাস্তব বিষয় হিসাবে একে স্বীকার করে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট উচ্চতম বাস্তবতার দাবিগুলিকে স্বীকার করবে এবং তার সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের সমর্থনসূচক সাক্ষ্যপত্র (testimony) পেশ করবে। এ ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা থাকবে না যদি সামাজিক চিন্তার প্রকৃতি এবং সেই চিন্তা যেভাবে গড়ে উঠেছে আমরা তা মনে রাখি। বার্কার বলেছেন: “…difficulty‌ disappears if we reflect on the nature of social thought and the process of its formation.”

বার্কারের অভিমত অনুসারে আনুগত্যজনিত ক্ষতির মূল্য এবং প্রতিরোধের জন্য ক্ষতির মূল্য এই দু’য়ের মধ্যে তুলনামূলক হিসাব-নিকাশের কোন সহজ ব্যবস্থা নেই। যাইহোক রাজনীতিক বাধ্যবাধকতা এবং উচ্চতর রাজনীতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে বিরোধ বাধলে, একান্তভাবে অপরিহার্য হল সুস্থ বিচার-বিবেচনা। স্থান-কাল ভেদে এই বিচার-বিবেচনার মধ্যে পার্থক্য থাকবে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি দেশে নির্দিষ্ট কোন সময়ে আইন-শৃঙ্খলার স্থায়িত্ব পরিমাণের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। বার্কার বলেছেন: “There is no simple rule for weighing of the mischiefs of obedience against the mischiefs. There is only the general rule that weighing is needed in every case in which a conflict arises between political obligation and the obligation which is super-political. The weighing itself will differ according to time and place, and the decision will depend on the degree of stability of law and order existing in a given country at a given period.”

Rate this post